বরিশালের হিজলা উপজেলার হিজলাগৌরব্দী ইউনিয়নের সাবেক ছাত্রলীগ সভাপতি’র বাবা, ইউপি শ্রমিক লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও কাকুরিয়া বাজারের ব্যবসায়ী মো: মোসলেহ উদ্দিন মন্টু মাঝি’র উপর সন্ত্রাসী হামলার মামলায় ৭জনকে আসামি করা হয়, ১নং আসামি ইউপি সদস্য আলাউদ্দি বেপারী ওরফে আলাউদ্দিন দফাদার ১৪ জুন দুপুরের দিকে বরিশাল র্যাব-৮ এর হাতে আটক হয়। এর পর হিজলা থানায় প্রেরণ করা হলে, থানা থেকে জেলে পাঠানো হয়।
গত ১৫ জুন কোর্টে উঠলে জামিন না মনজুর করে জেল হাজতে পাঠানো হয় এবং ১৯ জুন শুনানির তারিখ নির্ধারণ করা হয়।
বাদীপক্ষকে হুমকি:
স্থানিয় একাধিক সূত্র জানায় আলাউদ্দিন গ্রুপটি বিরোধী পক্ষকে পাষবিক নির্যাতন, হামলা মামলা সহ নানাভাবে হুমকি দিচ্ছে। ইতিমধ্যে সোশ্যাল মিডিয়ায় মাধ্যমে বাদীকে মারার জন্য হুমকি দিচ্ছে। জামিনে থাকা ২নং আসামী আব্বাস বেপারীর এফবি (Masud Rana Abbas) পোষ্টে
★Md Salem Hossain আইডি থেকে বাদীকে বলছে কিরে মিন্টু কই তুই এলাকায় আয়।
★Kawsar Shakil আইডি থেকে বাদীকে বলছে মন্টু মাঝি তুই রেডি থাক আবার হবে।
★দেওয়ান মোঃ রাসেল আইডি থেকে, বাদীকে শালার পুত সহ বিভিন্ন বাজে ভাষায় গালিগালাজ সহ হুমকি দেয়া হচ্ছে।
★১নং আসামির জামাতা Md Farhad Raaj আইডি থেকে বাদীকে বলছে খেলা হবে মন্টু মাঝির সাথে। এরকম বিভিন্ন ভাবে হুমকি দেয়া হচ্ছে।
নাম প্রকাশে অনইচ্ছুক একাধিক জন বলেন প্রধান আসামি জামিন পাওয়ার পর ওরা নাশকতা করবে, বিরোধী পক্ষের উপর হামলা করবে বলে ভয়ভীতি ছড়াচ্ছে, এতে এলাকায় আতঙ্কের সৃষ্টি হয়েছে। আরও একটি সূত্র জানায় একই মালায় জাবিনে থাকা আসামিরা এলাকার বাদীপক্ষ সহ সাধারণ মানুষকে ভয়ভীতি দেখাচ্ছে। নাশকতা করে বাদীপক্ষকে মিথ্যা মামলায় ফাঁসানোর চেষ্টা চলছে।
রিপোর্ট ৭১ এ সূত্র অনুযায়ী
আলাউদ্দিন বেপারী নেতৃত্বে তার ছেলে সুজন আহমেদ মাসুদ আহমেদ ভাই সালাউদ্দিন ও বাকের আকন ও জামাল আকন সহ ১০/১৫ জনের একটি দল দোকানে আসে এলোপাতাড়ী মারপিট করে।
নাম প্রকাশ্যে অনুচ্ছুক স্থানিয় একাধিক ব্যাক্তি জানায় ব্যবসায়ীরা জিম্মি তো দূরের কথা কোষ্টগার্ড অবৈধ কারেন্ট জাল আটক করলে আলাউদ্দিন ও তার বাহিনী কোষ্টগার্ডের উপর হামলা চালায়। ওই হামলায় কোষ্টগার্ডের এক সৈনিক আহত হয়। ইউপি সদস্য আলাউদ্দিন বেপারী মন্টু মাঝির উপর হামলার ঘটনা স্কীকার করে বলেন আমার লোকজন হামলা করেছে।
বিজয় নিউজ এর সূত্র অনুযায়ী:
স্থানীয়রা জানান, দফাদার আলাউদ্দিন গ্রুপটি এলাকায় খুবই ভয়ংঙ্কর। এরা না’পারে এমন কোন কাজ নেই। চরদখল, জমি দখল, গরুচুরি, ডাকাতি প্রতিটিতেই এদের দখল রয়েছে।
হিজলাগৌরব্দী ইউনিয়ন আ’লীগ সভাপতি হাবিব সরদার জানান আলাউদ্দিন দফাদার র্যাবের হাতে আটক এমন একটি কথা শুনেছি আমি।
আ’লীগ নেতা ফিরোজ জানান, এরা সুযোগসন্ধানী। সবসময় এরা সরকার দলের সাথে থাকে। অপরাধ অপকর্ম এদের কাজ। তার পরেও এদের কদর বেশী। এদের কারণে ত্যাগী আ’লীগ কর্মীরা সবসময় ক্ষমতার সময় দলথেকে সুবিধা বঞ্চিত থাকে। এ সব নেতারা সাধারণ চুরির ভাগিদার, গরুচুরির ভাগিদার আবার শালিশের ভাগের বড় অংশীদার। অংশীদার ডাকাতিরও। এদের ব্যাপারে মন্তব্য করে লাভ নেই।
স্থানীয় মোতালেব দেওয়ান জানান, আলাউদ্দিন দফাদার একাধারে বিএনপি। আবার স্থানীয় ইউপি সদস্য। আবার ইউনিয়ন আ’লীগ সাধারণ সম্পাদক। তার দাপটে স্থানীয়রা জিম্মি। বর্তমানে দফাদার আলাউদ্দিন মজিবুর রহমান সরোয়ারের চাচা হাবিব মালতিয়ার কয়েক শত একর জমি জোর দখলে নিজের কব্জায় রেখেছেন। হাবিব মালতিয়াকে জমিতে প্রবেশ করতে দিচ্ছেন না তিনি।
