মধ্য আফ্রিকান প্রজাতন্ত্রে বোমা বিস্ফোরণে নিহত শান্তিরক্ষা মিশনের সেনাসদস্য জাহাঙ্গীর আলমের দাফন সম্পন্ন করা হয়েছে।
শনিবার (১৫ অক্টোবর) দুপুরে নীলফামারীর ডিমলা উপজেলার সদর ইউনিয়নের দক্ষিণ তিতপাড়া গ্রামের পারিবারিক কবরস্থানে সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধায়নে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় তার মরদেহ দাফন করা হয়।
এর আগে বেলা ১১ টায় সেনাবাহিনীর হেলিকপ্টারে ডিমলার রানী বৃন্দারানী হাইস্কুল মাঠে জাহাঙ্গীর আলমের মরদেহ আনা হয়। এরপর সেনাবাহিনীর গাড়িবহরে মরদেহ নিজ বাড়িতে নেওয়া হয়।
পরিবার সূত্রে জানা যায়, উপজেলার দক্ষিণ তিতপাড়া গ্রামের লতিফর রহমানের ছেলে জাহাঙ্গীর আলম। পাঁচ ভাইবোনের মধ্যে তিনি ছিলেন চতুর্থ। ২০১৫ সালে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে যোগ দেন তিনি। ১০ মাস আগে মধ্য আফ্রিকান প্রজাতন্ত্রের ব্যানব্যাট-৮ এলাকার উইক্যাম্পে শান্তিরক্ষা মিশনে যান তিনি।
বাংলাদেশ সেনাবাহিনী সূত্রে জানা যায়, নিহত সৈনিক জাহাঙ্গীর আলম পার্ক ইস্টবেঙ্গলে থাকাকালে ডেল্টা কোম্পানিতে কর্মরত ছিলেন। চাকরি জীবনে তার ওপরে অর্পিত যে কোনো দায়িত্ব তিনি সফলতার সঙ্গে পালন করেছেন। তিনি স্বাভাবিক কোর্স বিএমআর ও আইটি ট্রেনিংয়ে অংশ নেন। এছাড়া ২০১৯ সালে সদর দপ্তরে থাকাকালে ১৯ পদাতিক ডিভিশনের তত্বাবধানে পরিচালিত আঞ্চলিক অ্যাসল্ট কোর্স প্রতিযোগিতায় তৃতীয় স্থান লাভ করেন জাহাঙ্গীর আলম। সেই কোর্সে বিশেষ পারদর্শিতা প্রদর্শন করায় বিশেষ কোটায় নির্বাচিত হয়ে বৈদেশিক মিশনে গমন করেন তিনি। মিশনে থাকাকালে গত ৪ অক্টোবর মধ্য আফ্রিকায় তার মৃত্যু হয়।
সেনা কর্মকর্তা ক্যাপ্টেন তানজিদুল ইসলাম বলেন, নিহত সৈনিক জাহাঙ্গীর আলম কর্মজীবনে সব দায়িত্ব সফলতার সঙ্গে পালন করেছেন। পারিবারিক কবরস্থানে সামরিক মর্যাদায় তার মরদেহ দাফন করা হয়েছে।
এদিকে, জাহাঙ্গীর আলমের মৃত্যুর খবর পাওয়ার পর থেকেই পরিবারে বইছে শোকের মাতম। বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েছেন বাবা লতিফর রহমান। বারবার মূর্ছা যাচ্ছেন মা। বিয়ের মেহেদির রঙ মুছতে না মুছতেই স্বামীকে হারিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন জাহাঙ্গীরের স্ত্রী।
জাহাঙ্গীরের বড় ভাই কর্পোরাল আবুজার রহমান বলেন, আমার ভাই সৈনিক জাহাঙ্গীর আলম যেমন একজন দায়িত্ববান সৈনিক ছিলেন, তেমনি খেলাধুলা ও অন্যান্য বিষয়ে পারদর্শী ছিলেন। আল্লাহ তাকে জান্নাত দান করুক এবং আমার বাবা-মা ও তার স্ত্রীকে ধৈর্য ধরার তওফিক দান করুক।
গত ৪ অক্টোবর মধ্য আফ্রিকান প্রজাতন্ত্রে শান্তিরক্ষা কার্যক্রম পরিচালনার সময় পুঁতে রাখা দূর নিয়ন্ত্রিত বোমা বিস্ফোরণে জাহাঙ্গীর আলমসহ বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর আরও দুই সদস্য সৈনিক জসিম উদ্দিন (৩১) ও শরিফ হোসেন (২৬) নিহত হন।