দারিদ্রতা দমাতে পারেনি অদম্য শামীম খালাসীকে, সম্প্রতি প্রকাশিত এইএসসি ও সমমান পরিক্ষার ফলাফলে শামীম জিপিএ-৫ পেয়েছেন। শুধু তাই নয় শামীম পিএসসি, জেএসসি, এসএসসিতেও জিপিএ-৫ পেয়েছেন। এছাড়া শামীম পঞ্চম ও অষ্টম শ্রেণীতে ট্যালেন্টপুল বৃত্তি পেয়েছেন। শামীম খালাসী ফরিদপুরের সালথা উপজেলার গট্টি ইউনিয়নের সিংহপ্রতাপ গ্রামের কৃষক সামাদ খালাসীর একমাত্র ছেলে।
দরিদ্র কৃষক সামাদ খালাসীর এক ছেলে ও এক মেয়ের মধ্যে বড় শামীম ২০০১ সালে জন্ম গ্রহণ করেন। ৬ বছর বয়সে ভর্তি হন সিংহপ্রতাপ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। সেখান থেকে পিএসসি ও জেএসসিতে জিপিএ-৫ পেয়ে ভর্তি হন সাড়ুকদিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ে। সাড়ুকদিয়া উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসিতে জিপিএ-৫ পেয়ে বিজ্ঞান বিভাগে ভর্তি হন সরকারি রাজেন্দ্র কলেজ ফরিদপুরে। সেখানে লেখাপড়া করা অবস্থায় মানসিক সমস্যা হলে বন্ধ হয়ে যায় শামীমের লেখাপড়া। এরপর দুবছর পর বাবার পরামর্শে ভর্তি হন সালথা সরকারি কলেজে। সালথা কলেজ থেকে ২০২২ সালের এইচএসসি পরিক্ষায় মানবিক বিভাগ থেকে সাফল্যের সাথে জিপিএ-৫ পেয়ে কৃতকার্য হন।
দারিদ্র কৃষক বাবার মেধাবী শামীমের লেখাপড়া করা সহজ ছিলো না। একবেলা খেয়ে অন্য বেলা উপোষ থেকে সে লেখাপড়া চালিয়ে গেছে। সংসারে বাবাকে সাহায্য করতে ও লেখাপড়ার খরচ চালাতে নিজেদের আবাদি জমির পাশাপাশি শামীম অন্যের আবাদি জমিতে শ্রমিকের কাজ করেছেন। এরপর নিয়মিত টিওশনি করেছেন শামীম। বন্ধুদের কাছ থেকে মাঝে মাঝে বই ধার করে লেখাপড়া করছেন মেধাবী শামীম। স্কুল ও কলেজের শিক্ষকরা লেখাপড়ায় তাকে যথাসম্ভব সাহায্য করেছে। শামীমের ছোটবোন সাড়ুকদিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ে ৯ম শ্রেণীতে পড়ে আর মা গৃহিনী।
শামীমের বাবা,মার সাথে কথা হলে তারা জানায়, ছোট বেলা থেকেই শামীম মেধাবী। লেখাপড়াই যেন ওর সব কিছু। লেখাপড়ার বাইরে ও কিছুই চিন্তা করতে পারে না। আমাদের কষ্ট হয়েছে তারপরেও আমরা চেষ্টা করেছি যেন ওর লেখাপড়ায় কোন বাধা না আসে। শামীম নিজেও বাবার সাথে মাঠে কাজ করেছে টিউশনি করেছে তবুও ছেলেটা দমিয়ে যায়নি। আমাদের ছেলে ভাল রেজাল্ট করেছে আমরা অনেক খুশি হয়েছি, এখন ও ভাল একটা চাকরি পেলেই আমাদের কষ্টের দিন শেষ হবে।
শামীম খালাসী বলেন, মহান আল্লাহর অশেষ মেহেরবানিতে, মা বাবার দোয়া ও ভালবাসা এবং সঠিকভাবে মেধা ও শ্রম কাজে লাগিয়ে প্রতিটি বোর্ড পরিক্ষায় আমার ফলাফল ভাল হয়েছে। এছাড়াও আমার স্কুল ও কলেজের শিক্ষকগন আমাকে যথা সম্ভব লেখাপড়ায় সাহায্য করেছেন। ভাল ফলাফলের জন্য স্যারেরা আমাকে পরামর্শ ও বই দিয়েছেন। আমার সহপাঠিরা আমাকে উৎসাহ দিয়েছে। আমি সকলের কাছে কৃতজ্ঞ। সবাই আমার জন্য দোয়া করবেন।
সালথা কলেজের অধ্যক্ষ কৃষ্ণচন্দ্র বর্মণ বলেন, শামীম একজন পরিশ্রমী শিক্ষার্থী। সে জানে কিভাবে পরিক্ষায় ভাল ফলাফল করা যায়। আমরাও তাকে পরামর্শ দিয়েছি, অনেক সময় গাইড দিয়েছি। যেকোন শিক্ষার্থীর ভাল ফলাফলের জন্য আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করি। একজন শিক্ষার্থী তার মেধা, শ্রম, অদ্যবসায় সঠিকভাবে কাজে লাগাতে পারলেই পরিক্ষায় ভাল ফলাফল করা সম্ভব। আমরা সালথা কলেজের শিক্ষক পরিষদ তার জন্য গর্ববোধ করি।