কে এই আলাউদ্দিন দফাদার : একসময়ের ধুলখোলার রাখাল রাজা, হিজলাগৌরব্দী ইউনিয়নের সাবেক দফাদার। সাবেক হিজলাগৌরব্দী ইউনিয়ন, তুখোর বিএনপি নেতা তিনি। আ’লীগের সু দিনের সুযোগসন্ধানী বর্তমান হিজলাগৌরব্দী ইউনিয়ন পরিষদ এর মেম্বার তার বিপক্ষে স্থানীয়দের রয়েছে নানা অভিযোগ। চর দখল, ভুমি দখল, চোরাগরুর ব্যবসা, ইয়াবা মাদক কারবারি নেটওয়ার্ক প্রধান বলে দাবি তাদের।
মৎস্যজীবী জালাল বেপারী, সুজন মাঝি, নজুসহ একাধিক ব্যাক্তি জানান, আলাউদ্দিন একসময় বিএনপির নেতা ছিলেন। আলীগের সুদিনে এসে তিনি এখন হিজলা গৌরব্দীর প্রভাবশালী নেতা। তিনি দলীয় এবং রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে কাকুরিয়া বাজারে বাংলাদেশ কোষ্টগার্ডের উপর হামলা চালায় এক কোষ্টগার্ড সদস্যকে আহত করেন, দল এবং দলীয় প্রভাবের কারণে সে যাত্রায় রক্ষা পান তিনি। বিষয়টি তৎকালিন সময় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হলেও অদৃশ্য কারণে স্থিমিত হয়ে যায়। নৌপুলিশের উপর হামলার বিষয়টিও তার দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয় বলে এলাকাবাসির দাবি। পুরো চর এবং চরের বেড়জাল তার দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। প্রশাসন জেনেও নাজানার ভান করছে বলে তাদের দাবি।
যে কারনে আটক:
হিজলাগৌরবদী ইউনিয়নের কাকুরিয়া বাজার ব্যবসায়ী মোঃ মোসলেহ উদ্দীন (মন্টু মাঝির) দোকানে ঢুকে ইউপি সদস্য আলাউদ্দিন বেপারী (দফাদার) ও তার সন্ত্রাসী বাহিনী তান্ডব চালিয়ে হামলা করে মন্টু মাঝিকে আহত করে। হামলা কারীরা দোকান মালিক মন্টু মাঝিকে এমপি’র লোক দাবি করে মন্টু মাঝির দোকানে ঢুকে হামলা চালিয়ে আহত করে, হত্যা চেষ্টা করে , নগদ অর্থ সহ দোকান লুট করে নির্বিগ্নে চলে যায় আলাউদ্দিন দফাদার ও তার সাঙ্গপাঙ্গরা। অবশেষে হিজলা থানায় মামলা। এ ছাড়াও তার বিরুদ্ধে রয়েছে একাধিক মামলা।
এলাকাবাসীর দাবি সন্ত্রাসী গ্রুপটি দির্ঘদিন যাবত হিজলা গৌরব্দী ইউনিয়নের কয়েকশত একর জমি জোর দখলে রেখেছে। মুল মালিকদের ক্ষমতার দাপটে দুরে সরিয়ে রাখছেন আলাউদ্দিন গ্রুপ। মন্টু মাঝির কেনা একটি জমি বিগত আ’লীগের ১৫ বছর যাবৎ জোর দখল করে ভোগ করে আলাউদ্দিন বেপারী ও তার সন্ত্রাসী বাহিনী। এই জোর দখলের জের ধরে দোকানের ভিতরে হামলা করা হয়। আবার বিএনপি ক্ষমতায় গেলে একই ধারা অব্যহত রাখে আলাউদ্দিন।
এই মামলার আসামিরা হলো:
১. ইউপি সদস্য আলাউদ্দিন বেপারী,
২. ছালাল বেপারী, উভয়ের পিতা- শাশছু বেপারী,
৩. মাসুদ রানা আব্বাস বেপারী,
৪. মোঃ সুজন বেপারী, উভয়ের পিতা- আলাউদ্দিন বেপারী,
৫. ছালেম বেপারী, পিতা- কালাম বেপারী,
৬. বাকের আকন,
৭. জামাল আকন উভয়ের পিতা- ইয়াছিন এয়াসিন আকন, সহ অজ্ঞাত নামা আরও ১৫/২০ জন।
এ ঘটনায় হিজলা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোঃ ইউনুস মিয়া জানায় আলাউদ্দিন বেপারীর বিরুদ্ধে রয়েছে একাধিক মামলা। তাকে কাকুরিয়া বাজারের ব্যবসায়ীর দোকানে হামলা ভাংচুর মারধরের ঘটনায় গ্রেফতার করা হয়েছে।
উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এনায়েত হোসেন হাওলাদার জানায় আলাউদ্দিন বেপারী হিজলা গৌরবদি ইউনিয়নে অনেক দুর্নীতি ও অনিয়মের সাথে জড়িত এর শাস্তি হওয়া প্রয়োজন।