গত ০৫ বছরে বাস থেকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে এবং পিটিয়ে ১৬ যাত্রীকে হত্যা করা হয়েছে। ০২জন পরিবহন শ্রমিক ও খুন হয়েছেন যাত্রীদের ধাক্কা ও পিটুনিতে। ৩২টি ধাক্কার ঘটনায় গুরুতর আহত হয়েছেন আর ও ২০ জন যাত্রী এবং ০১জন পরিবহন শ্রমিক।
যানবাহন থেকে ধাক্কা দিয়ে ফেলার ১৩টি ঘটনা ঘটেছে গেল বছরে ২০২২,এতে ০৪জন যাত্রী নিহত হয়েছেন। গত বছরে ভাড়া নিয়ে মারামারির ঘটনা ঘটেছে ০৪টি। এতে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে এক যাত্রীকে। বিপরীত ঘটনা ও রয়েছে। ভাড়ায় বসচায় চালককে পিটিয়ে হত্যা করে যাত্রীরা। বাস থেকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে এক পরিবহন শ্রমিককে হত্যা করা হয়। গুরুতর আহত হয়েছেন আরেক হেলপার।
হতাহতের তথ্য ‘প্রমাণ’ সড়ক পরিবহন বিভাগকে দিয়েছে যাত্রী কল্যাণ সমিতি। গত ২২শে জানুয়ারি রবিবার সচিবালয়ে সড়ক পরিবহন সচিব এ বি এম আমিন উল্লাহ নুরীকে প্রতিবেদন দেন বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরী। তিনি বলেন,গত ১৫ রবিবার জানুয়ারি সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের সভায় (বিআরটিএ) সচিব ধাক্কা দিয়ে ফেরার ঘটনার সত্যতা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করে প্রমাণ চেয়েছিলেন। যাত্রী কল্যাণ সমিতি তা দিয়েছে।
১৫ জানুয়ারির সভায় আমিন উল্লাহ নুরী ১৮ জন যাত্রীকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে হত্যার খবরে উষ্ফ্মা প্রকাশ করেছিলেন। এর সত্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে বলেছিলেন, ‘গাড়ির নম্বর, ধাক্কা দেওয়া শ্রমিকের নাম দিতে হবে। মামলা হবে। সরকার বিচার করবে।’ এসব তথ্যে দেশ ও পরিবহন খাতের ভাবমূর্তি নষ্ট হয় বলেও মন্তব্য করেছিলেন সচিব।
যাত্রী কল্যাণ সমিতির প্রতিবেদন পাওয়ার কথা জানিয়ে আমিন উল্লাহ নুরী সমকালকে বলেছেন, ধাক্কা দেওয়ার ঘটনাগুলো তদন্ত করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। পুলিশ, বিআরটিএ তদন্ত করবে। সত্যতা পাওয়া গেলে সরকার অবশ্যই ব্যবস্থা নেবে। মামলা হবে।
গত বছরের ১৩ সেপ্টেম্বর যাত্রী কল্যাণ সমিতির এক অনুষ্ঠানে দাবি করা হয়, বাসে ভাড়া নৈরাজ্যের কারণে যাত্রী ও পরিবহন শ্রমিকদের মধ্যে হাতাহাতি মারামারির ঘটনা ঘটছে। ২০১৮ সাল থেকে অন্তত ১৪ জন যাত্রীকে গাড়ি থেকে ফেলে হত্যা করা হয়েছে। ১৫ জানুয়ারির সভায় সচিব প্রমাণ চেয়ে পাল্টা অভিযোগ করেন, এসব তথ্য ভুল। সভায় উপস্থিত পরিবহন মালিক-শ্রমিক নেতারাও সচিবের বক্তব্যকে সমর্থন করেন।
সচিবকে দেওয়া প্রতিবেদনে, ধাক্কার ঘটনার সংক্ষিপ্ত বিবরণ দেওয়া হয়েছে। সংবাদপত্রে প্রকাশিত খবর সংযুক্ত করা হয়েছে। মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, যেসব ঘটনা সংবাদপত্রে এসেছে, সেগুলোই প্রতিবেদনে দেওয়া হয়েছে। এর বাইরেও ধাক্কার ঘটনা থাকতে পারে। তথ্য ঘেঁটে দেখা গেছে, ২০১৮ সালের ২১ জুলাই থেকে গত বছরের নভেম্বর পর্যন্ত ১৮ জন খুন হয়েছেন।
সমিতির প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত ৯ নভেম্বর গাবতলী টার্মিনালের এ মতিন পরিবহনের কর্মী এখলাছ মিয়াকে ভাড়া নিয়ে ঝগড়ার এক পর্যায়ে চলন্ত বাস থেকে ফেলে দেয় যাত্রীরা। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় পরদিন তাঁর মৃত্যু হয়।
