রংপুরে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় (বেরোবি) ২০০৮ সালের ১২ অক্টোবর প্রতিষ্ঠিত হয়।প্রথমে এটি রংপুর বিশ্ববিদ্যালয় নামে যাত্রা শুরু করলেও পরবর্তীতে ২০০৯ সালে বাঙালি নারী জাগরণের অগ্রদূত বেগম রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেনের নামানুসারে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে নামকরণ করা হয়। বর্তমানে এই বিশ্ববিদ্যালয়ে উত্তরবঙ্গের শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি সারা বাংলাদেশের ছাত্র-ছাত্রীরা উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত হওয়ার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হচ্ছে । বর্তমানে ২২ টি বিভাগে প্রায় ১০,০০০ শিক্ষার্থী এখানে অধ্যয়ন করছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের পনেরো বছর পেরিয়ে গেলেও বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে শিক্ষার্থীদের নানান আক্ষেপ রয়েছে । প্রতিষ্ঠার ১৫ বছর পেরিয়ে গেলেও এখনো পূর্ণাঙ্গ আবাসিক সুবিধা পাননি শিক্ষার্থীরা সেই সাথে রয়েছে শিক্ষক ও শ্রেনিকক্ষ সংকট আরও আছে নানান আক্ষেপ। পনেরো বছর উদযাপন উপলক্ষে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে শিক্ষার্থীদের প্রত্যাশা-প্রাপ্তি, আক্ষেপ ও ভাবনা তুলে ধরেছেন বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক মোঃ সাজেদুল ইসলাম।
গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী মোজাম্মেল হক হৃদয় বলেন, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থা নিয়ে আমরা আফসোস করি। যেখানে অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয় দুনিয়ায় আধুনিকতার সঙ্গে বর্তমানের যোগসূত্র তৈরি করে আরও সমৃদ্ধ হতে যাচ্ছে ।সেখানে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় সামনে এগিয়ে যাওয়ার জন্য যেই গুণগত পরিবর্তন দরকার, সময়ের সাথে এগিয়ে চলার যে গতি তা যেন অনেকটাই শ্লথ হয়ে আছে। পনেরো বছরের আলোয় আলোকিত বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় আলোকিত করুক সমাজ, দেশ ও দেশের মানুষকে এই প্রত্যাশা করি।
জেন্ডার এন্ড ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের ২০১৯-২০ বর্ষের শিক্ষার্থী নাসির হোসাইন বলেন, উত্তরের বাতিঘর হিসাবে পরিচিত বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় । এই বিশ্ববিদ্যালয়কে ঘিরে আমাদের প্রত্যাশা অনেক। আবাসিক সমস্যার সমাধান, শিক্ষার্থীদের মাঝে নৈতিকতাবোধ তৈরি, হলের খাবারের মানোন্নয়ন, ক্যাম্পাসের প্রশাসনিক কাজে জটিলতার সমাধান, লাইব্রেরিতে পর্যাপ্ত সুবিধাসহ ক্যাম্পাস হোক জ্ঞান অর্জন, সংস্কৃতি ও মুক্তবুদ্ধি চর্চার উদ্যান। আমাদের প্রত্যাশা বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় এসব সমস্যার সমাধানের মধ্য দিয়ে দারুণভাবে এগিয়ে যাবে এবং নতুন ইতিহাস রচনা করবে।
শিক্ষার্থীবান্ধব বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রত্যাশা জানিয়ে বাংলা বিভাগের মাস্টার্সের শিক্ষার্থী প্রত্যয় কুমার সরকার সাহা বলেন, উত্তরের সকল মানুষের প্রত্যাশা,উত্তরের মানুষকে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় আলোয় আলোকিত করবে সকল সংকটময় মুহূর্তে মুক্তির পথ দেখাবে বিশ্ববিদ্যালয়টি। পরেনো তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে এসেও পুরোপুরি শিক্ষার্থীবান্ধব বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে আত্মপ্রকাশ করতে পারেনি। পনেরো বর্ষ পূর্তিতে প্রত্যাশা থাকবে সকল বাঁধা-বিপত্তি ও প্রতিবন্ধকতা কাটিয়ে শিক্ষা ও গবেষণার গুণগত মানোন্নয়ন ঘটিয়ে এবং পরিপূর্ণভাবে আবাসন সংকট দূর করার মাধ্যমে একটি শিক্ষার্থীবান্ধব হিসেবে গড়ে উঠবে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়।
আক্ষেপ প্রকাশ করে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী মাসুদ রানা বলেন। একজন পরিপূর্ণ মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রতিনিয়তই অনেক কিছু শিখছি। কিন্তু দুঃখের বিষয় হচ্ছে, পনেরো বছরে এসেও আমরা আমাদের গবেষণাখাতে মনোযোগ বাড়ানো কিংবা আবাসিক সংকটের মতো বিষয়গুলোর সমাধান করতে পারছি না। পারছি না সকল শ্রেণিকক্ষে প্রযুক্তির মান নিশ্চিত করতে।পনেরো বছরে এসেও বিশ্ববিদ্যালয়ে শ্রেনি কক্ষ সংকট নিরসন হচ্ছে না।
মার্কেটিং বিভাগের শিক্ষার্থী মো. শাখাওয়াত হোসেন বলেন, যেখানে আলো ছড়ানোর কথায় বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্ম উত্তরবঙ্গের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় এমন একটি প্রতিষ্ঠান। কিন্তু আবাসন সংকট, ত্রুটিপূর্ণ শিক্ষা পদ্ধতি ও পর্যাপ্ত গবেষণার অভাবের বিষয়গুলো আমাকে ভীষণ পীড়া দেয়। তাই অন্তত পনেরো বছরে এসে এগুলোতে কর্তৃপক্ষ নজর দেবে, সেই প্রত্যাশাই করছি।
প্রত্যাশা ব্যক্ত করে ফাইন্যান্স এন্ড ব্যাংকিং বিভাগের শিক্ষার্থী শয়ন সাহা বলেন,বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের পনেরো বছর যতটা উজ্জ্বল হওয়া দরকার ছিল, এই অগণিত আলোর ঝলকানি তার কিছুই দিতে পারেনি। নিরাপদ, বহিরাগতমুক্ত ক্যাম্পাস, অবকাঠামোগত উন্নয়ন আর গবেষণা নির্ভর শিক্ষাব্যবস্থায় অগ্রবর্তী ও অনস্বীকার্য এবং অপরিহার্য হয়ে উঠুক এটাই প্রত্যাশা।
সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত © ওয়েবসাইট এর কোনো লেখা, ছবি অনুমতি ছাড়া কপি করা নিষেধ