চট্টগ্রাম কর্ণফুলী নদীর তলদেশে নির্মিত বঙ্গবন্ধু টানেল আগামী মাসের শেষ সাপ্তাহে ২৪ ফেব্রুয়ারি উদ্বোধন করা হতে পারে বলে জানিয়েছেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। কর্ণফুলীর তলদেশে নির্মিত বঙ্গবন্ধু টানেল এটি দক্ষিণ এশিয়ার প্রথম।
তিনি জানান, টানেলটির নির্মাণকাজ প্রায় ৯৫ দশমিক ৫০ শতাংশ শেষ হয়েছে। একসময় কেউ ভাবেনি বঙ্গবন্ধু টানেল নির্মাণের মাধ্যমে চট্টগ্রাম সাংহাইয়ে শহরে রূপ নিবে। আমি আশাবাদী চট্টগ্রাম আরো অনেকদূর এগিয়ে যাবে। চট্টগ্রাম হবে ওয়ান সিটি টু টাউন।
শুক্রবার দুপুরে নগরীর সার্কিট হাউজের সম্মেলন কক্ষে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় তিনি এ তথ্য জানান। মন্ত্রী বলেন, চট্টগ্রাম আমাদের প্রাণের স্পন্দন, অর্থনীতির স্পন্দন। জাতীয় অর্থনীতির স্বার্থে চট্টগ্রামকে বাঁচিয়ে রাখতে হবে। টানেল চালু হলে চট্টগ্রাম অনেক বেশি প্রাণ চঞ্চল হবে। দেশের জাতীয় অর্থনীতির সমৃদ্ধির স্বার্থে চট্টগ্রাম অনেক গুরুত্বপূর্ণ। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চট্টগ্রামে ব্যাপক উন্নয়ন কাজ করেছেন উল্লেখ করে সড়ক পরিবহন সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, চট্টগ্রামে কর্ণফুলীর তলদেশে নির্মাণ করা বঙ্গবন্ধু টানেল দক্ষিণ এশিয়ার প্রথম। চীনের সাংহাইয়ের মতো ওয়ান সিটি টু টাউন চট্টগ্রামে হচ্ছে। বঙ্গবন্ধু টানেলের বাইরের সবকাজ শেষ। এখন টানেলের ভেতরে ফিনিশিং ওয়ার্ক ও কিছু ইলেকট্রো ইঞ্জিনিয়ারিং কাজ চলছে। কাজের অগ্রগতি ৯৫ দশমিক ৫০ শতাংশ। আমি আশা করছি উদ্বোধনের পর এপ্রিল-মে মাসের দিকে যানবাহন চলাচলের জন্য খুলে দেয়া হতে পারে।
মন্ত্রী বলেন, দেশের প্রথম এই টানেল নির্মিত হচ্ছে চীনের আর্থিক ও কারিগরি সহযোগিতায়। প্রকল্প ব্যয় ১০ হাজার ৩৪৬ কোটি টাকা। এখন চলছে টানেলের ভেতরে ফায়ার ফাইটিং, লাইটিং ও কন্ট্রোল ব্যবস্থাপনার কাজ। পরীক্ষামূলকভাবে চালানো হচ্ছে প্রকল্পের গাড়িও। নদীর তলদেশে হওয়ায় যেকোনও সময় পানি জমতে পারে আশঙ্কায় টানেলের মধ্যে বসানো হচ্ছে ৫২টি সেচ পাম্প। বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ এই প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে।
টানেলের সুরক্ষার স্বার্থে টানেলে প্রবেশের আগে যানবাহন স্ক্যানিং করা হবে। এজন্য বসানো হয়েছে স্ক্যানার মেশিন। টানেলে নদীর তলদেশে স্থাপন করা হয়েছে দুটি টিউব। একটি টিউবে কোনও দুর্ঘটনা ঘটলে যাতে বিকল্প পথে গাড়ি চালানো যায়, সেটিরও কাজ চলছে। নির্মাণ করা হয়েছে প্রায় ৫ দশমিক ৩৫ কিলোমিটার অ্যাপ্রোচ সড়ক, ৭৭২ মিটার দীর্ঘ ফ্লাইওভার। কর্ণফুলীর দক্ষিণ প্রান্তে আনোয়ারা অংশে টোল প্লাজা নির্মাণের কাজও চলছে।
টানেলকে ঘিরে রাজধানী ঢাকার সঙ্গে চট্টগাম নগরীর এবং পর্যটন নগরী কক্সবাজারের সড়ক যোগাযোগে বৈপ্লবিক পরিবর্তন আসবে। ইতোমধ্যে আনোয়ারা উপজেলা প্রান্তে সংযোগ সড়কের দুই পাশে গড়ে উঠছে ছোট-বড় অসংখ্য শিল্প-কারখানা। টানেলকে ঘিরে পর্যটন, শিল্পায়নসহ অর্থনীতিতে যোগ হচ্ছে নতুন মাত্রা। টানেল চালু হলে কর্ণফুলী নদী পাড়ি দিতে সময় লাগবে মাত্র ৫ থেকে ৬ মিনিট। সময় বেঁচে যাওয়ায় অর্থনীতি গতি পাবে।
টানেল নির্মাণে মোট ব্যয়ের মধ্যে বাংলাদেশ সরকার দিয়েছে ৪ হাজার ৪৬১ কোটি টাকা। বাকি ৫ হাজার ৯১৩ কোটি টাকা দিয়েছে চীন সরকার। চীনের এক্সিম ব্যাংক ২ শতাংশ হারে ২০ বছর মেয়াদী এ ঋণ দিয়েছে। চীনের কমিউনিকেশন ও কনস্ট্রাকশন কোম্পানি লিমিটেড (সিসিসিসি) টানেল নির্মাণের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান হিসেবে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে।
মূল টানেলের দৈর্ঘ্য ৩ দশমিক ৩২ কিলোমিটার। তবে সংযোগ সড়কসহ টানেলের সর্বমোট দৈর্ঘ্য ৯ দশমিক ৩৯ কিলোমিটার। নদীর নিচে সুড়ঙ্গের মাধ্যমে তৈরি করা হয়েছে ১০ দশমিক ৮০ মিটার ব্যাসের দুটি টিউব। এর প্রতিটির দৈর্ঘ্য ২ দশমিক ৪৫ কিলোমিটার বলে জানান মন্ত্রী।