বরিশাল জিলা স্কুল, দেশের অন্যতম ও দক্ষিণ বঙ্গের শ্রেষ্ঠ বিদ্যাপীঠ। এমাসেই এ বিদ্যালয়ে আমার দু’বছর পূর্ণ হচ্ছে। আমি যোগদান করেই চিন্তা করলাম ঐতিহ্যবাহী এ বিদ্যালয়ে আমি বয়সের মধ্যে নয়, কর্মের মধ্যে বেঁচে থাকতে চাই। কতদিন এ বিদ্যালয়ে থাকব তা নয়, বরং দুদিন থাকলেও কতটুকু দৃশ্যমান অবদান রাখতে পারলাম তা-ই বিবেচ্য।
সব উন্নয়ন ও সংস্কার আমার হাতে না থাকায় সবক্ষেত্রে সংস্কার করা সম্ভব হয়নি। তবে, আন্তরিকতার সামান্যতম ঘাটতি নেই।
শিক্ষার্থীদের হতে প্রাপ্ত অর্থের সর্বোচ্চ স্বচ্ছ ব্যবহার ও অর্থ খরচে সর্বোচ্চ নজরদারির কারণে বিদ্যালয়ের নিজস্ব অর্থে আমার ব্যক্তিগত উদ্যোগে কতগুলো দৃশ্যমান সংস্কার ও উন্নয়ন করা সম্ভব হয়েছে। বিদ্যালয়ের এমন জায়গা নেই যেখানে আমার ইতিবাচক ছোঁয়া নেই। আমার প্রতিটা পদক্ষেপ সুস্পষ্ট দৃশ্যমান।
সকলের সহজ বোধগম্যতার জন্য কিছুটা তুলে ধরলাম:
১) শ্রেণিতে শিক্ষক উপস্থিতি নিশ্চিত ও জবাবদিহিতার জন্য শ্রেণি প্রতিবেদন প্রবর্তন,
২) শিক্ষক হাজিরায় ডিজিটাল হাজিরা মেশিন স্থাপন,
৩) শিক্ষার্থীদের অবস্থা ও মানসিক সাপোর্ট দেয়ার জন্য শিক্ষকদের সঙ্গে সাপ্তাহিক বৈঠক,
৪) শিক্ষার্থীদের মানসিক ও নৈতিক শক্তি বৃদ্ধির জন্য আমি নিজেই ক্লাশ রুমে নৈতিক ও আচরণিক আলোচনা করি,
৫) শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের বিষয় ও সমস্যা জানার জন্য অভিভাবকের সাক্ষাৎকার বাঁধাহীন করেছি,
৬) বিদ্যালয়ে কোন সমস্যা আছে কি না তা জানতে অভিভাবক অপেক্ষাগারে গিয়ে সরাসরি খবর রাখছি।
৭) শ্রেণি কক্ষ ও টয়লেটসমুহ পরিস্কার পরিচ্ছন্নতা তুলনামূলক উন্নত করেছি এবং অধিকতর উন্নত করার চেষ্টা করছি,
৮) শিক্ষার্থীদের মধ্যে আচরণের ক্রমাগত ইতিবাচক পরিবর্তন হচ্ছে। কেননা, আমার যোগদানকালীন জেলাপ্রশাসক জিলা স্কুল নিয়ে যে বিরূপ মন্তব্য করেছিলেন তা এখন নেই। তাছাড়া, তৎকালীন ওসি সাব শিক্ষকগণের মধ্যেই আলোচনাকালে স্কুলের ছাত্র মারামারি নিয়ে ভীষণ বিরূপ মন্তব্য করেছিলেন। বর্তমান সে অবস্থার অনেকটাই উন্নতি হয়েছে,
৯) বিদ্যালয়ের শিক্ষার মান উন্নত করা, বিদ্যালয়ের সমস্যা চিহ্নিত করে সমাধানের চেষ্টা করা, শিক্ষার্থীদের মানসিক ও নৈতিক উন্নত করা, অভিভাবক -শিক্ষক সুসম্পর্ক বজায় রাখাসহ সার্বিক উন্নয়নের জন্য শিক্ষক-সমিতি গঠন করেছি।
১০) বিদ্যালয়ের অডিটোরিয়ামের টাইলসকরন, ২২০ খানা চেয়ার ক্রয়সহ সৌন্দর্য বৃদ্ধি করা হয়েছে,
১১) হলরুমে স্থায়ী মঞ্চ তৈরি করা হয়েছে,
