বরিশাল সদর উপজেলার জাগুয়া ইউনিয়নের ১৬৮ নং খয়েরদিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের কারসাজিতে স্থানীয় শ্রমিককে সাজানো হয়েছে মস্ত চোর।স্থানীয় সূত্রে অভিযোগ থেকে জানা যায়,দীর্ঘদিন ধরে স্কুলের পুরানো মালামাল,স্কুলের বেঞ্চ,পরিত্যক্ত টিনের ঘর সহ বেশ কিছু মালামাল চুরি করে কাওকে কিছু না জানিয়ে বিক্রি করে আসছেন প্রধান শিক্ষক ও একাধিক শিক্ষক। এরকমই বুধবার বেশ কিছু ইট চুরি করে স্থানীয় রুবেল,রব তালুকদার,সুরুজের কাছে বিক্রি করেন শিক্ষক মনির ও প্রধান শিক্ষক হেনারা পারভিন।
স্থানীয় শ্রমিক ও ভুক্তভোগী সুরুজ অভিযোগ করেন যে , স্কুলের প্রধান শিক্ষক হেনারা আপা ও মনির স্যার ইট,বেঞ্চ বিক্রি করে দেয়। তাদের কাছ থেকে ১ হাজার টাকায় কিছু ইট কিনেছিলাম বাকিতে।টাকা পরিশোধে দেরি হবে জেনে আমার বিরুদ্ধে তিনি ইউএনও স্যারের কাছে লিখিতভাবে বড় একটি চুরির তালিকা দিয়ে অভিযোগ করেন।পুলিশের এসআই মিলন সাহেব এসে আমাকে জিজ্ঞাসাবাদ করার পর হেনারা আপার সিদ্ধান্তে মোট জরিমানার ২ হাজারের ১ হাজার টাকা জমা দিয়েছি।বাকি টাকার তারিখ ধার্য করে দিছেন তিনি।অথচ,আমি চুরি করিনি কোন মালপত্র বা সরঞ্জাম ।স্কুলের ভবনে শ্রমিকের কাজ করতাম,আজ চুরির অপবাদ দিল নিজেদের চুরি ঢাকতে।
স্থানীয় প্রত্যক্ষদর্শীদের দেয়া তথ্য অনুযায়ী বাদশা মেম্বরের বাড়ির সামনে নাপিতের মার্কেট নামে তার দোকানে গেলে দেখা যায় দুটো দোকানে ছয়টি লোহার এঙ্গেলের স্কুল বেঞ্চ পাতা।এসময় স্থানীয় বাসিন্দা রশিদ মিয়া দাবী করেন যে, স্কুল বেঞ্চ দুর্নীতিবাজ শিক্ষক হেনারা ও মনিরের যোগসাজশে বিক্রি হয়ে গেছে।
এদিকে,স্কুলের প্রধান শিক্ষক,শিক্ষক নাজমুল হোসাইন মনির,শিক্ষিকা ডালিয়া আফরিন টুম্পা আক্তার,বায়জিদ শরিফ সাক্ষরিত ইউএনও বরাবর বিচারের আবেদনে দেখা যায় ভুক্তভোগী শ্রমিক সুরুজকে ও তার স্ত্রীকে সরাসরি ‘চোর’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন অভিযোগকারীরা।চিঠিতে অভিযোগ করা হয়েছে ‘ দীর্ঘদিন ধরে স্থানীয় বারেক হাওলাদারের পুত্র সুরুজ ও তার স্ত্রী শিল্পী আক্তার স্কুলের মালপত্র চুরি করে আসছে।
এরমধ্যে বেঞ্চ,ইট,বালুসহ নানা সামগ্রী চুরি করে তারা বিভিন্ন স্থানে বিক্রি করে আসছে।এর প্রতিবাদ করলে এই দম্পতি শিক্ষকদের অশ্লীলভাবে গালিগালাজ করে ও স্কুলের কার্যক্রম ব্যাহত করে।এ বিষয়ে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়ার আবেদন করেন প্রধান শিক্ষিকা হেনেরা পারভিনসহ অন্যান্যরা।
স্কুলের প্রধান শিক্ষককে জানতে চাইতে তিনি বলেন ‘ সুরুজ একজন চোর।সে যা যা চুরি করছে তাই লিখছি।এটিও,টিও স্যারের সাথে কথা বলে ইউএনও স্যারকে লিখেছি।পরে পুলিশ এসে সুরুজকে ডেকে ধার্য করা ২ হাজার টাকার ১ হাজার জমা দেয়ায়।বাকি টাকা তিনদিনের মধ্যে দিতে হবে।স্কুলের ৬৪ হাজার টাকার মাল গেছে। সব মাল সুরুজ নিয়েছে।’
সুরুজ ও তার পরিবার চোর; এ বিষয় আপনি বহু আগে জানতেন দাবী করেছেন।তাহলে সুরুজের বাসায় স্কুলের মালপত্র এবং স্কুল ছাদেসহ অরক্ষিত অবস্থায় স্কুলের সরঞ্জাম রেখেছিলেন কেন? আর সুরুজকে এর আগে কোন মামলা বা তার বিরুদ্ধে জিডি করেন নি কেন? এমন প্রশ্নের উত্তরে কোন সদুত্তর দিতে পারেননি প্রধান শিক্ষক হেনারা পারভিন।
কর্তব্যরত পুলিশ অফিসার এসআই মিলন জানান ‘ থানার পক্ষ থেকে ঘটনাস্থলে গেলে জানতে পারি যে ইটের দাম বাবদ প্রধান শিক্ষক প্রথমে ৫ হাজার টাকা ও একপর্যায় ৩ হাজার টাকা দাবী করে সুরুজের কাছে।পরে ১ হাজার টাকা জমা দেয় সুরুজ।তবে প্রধান শিক্ষকের অভিযোগের সাথে বাস্তব তথ্যের সামঞ্জস্য পাওয়া যাচ্ছেনা বললেই চলে।
এসআই মিলন আরো জানান ‘যে,চায়ের দোকানে বেঞ্চ থাকার বিষয়ে জানতে পেরে জব্দ করতে গেলে প্রধান শিক্ষক ও শিক্ষক মনির স্যার বাঁধা দেন।তাই তখন জব্দ করা হয়নি।তবে সুরুজের বাড়ি থেকে বা তার কাছ থেকে কোন চোরাই মাল উদ্ধার হয়নি।’
এ বিষয়ে উপজেলা শিক্ষা অফিসারকে একাধিকবার ফোন দিলে তিনি রিসিভ না করায় বক্তব্য সংগ্রহ সম্ভব হয়নি