গত ১৫ অক্টোবর যাত্রাবাড়ী এলাকায় শহীদ ফারুক রোডে টনি টাওয়ারের সামনে সিটি সার্ভিসের ০৮ নম্বর বাস থেকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেওয়া হয় বায়িং হাউসকর্মী আবু সায়েম মুরাদকে। তিনি চাকার নিচে পিষ্ট হয়ে নিহত হন।
গত ০৭ জুলাই গাজীপুরের জয়দেবপুরে শিববাড়ী এলাকায় তাকওয়া পরিবহন বাসের চালক ও সহকারী বাগ্বিতণ্ডার এক পর্যায়ে মো. সায়েম নামের এক যাত্রীকে ধাক্কা দিয়ে চলন্ত বাস থেকে ফেলে দেয়। ঘটনাস্থলেই সায়েমের মৃত্যু হয়।
গত বছরের ২০ জানুয়ারি রাজধানীর ওয়ারীতে গ্রিন বাংলা পরিবহনে ভাড়া নিয়ে ঝগড়ার জেরে ইরফান নামের যাত্রীকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে হত্যা করা হয়। গত ০২ আগস্ট আশুলিয়ায় ভাড়া বিতণ্ডায় যাত্রীদের মারধরে খুন হন চালক আরিফ হোসেন। গত ০৫ মে মুন্সীগঞ্জের সিরাজদীখানে বাড়তি ভাড়া না দেওয়া ইজিবাইকের যাত্রী আলী হোসেন দেওয়ানকে পিটিয়ে মেরে ফেলে চালক জাকির হোসেন। তাকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
গত ১৭ অক্টোবর সাংবাদিক জাফর আহমেদকে ভাড়া বিতর্কেও জেরে চলন্ত বাস থেকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেওয়া হয়। গত ২৭ ফেব্রুয়ারি ভাড়া নিয়ে বচসার জেরে চট্টগ্রামের বহদ্দারহাটে হেলপার বেলাল হোসেনকে চলন্ত বাস থেকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেয় যাত্রী। হেলপার গুরুতর আহত হন।
গত ০৭ ফেব্রুয়ারি মৌমিতা পরিবহনের বাসে ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থী শিমুল অর্ধেক ভাড়া দিতে চাইলে চালকের সহকারী তাঁকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেয়। গত ২৮ এপ্রিল রাতে আশুলিয়ার বাইপাইলে তুহিন পরিবহনে ভাড়া নিয়ে বিতণ্ডার জেরে বাসের শ্রমিকরা যাত্রী জহিরুলকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেয়। এ ঘটনায় হেলপার মানিক এবং সুপারভাইজার আবদুল মজিদকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
গত ১৫ ফেব্রুয়ারি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই শিক্ষার্থীকে হাটহাজারী রুটের দ্রুতযান পরিবহনের বাস থেকে, ০৪ অক্টোবর যশোরে শিক্ষার্থী মেহেদি হাসানকে, ১৮ জানুয়ারি তিতুমীর কলেজের দুই শিক্ষার্থীকে মঞ্জিল পরিবহনের বাস থেকে, গত ০৮ সেপ্টেম্বর কলেজছাত্র এম জসিম আহমেদকে বাস থেকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেওয়া হয়। এই সব ঘটনা ঘটেছে হাফ ভাড়া বিতর্কে। জসিমকে সংজ্ঞাহীন অবস্থায় গোপালগঞ্জ সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
গত ৩১ আগস্ট অতিরিক্ত ভাড়ার প্রতিবাদ করায় যাত্রী মো. শহীদকে মাথা ফাটিয়ে দেয় নগর পরিবহন বাসের চালক ও হেলপার। বাসসহ হেলপার ইব্রাহিমকে আটক করে পুলিশ। গত ১৮ আগস্ট রাজধানীর উত্তরায় হাফ ভাড়া নিয়ে বিতর্কের জেরে বিকাশ পরিবহনের বাসের হেলপারের মারধরের শিকার হন ঢাকা কলেজের ইসলামিক শিক্ষা বিভাগের শিক্ষার্থী তৌহিদুল ইসলাম। গত ১৯ ফেব্রুয়ারি মেট্রো সার্ভিসের বাসে ভাড়া নিয়ে মারামারিতে তিন শিক্ষার্থী আহত হন।