মঙ্গলার বাড়িটাও আর সেই জায়গায় নেই।তবুও ২ দুই যুগ ধরে আমি এখানেই বসে আছি।কোথাও যাওয়া হয় না।এখন এটা পরিত্যক্ত উঠানে পরিনত হয়েছে,উঠান থেকে একটু দূরে গাছটাই স্মৃতি হিসেবে আছে, যত্ন নেওয়ার অভাবে ছিটেফোঁটা আগাছা গুলো শুধু গ্রাস করিতেছে জঙ্গলে। মঙ্গলা প্রতিদিন ঐ জায়গায় আমার জন্য অপেক্ষায় থাকতো তারপর একসাথে দিতাম দৌড় গাছটার নিচে!পাশে আবার কাটা যুক্ত এক জঙ্গলী গাছ ছিল, ঐ গাছে গোল-গোল(ছোট্ট বগুড়ার আলুর মতো)কিছু ফল ধরে। আর মঙ্গলা অতি যত্নে তা ছিড়ে ঝাড়ুর খাটি দিয়ে আমায় খেলনার ঘুরানি বানিয়ে দিতো!
আমি খেলতাম আর মাঝে মধ্যে ইচ্ছে করে ধুলো মাখিয়ে নিতাম পুরো শরীরে তারপর দুপুর গড়িয়ে সন্ধ্যা নামলে বাড়িতে ফিরতাম।কখনো কখনো বাড়ি ফিরার পথে হাজার বার জিকির করছি,, আল্লা বাঁচাও মায়ের হাত থেকে আজকের মাইর আল্লা বাঁচাও, অত্যান্ত আজকের দিন যেন আর মা না থাপ্পড় দেয়। কালকে থেকে আর এতো দেরিতে বাড়ি ফিরবো না ও ধুলোও মাখবো না একেবারে সাহেব বুবু হয়ে যাবো।অবশ্য থাপ্পড় দেওয়ারও একটা বিশেষ কারণ ছিল, শনিবার গনিত পরিক্ষা আর আমি অংক না করে সারাদিন নাকি বান্দরামি করছি…..!
আহ আরও কত স্মৃতি জড়িয়ে আছে মঙ্গলার সাথে, এইতো সেদিন বয়সের চোটে কিংবা সময়ের আনুকুল্যে মঙ্গলা বলেছিল আমার আরও একজন ব্যাক্তিগত মানুষ আছে, হয়তো বা আর এমন আড্ডা হবে না, ভালো থাকিস আমি চলে গেলাম তাঁর সাথে।একটু পর আবার ফিরে এসে মঙ্গলা আমার দুচোখের জল মুছতে মুছতে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বলছিল এমনভাবে ভেঙে পড়িস না।আমি আবার আসবো, শুধু মাত্র তোর জন্য শিশির ভেঁজা ঘাসে এক সাথে হাঁটার জন্য।পুকুর পাড়ে একসাথে বসে চাঁদের আলো দেখার জন্য। আর আমাদের ছোট্ট নৌকায় আমি বয়ে তোরে মাঝ নদীতে নিয়ে যাবো।তারপর তোরে অনেক গান শুনাবো আর তুই সবকিছু ভুলে আমার চোখের মায়ায় ডুবে যাবি।তাই আমি এখনো তার চোখের মায়ায় আঁটকে আছি,রাস্তা দিয়ে কত সহস্র মানুষ আসে-যায়, কিন্তু মঙ্গলা আর আসে নাই।তবুও আমি এখান থেকে বিন্দুমাত্র সরে যাই নাই,, মন বারবার বলছে মঙ্গলা আসবে, সবকিছু ভুলে আমার সাথে ঐ দূরের ছোট্ট মাটির টিলাটির উপর দাঁড়িয়ে সূর্যাস্ত দেখিবার জন্য…..!