১২) নারী শিক্ষকদের জন্য আলাদা ওয়াশরুম তৈরি করেছি,
১৩) পাঠাগারের জন্য পর্যাপ্ত বই ও আসবাবপত্র ক্রয় করেছি।
১৪) বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধ কর্ণারের সৌন্দর্য বৃদ্ধিকরন, বই ও আসবাবপত্র ক্রয় করেছি।
১৫) বিদ্যালয়ের সাইয়েন্স ল্যাবকে সমৃদ্ধ ও সংস্কার এবং ল্যাব ব্যবহারে গুরুত্বারোপ করেছি,
১৬) বিশিষ্ট ব্যক্তিত্বদের শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য প্রতিকৃতি ষ্ট্যান্ড তৈরি করেছি,
১৭) শিক্ষক মিলনায়তনে কনফারেন্স টেবিল তৈরি, আসবাবপত্র ক্রয় ও কক্ষের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করেছি,
১৮) প্রশাসনিক কক্ষের আসবাবপত্র ক্রয় ও সৌন্দর্য বৃদ্ধি করেছি,
১৯) সনাতন ধর্মাবলম্বীদের জন্য অনেক সংখ্যক ধর্মীয় বই ক্রয় করেছি।
২০) বিদ্যালয়ের মসজিদের সংস্কার ও উন্নয়ন করেছি,
২১) সিলেবাস ও ছাত্র ডায়েরিতে জ্ঞানমূলক বিশেষ লেখা ও নির্দেশনা সংযোজিত হয়েছে।
২২) বিদ্যালয়ের সমাবেশ অন্যান্য কর্যক্রমের জন্য বিদ্যালয় মাঠে স্থায়ী মঞ্চ তৈরি করেছি।
২৩) বেতন আদায়ের নামে যাতে ক্লাশ বন্ধ না থাকে সে লক্ষ্যে ঘরে বসে বিকাশের মাধ্যমে ফি পরিশোধের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
এখানে কিছু দৃশ্যমান ও প্রধান কাজ উল্লেখ করেছি মাত্র। এছাড়াও বহু সংস্কার করেছি যা উল্লেখ হয়নি বা চোখে দেখা যায় না।
প্রিয় শুভাকাঙ্ক্ষী, যারা আমার যোগদানের পূর্বে এ বিদ্যালয় দেখেছেন তারা এখন আসলেই স্বচক্ষে পরিবর্তন ও উন্নয়ন দেখতে পাবেন।
আমার এ সংস্কার ও উন্নয়ন কাজ করতে অভ্যন্তরীণ বেশ বেগ পেতে হয়েছে।
উল্লেখিত কাজ সম্পুর্ন বিদ্যালয়ের বেসরকারি তহবিল (সেশন চার্জ) হতেই করা হয়েছে। কেবল আল্লাহর রহমত, আপনাদের দোয়া, আমার আমানতদারি ও ব্যয়ের ক্ষেত্রে কঠোর নজরদারিতার কারণেই বিদ্যালয়ের নিজস্ব অর্থে একাজ গুলো করা সম্ভব হয়েছে।
কাজগুলো না করলে যারা বেনিফিটেড হতেন, কাজ করায় তারা যে খুশি এমটা নয়। আমরা ভেবেছি কী বিগত দিনেওতো সেশন চার্জ নেয়া হত ?
আমার এ দু’বছর কাজে অনেক ভুল ভ্রান্তি হতেই পারে। তবে,একটা ভুলও ইচ্ছে করে করিনি, বুঝের অভাবে/ স্বল্পতায় হতেও পারে। এজন্য ক্ষমা করবেন।
আপনার ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি, সহযোগিতা ও গঠনমূলক পরামর্শে আমি সমৃদ্ধ হব ও বরিশাল জিলা স্কুল আরও এগিয়ে যাবে — এ প্রত্যাশা করছি। শুভকামনা।
মুহাম্মদ নুরুল ইসলাম
প্রধান শিক্ষক
বরিশাল জিলা স্কুল।