আগামী সপ্তাহে শুরু হচ্ছে সেতু মেরামতের কাজ দুইপারে রয়েছে দুটি ফেরি একটি আছে স্ট্যান্ডবাই
কালুরঘাটে কর্ণফুলী নদীতে ফেরি চালু করেছে সড়ক ও জনপথ বিভাগ। গত শুক্রবার বিকালে সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর চট্টগ্রামের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মোহাম্মদ জাহেদ হোসেনসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে ফেরি সার্ভিস চালু করা হয়। তবে সেতু মেরামতের কাজ শুরু না হওয়ায় গতকাল বিকালেও ফেরি দিয়ে কোনো যানবাহন পারাপার হয়নি।
পারাপারের জন্য ৩টি ফেরির ব্যবস্থা করা রয়েছে। ২টি ফেরি চলাচলের জন্য দুই পাড়ে রয়েছে; আরেকটি স্ট্যান্ডবাই রাখা হয়েছে। এছাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে যানবাহনের টোল। কালুরঘাট সেতু মেরামতের কাজ শুরু হলে বর্তমানে সেতু দিয়ে চলাচলরত সব ধরনের যানবাহন নিচে ফেরিঘাটে ফেরি দিয়ে চলাচল করবে।
বহুল প্রতীক্ষিত চট্টগ্রাম–দোহাজারী–কক্সবাজার রুটে আগামী সেপ্টেম্বরে ট্রেন চলাচলের উদ্বোধনের কথা রয়েছে। এই লক্ষ্যে দোহাজারী–কক্সবাজার রেললাইনের কাজ দ্রুত গতিতে এগিয়ে চলেছে। কক্সবাজার রুটে ট্রেন চালুর জন্য প্রধান বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে শতবর্ষী কালুরঘাট সেতু। বিদ্যমান সেতু দিয়ে দক্ষিণ কেরিয়া থেকে আমদানি করা আধুনিক উচ্চগতির কোচসহ ১৫ এক্সেল লোডের ইঞ্জিন প্রবেশ করতে পারবে না।
জরাজীর্ণ সেতুটি লোড নেবে না বলে জানিয়েছেন রেলওয়ের সংশ্লিষ্ট প্রকৌশলীরা। তাই রেল কর্তৃপক্ষ সেতুটি মেরামতের উদ্যোগ নিয়েছেন। বুয়েটের পরামর্শ অনুযায়ী সেতুটি মেরামতের জন্য গত ১৮ জুন ম্যাক্স ইনফ্রাস্ট্রাকচার লিমিটেডের চুক্তি স্বাক্ষর হয়। ৪৩ কোটি টাকায় এই প্রতিষ্ঠানটি কালুরঘাট সেতু দিয়ে দক্ষিণ কোরিয়া থেকে আমদানিকৃত উচ্চগতির কোচসহ ১৫ এক্সেল লোডের ইঞ্জিন নিয়ে ট্রেন কক্সবাজার যাওয়ার উপযোগী করে তুলবে।
রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের প্রধান প্রকৌশলী মো. আবু জাফর মিঞা আজাদীকে বলেন, কালুরঘাটে ফেরি সার্ভিস চালু হয়েছে। আগামী সপ্তাহে আনুষ্ঠানিকভাবে পুরোদমে সেতু মেরামতের কাজ শুরু হবে। দিন তারিখ ঠিক করে আগে থেকেই সেতু দিয়ে গাড়ি চলাচল বন্ধের বিজ্ঞপ্তি দেব।
এদিকে দোহাজারী কক্সবাজার রেললাইনের ৮৬ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। ১০১ কিলোমিটার রেললাইনের মধ্যে এ পর্যন্ত ৮২ কিলোমিটার রেললাইন বসে গেছে বলে জানিয়েছেন দোহাজারী কক্সবাজার রেললাইন প্রকল্পের অতিরিক্ত প্রকল্প পরিচালক প্রকৌশলী মুহম্মদ আবুল কালাম চৌধুরী। তিনি বলেন, সেপ্টেম্বরের শেষের দিকে দোহাজারী কক্সবাজার রুটে আমরা ট্রেন চালু করব। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর উদ্বোধনের কথা রয়েছে। এই লক্ষ্যে কাজ চালিয়ে নিচ্ছি।
তিনি জানান, কক্সবাজার প্রধান স্টেশন বিল্ডিংটি ঝিনুকের আদলে তৈরির কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। ডুলাহাজারা স্টেশনের কাজ শেষ হয়েছে। দোহাজারী স্টেশনের কাজ আগস্টে শেষ হবে। উদ্বোধনের আগে চকরিয়া ও রামু স্টেশনের কাজও শেষ হবে। সেপ্টেম্বরে উদ্বোধন হয়ে যাবে। কিছু ফিনিশিংয়ের কাজ বাকি থাকলে সেগুলো আস্তে আস্তে করা যাবে।
এদিকে ফেরি সার্ভিস চালুর সাথে সাথে ফেরি দিয়ে পারাপারে যানবাহনের টোল আদায়ের হারও নির্ধারণ করা হয়েছে। সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর চট্টগ্রাম সড়ক সার্কেলের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মোহাম্মদ জাহেদ হোসেন আজাদীকে বলেন, সেতু মেরামতের কাজ শুরু হলে সকল যানবাহন ফেরি দিয়ে চলাচল করবে। ফেরি পারাপারের জন্য মোট তিনটি ফেরির ব্যবস্থা রয়েছে। ২টি ফেরি সবসময় চলাচল করবে এবং ১টি স্ট্যান্ডবাই থাকবে। ফেরি পারাপারের টোল আদায়ের হারও নির্ধারণ করা হয়েছে।
ট্রেইলার পারাপারে টোল নেয়া হবে ৫৬৫ টাকা, হেভি ট্রাক ও কাভার্ড ভ্যান ৪৫০ টাকা, ২ এক্সেল বিশিষ্ট মিডিয়াম ট্রাক ২২৫ টাকা, বড় বাস ২০৫ টাকা, মিনি ট্রাক ১৭০ টাকা, পাওয়ার ট্রিলার–ট্র্যাক্টর ১৩৫ টাকা, মিনিবাস (৩০ জনের) ১১৫ টাকা, মাইক্রোবাস, পিকআপ, জিপ ৯০ টাকা, প্রাইভেটকার ৫৫ টাকা, সিএনজি টেক্সি ২৫ টাকা, মোটরসাইকেল ১০ টাকা এবং রিকশার টোল নির্ধারণ করা হয়েছে ৫ টাকা।
ফেরি কার্যক্রম শুরু করার সময় উপস্থিত ছিলেন সওজ অধিদপ্তর চট্টগ্রাম সড়ক সার্কেলের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মোহাম্মদ জাহেদ হোসেন, সওজ মনছুরাবাদ কারখানা বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী সিফাত আফরিন, সওজ চট্টগ্রামের উপ–বিভাগীয় প্রকৌশলী নিজাম উদ্দিন, সওজ ফটিকছড়ির উপ–বিভাগীয় প্রকৌশলী মো. আব্দুল্লাহ আল নোমান পারভেজ, সওজ মনছুরাবাদ কারখানা উপ–বিভাগের উপ–বিভাগীয় প্রকৌশলী মো. আব্দুল মালেক চৌধুরী, সওজ চট্টগ্রামের সহকারী প্রকৌশলী সেগুন প্রসাদ বড়ুয়া প্রমুখ।