ঝালকাঠির রাজাপুর উপজেলার আশ্রয়ণ প্রকল্প-২ এর ঘর দেওয়ার নামে ঘুষ নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে রাজাপুর সদর ইউনিয়ন পরিষদের ৪নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য সৈয়দ সুমন মীর, ৫নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মো. বাদশা বেপারী এবং ৪.৫ ও ৬নং ওয়ার্ডের সংরক্ষিত মহিলা ইউপি সদস্য নাজমা ইয়াছমিন মুন্নির বিরুদ্ধে।
রাজাপুর উপজেলা প্রশাসনের তথ্যানুযায়ী মুজিববর্ষে গৃহহীন উপকারভোগী প্রথম পর্যায়ে রাজাপুর উপজেলায় ৩৩৩টি। দ্বিতীয় পর্যায়ে রাজাপুর উপজেলায় ৩৭টি। তৃতীয় পর্যায়ে রাজাপুর উপজেলায় ১৪১টি। চতুর্থ পর্যায়ে রাজাপুর উপজেলায় ৮০টি বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।
স্থানীয় গণ্যমান্য একাধিক ব্যক্তিবর্গ জানান, যখন রাজাপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মোক্তার হোসেন এবং উপজেলা সহকারী (ভূমি) অফিসার আনুজা মন্ডল দায়িত্বে ছিলেন তখন তারা সঠিকভাবে যাচাই বাছাই করে আশ্রয়ণ প্রকল্প-২ এর আওতায় প্রথম পর্যায়ে ৩৩৩টি ও দ্বিতীয় পর্যায়ে ৩৭টি ঘর হস্তান্তর করা হয়েছিল তখন ইউপি সদস্যদের বিরুদ্ধে এসব অনিয়ম দূর্নীতির অভিযোগ ছিলো না।
এরপরে যখন রাজাপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নুসরাত জাহান খান এবং উপজেলা সহকারী (ভূমি) অফিসার আফরোজ ববি মিতু দায়িত্বে থেকে সঠিকভাবে যাচাই বাছাই না করে
তৃতীয় পর্যায়ে ১৪১টি এবং চতুর্থ পর্যায়ে ৮০টি ঘর হস্তান্তর করা শুরু করছেন তখন থেকেই ইউপি সদস্যদের বিরুদ্ধে উপকারভোগীদের কাছ থেকে ঘুষ নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে।
এমন কি রাত সাড়ে ৮ অথবা সাড়ে ৯টার সময় আশ্রয়ণ প্রকল্পে এসে উপকারভোগীদের মাঝে হস্তান্তর করেছেন ইউএনও এসিল্যান্ড। তখন এলাকায় গুনজন সৃষ্টি হয় দিনের বেলায় ঘর হস্তান্তর না করে রাতের বেলায় কেনো করেন৷ এর পর থেকে জানাজানি শুরু হয় লেনদেনের মাধ্যমে আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর পাওয়া যায়।
কৈবর্ত খালী গ্রামের এক পরিবারের কাছ থেকে ইউপি সদস্য সৈয়দ সুমন মীর এবং নাজমিন ইয়াসমিন মুন্নি ২০হাজার টাকার মাধ্যমে আশ্রয়ণের ঘর দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে।
কৈবর্ত খালী গ্রামের আরেক পরিবারের কাছ থেকে ইউপি সদস্য বাদশা বেপারী ১৫ হাজার টাকার মাধ্যমে আশ্রয়ণের ঘর দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে।
সুবিধাভুগি পরিবার গুলো ঘুষ নেওয়ার কথা অস্বীকার করে জানান, আমরা অনেক অসহায় থাকার মতো জায়গা নেই। টাকা ছাড়া নাকি ঘর পাওয়া যায় না তাই মেম্বারদের কাছে যাবার পরে তারা বলে ১৫-২০ হাজার টাকা দিতে হবে নয়তো ঘর পাওয়া যাবে না তাই দার দেন করে টাকা দিয়ে ঘর পেয়েছি।
ঘুষ নেওয়ার অভিযোগ অস্বীকার করে ইউপি সদস্যরা জানান, সুমন মেম্বার বলেন, কারো কাছ থেকে ঘুষ গ্রহনের বিষয়ে আমার কোনো রেকর্ড নাই। যারা অভিযোগ করেছে তারা প্রমান করতে পারবেনা।
বাদশা মেম্বার বলেন, ঘুষ নেয়ার সুযোগ নাই। স্পষ্ট যাচাই বাচাই করো ঘর দেয়া হয়। কিছু সুপারিশ কারী আছে যারা এই মিথ্যে অভিযোগ করেছে।
মুন্নি মেম্বার বলেন, ‘আমিতো ঘর বিতরণ কমিটির সদস্যই না। আমাকে কেনো টাকা দিবে। আমিতো সুপারিশও করিনাই। নির্বাচনী প্রতিপক্ষরা এসব মিথ্যে রটাচ্ছে।
উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) আফরোজ ববি মিতু বলেন, ‘অত্যন্ত নিরপেক্ষ ভাবে কয়েক দফায় যাচাই বাচাই করে ঘর বিতরন করা হয়। মেম্বারদের টাকা দিয়ে ঘর পাওয়ার সুযোগ নেই।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নুসরাত জাহান খান বলেন, প্রধানমন্ত্রীর দেয়া উপহারের ঘর বিতরণ যথেষ্ঠ নিখুত ভাবে বাছাই করে ভুমিহীন ও গৃহহীনদেরকে দেয়া হয়। ইউপি চেয়ারম্যানের দেয়া তালিকা ধরে বাছাই করা হয়। অনেক আবেদন বাতিলও করা হয়। তবুও কোনো ইউপি সদস্য বা চেয়ারম্যান যদি ঘর দেয়ার নাম করে অর্থ গ্রহন করে সেবিষয়ে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে। তবে এখনো এধরনের কোনো অভিযোগ কেউ দেয়নি।