রামদা দিয়া কোপ মারি আমার ডান হাত দেহ থ্যাইকা কাটি দিছে। ওই হাতটা একন ঝুলে আছে! তাও ওদের সাধ মিটেনি। দেহের বাকিটা লইয়া ঢাকার পঙ্গু হাসপাতালে আছি। একন ওরা আমাকে খুন হরবে বলে হুমকি দিছে। মামলা হরলে মোরে ও মোর বৌ, বচ্চারেও দুন্নইত দিয়া শেষ কইরা দেবে। পুলিশের সামনে দিয়া মোরে যারা মারছে তারা ঘোরে।
আর মুই পঙ্গু হাসপাতালের বিছনায় মৃত্যুর জন্য দিন গুনছি। মোর ওপরে যারা হামলা হরছে হ্যাগো পুলিশ একনো ধরেনি। ওরা বুক ফুলাই ঘুইরা বেড়ায়। ওরা বলে খুন হরলে অয় কি। মোগো কিছু হরতে পারবেনা বলে কান্নায় ভেঙ্গে পড়লেন। রবিবার দুপুরে রাজধানী ঢাকার পঙ্গু হাসপাতালের জি ৩৭ নম্বর বেডে বসে কথাগুলো বলছিলেন ঝালকাঠির রাজাপুর উপজেলার বড়ইয়া ইউনিয়নের নিজামিয়া গ্রামের মৃত্যু আলফাজ উদ্দিনের পুত্র গাছ ব্যবসায়ী আওলাদ হোসেন (৪৫)।
চাঁদার টাকা না দেয়ায় একটি পক্ষ কোপ দিয়ে সাইফুলের ডান হাতটি শরীর থেকে বিচ্ছিন্ন করে দেয়। ঘটনাটি ঘটে রাজাপুরের নিজামিয়া বাজারের একটি চায়ের দোকানে ১৫ ফেব্রুয়ারী সকাল পৌনে দশটায়।
আওলাদের স্ত্রী ফজিলা বেগম জানান, আওলাদ একজন দিনমজুর ও গাছের ব্যবসা করেন। ঘটনার দিন গ্রামের নিজামিয়া বাজারেচা খেতে ছিল। দোকানে দোকানদার আর আওলাদ ছাড়া আর কেউ ছিলনা। হঠাৎ করে সন্ত্রাসীরা পুরো বাজার ঘেরাও করে ঐ চায়ের দোকানে আওলাদকে একা পেয়ে অস্রে সজ্জে সজ্জিত হয়ে রামদার কোপে তাঁর ডান হাত বিচ্ছিন্ন করে দেন। এছাড়া মাথা, পেট, ঘাড়, পাসহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে মৃত্যু নিশ্চিত করে চলে যায়।
আল্লাহর হুকুমে আমার স্বামীর পরানডা এখনো আছে। তবে ডান হাত আর কোন কাজে আসবেনা। মূমূর্ষ অবস্থায় তাঁকে প্রথমে রাজাপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়। অবস্থার অবনতি হলে তাঁকে বরিশাল শেরেবাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। বরিশালে প্রাথমিকভাবে সেলাই করা হয় কাটা ফুলা, হাড়কাটা স্থানগুলোতে। বরিশাল শেরেবাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে কথা বলতে বলতে এক সময় ফজিলা ডুকরে কেঁদে ওঠেন। কান্না সামলে তিনি বলেন, ‘আমার স্বামির ডান হাত শেষ। মাথায় কোপ, শরীরের বিবিন্ন জায়গায় কোপ। একন আওলাদ এখন পঙ্গু মানুষ। ওকে পঙ্গু হয়ে চলতে হবে।
আওলাদের পাশে বসে ছিলেন তাঁর আত্মীয় ওসমান। তিনি জানান, ওই ঘটনায় এখনো মামলা করে নাই। হামলাকারীরা প্রভাবশালী হওয়ায় আমরা ভীত সন্ত্রত। আমরা মামলা করার প্রস্তুতি নিচ্ছি। মামলা করলে হামলাকারীরা আবারো হামলা করবে বলে তারা বলছে। এমনকি আওলাদকে দুনিয়া থেকে সরিয়ে দিবে। এমন অবস্থায় আওলাদ ও তার পরিবারের লোকজন নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে।
আওলাদের স্ত্রী ফজিলা বেগম আরো জানান, হুকুমদাতা বড়ইয়া ইউনিয়নের ইউপি চেয়ারম্যান শাহাবউদ্দিন সুরু মিয়া, তার পুত্র শাব্বির, আলমগীরের পুত্র মুন্না, হেমায়েতের পুত্র শাহিন, আব্দুর রাজ্জাক শামিমের পুত্র রিমন, জয়নালের পুত্র রনিসহ যারা হামলায় জড়িত তাদের বিরুদ্ধে মামলা করবো। একতো ভয় এবং আওলাদ চিকিৎসাধীন থাকায় মামলা দায়েরে বিলম্ব হচ্ছে। তবে প্রস্তুতি চলছে মামলা দায়েরের। আওলাদের স্বজনরা পুলিশের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন। কারন তারা এখন নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে।
তারা জানান, এখনো এলাকায় প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছেন হামলাকারীরা। দিনে রাতে আওলাদের এলাকায় গিয়ে তাঁদেরকে মামলা না করার জন্য হুমকি দিচ্ছে। মামলা দিলে মেরে ফেলা হবে বলেও হুমকি দেওয়া হয়।
আওলাদের স্ত্রী জানান, হামলাকারীরা ক্ষমতাশালী হওয়ায় তারা পুরো ইউনিয়নকে জিম্মি করেছে। তাদের ভয়ে সবাই আতংকিত।তিনি জানান, আওলাদকে হত্যার জন্য আগেও সাহাবউদ্দিন সুরু মিয়া টাকার বিনিময় ভাড়াটে খুনি ঠিক করেছিল। তখনও আল্লাহর রহমতে খুনিদের হাত থেকে আওলাদ বেঁচে যায়। হামলাকারী সাব্বিরসহ একাধিকজনের বিরুদ্ধে রাজাপুর থানায় মামলা রয়েছে।সাব্বিরসহ তিনজনকে ২০১৯ সালের ৮ সেপ্টেম্বর অস্ত্রসহ রাজাপুর থানা পুলিশ গ্রেপ্তার করে জেলে পাঠিয়েছিল। সুরু মিয়ার পুত্র সাব্বির একটা কুখ্যাত সন্ত্রাসী।
আওলাদের স্ত্রী ফজিলা বেগম জানান, হামলার সময় সাহাবউদ্দিন সুরু মিয়ার পুত্র সাব্বিরের নেতৃত্বে সন্ত্রাসীরা আওলাদকে হত্যার জন্য সুরু মিয়াই নির্দেশেই হত্যার জন্য কুপিয়ে পঙ্গু করে দিছে। তিনি বলেন আমরা ন্যায় বিচার দাবী করছি। সেই সাথে দায়ীদের গ্রেপ্তারেরও দাবী জানাচ্ছি।
এ ব্যাপারে শাহাবউদ্দিন সুরু মিয়া জানান, আমি হামলার জন্য নির্দেশ দেইনি। আওলাদ ভালো না। মুন্নাসহ একদল লোকজন আওলাদকে কুপিয়েছে।
রাজাপুর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) পুলক চন্দ্র রায় জানান, আওলাদের পক্ষ থেকে এখনো কোন অভিযোগ পাইনি। অভিযোগ পেলে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া হবে।