রংপুরের পীরগাছা উপজেলার ৩নং ইটাকুমারী ইউনিয়নের ২নং ওয়ার্ডে ইজিপিপি প্রকল্পের ৪০ দিনের কর্মসৃজন কর্মসূচীর কাজে কোটিপতির নাম দিয়ে অর্থ আত্নসাৎ এর অভিযোগ ওয়ার্ড ইউপি সদস্য আব্দুল বারেক এর বিরুদ্ধে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায় ।
২নং ওয়ার্ডে ইজিপিপি প্রকল্পের ৪০ দিনের কর্মসৃজন কর্মসূচীর কাজে মোট ১৫ জন শ্রমিকের নাম আছে, তবে উপস্থিত থাকেন লেবার সর্দারসহ মাত্র আটজন! বাকিদের অনুপস্থিতির বিষয়ে জানতে চাইলে, নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক শ্রমিক জানান, ভাই আমরা দৈনিক এই সাত আটজন’ই কাজ করি।
বাকিরা না আসার কারণ জানতে চাইলে ?উপস্থিত শ্রমিকরা জানান, ভাই আমরা গরীব মানুষ আমাদের দৈনিক আসতে হয়। তবে যারা দলীয় (বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের) চেয়ারম্যান ও মেম্বারের লোক আছে, ওরা কখনো কাজ করেনা। এমনকি অডিট অফিসার আসলেও তারা কাজে আসেনা।
উপস্থিত শ্রমিকদের দেয়া তথ্য অনুয়ায়ী দৈনিক কাজ না করলেও এক দু’বার এসে ঘুরে যান লেবার সর্দার মোঃ মতিয়ার রহমান খান। দৈনিক শ্ব-শরীরে উপস্থিত থেকে কাজ করেন ১-সাইদ আলী, ২-মোছাঃ শিল্পী বেগম, ৩-মোছাঃ মমিনা বেগম, ৪-মোছাঃ রাশেদা আক্তার, ৫-শ্রী নারায়ণ চন্দ্র বর্মন, ৬-মোছাঃ রোকেয়া বেগম, ৭-মোঃ বদিয়ার রহমান।
অনুপস্থিত সুবিধাভোগীরা বিত্তবান পরিবারের সদস্য ২নং ওয়ার্ডের সাবেক ইউপি সদস্য আব্বাস আলীর ছেলে, মাইদুল ইসলাম সোহেল রানা। সুবিধাভোগী আইডি নং- 5092106722। সাবেক ওই ইউপি সদস্যের মেয়ে জামাতা ও ইটাকুমারী ইউনিয়ন আওয়ামী যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক, শ্রীকান্ত গ্রামের মনছুর আলীর ছেলে “সাইদুল ইসলাম” সুবিধাভোগী আইডি- 1492780349।
ছাটকান্দি গ্রামের প্রফুল্ল চন্দ্র’র পুত্র সঞ্জয় কুমার রায়। সুবিধাভোগী আইডি-1021719776। ইউপি সদস্য আব্দুল বারেক’র ভাস্যমতে চেয়ারম্যান আবুল বাশারের দেয়া নাম- মোঃ রবিউল ইসলাম, পিতাঃ আব্দুল আজিজ, গ্রাম শ্রীকান্ত। সুবিধাভোগী আইডি- 3307297626।
ইউপি সদস্য আব্দুর বারেক’র আপন চাচাতো ভাই বিত্তবান পরিবারের সদস্য প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী শ্রীকান্ত মৌজার গিয়াস উদ্দিনের ছেলে শফিকুল ইসলাম সুবিধাভোগী আইডি- 8242454281। গিয়াস উদ্দিনের আরেক ছেলে আঃ সামাদ সুবিধাভোগী আইডি 3733096881।
অনুপস্থিত শ্রমিকদের বিষয়ে জানতে চাইলে ইউপি সদস্য আব্দুল বারেক বলেন, আমার ওয়ার্ডে মোট ১৫ জন শ্রমিক কাজ করেন, নিয়মিত ক’জন জানতে চাইলে ইউপি সদস্য বারেক বলেন, দৈনিক ৯/১০ জন উপস্থিত থাকেন। বাকি ৫ জনের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি জানান, বাকিরা দলীয় কিছু আছে, চেয়ারম্যান’র কিছু আছে। গ্রাম পুলিশ আছে।
আপন চাচাতো ভাই প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী শফিকুল ও সামাদ এর নাম কর্মসূচির কাজে কেন? বিত্তবানদের কর্মসূচির কাজে সুবিধা দেয়া কি নিয়ম আছে? এমন প্রশ্নের জবাবে ওই ইউপি সদস্য বারেক জানান, গিয়াস উদ্দিন গরীব মানুষ তার কয়েকজন ছেলেকে নিয়ে খুব কষ্টে দিনাতিপাত করেন তাই তার দুই ছেলের নাম দিয়েছি।
পরে গিয়াসউদ্দিন এর মুখোমুখি হতে চাইলে ওই ইউপি সদস্য চা খাওয়ার কথা বলে ইটাকুমারী বটতলী বাজারে গিয়ে টাকা দিয়ে নিউজ না করার জন্য অনুরোধ জানান। এবং তিনি অনিয়মের কথা স্বীকার করে বলেন, ভাই মেম্বারদের কোন ইনকাম নেই তাই দুইজন শ্রমিকের নামে টাকা আমি খাই। তিনি নিশ্চিত করে বলেন, আমি একাই সুবিধা নেই না, এখানে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বিমল বাবুরও নাম আছে। ওনারাও সুবিধা ভোগ করেন।
অনিয়মের বিষয়ে জানতে চাইলে, ৩নং ইটাকুমারী ইউনিয়নের দায়িত্বে থাকা ট্যাগ অফিসার, পীরগাছা উপজেলার ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনার ইঞ্জিনিয়ার তৌহিদুল ইসলাম বলেন, আমি ওখানে কোন দিন যাইনি কেউ বলতে পারবেনা। বলে তিনি ফোন কেটে দেন।
উল্লেখিত অনিয়মের ব্যাপারে জানতে চাইলে পীরগাছা উপজেলার প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা আব্দুল আজিজ বলেন, ৩নং ইটাকুমারী ইউনিয়নে ট্যাগ অফিসার হিসেবে আছেন তৌহিদুল ইসলাম। তিনি আরও বলেন, ৪০ দিনের কর্মসূচিতে যারা কাজ করে তারা সবাই শ্রমিক।
কর্মসূচির কাজে কোন দলীয় বা মেম্বার চেয়ারম্যানের নাম থাকার সুযোগ নেই। যাদের নাম আছে তাদের পরিচয় শুধুই শ্রমিক। এই কর্মসূচির কাজে কোন বিত্তবান বা ধর্ণাঢ্য ব্যক্তির কাজ করার কোন সুযোগ নেই। কেউ যদি অনিয়ম করে থাকে তাহলে তদন্ত সাপেক্ষে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।