সুনামগঞ্জ জেলার তাহিরপুর উপজেলার সীমান্ত নদী যাদুকাটায় টোল আদায়ের নামে অবৈধ চাঁদাবাজির অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় একটি প্রভাবশালী চাঁদাবাজ চক্রের বিরুদ্ধে।
জানা যায়, যাদুকাটা নদীর লাউড়েরগড়-ঘাগড়া নৌকা ঘাটটি আগ্রহী দরদাতা না পাওয়ায় ও মামলা সংক্রান্ত জটিলতা দেখিয়ে উপজেলা প্রশাসন চলতি বছরের পহেলা বৈশাখ থেকে ওই ঘাটে খাস কালেকশনের মাধ্যমে টোল আদায়ের জন্য তাহিরপুর সদর ইউনিয়ন ভূমি অফিসকে দায়িত্ব দেওয়া হয়।
পরে ওই ঘাটের সর্বোচ্চ দরদাতার হাইকোর্টের রিট পিটিশন আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে গত ২৫ জুন লাউড়েরগড়-ঘাগড়া নৌ-ঘাটে খাস কালেকশনের মাধ্যমে টোল আদায় বন্ধের আদেশ দেয় উপজেলা প্রশাসন।
কিন্তু টোল আদায় বন্ধে উপজেলা প্রশাসনের আদেশ থাকার পরেও চাঁদাবাজ চক্রটি গত দুই মাসেরও অধিক সময় ধরে প্রশাসনকে বৃদ্ধাঙুলি দেখিয়ে যাদুকাটা নদীর লাউড়েরগড়-ঘাগড়া নৌকা ঘাটে বালু-পাথরবাহী নৌপরিবহন থেকে জোরপূর্বকভাবে টোল আদায়ের নামে চাঁদাবাজি করে আসছে। এ সময় নৌ-শ্রমিকরা টাকা না দিলে তাদের মারধর করে টাকা আদায় করছে চাঁদাবাজ চক্রটি। ওই চাঁদাবাজ চক্রটি প্রতিদিন জোরপূর্বক প্রতি নৌকা থেকে চাঁদা আদায় করছে ৩ হাজার টাকা পর্যন্ত।
চাঁদাবাজ চক্রটি স্থানীয়ভাবে প্রভাবশালী হওয়ায় নৌ-মালিক, শ্রমিক ও বালুপাথর ব্যবসায়ীরা তাদের বিরুদ্ধে মুখ খুলতে সাহস পায়না। কথা বললেও চলে জোরজুলুম, মারপিট। এমনকি আটকে রাখা হয় নৌকা, নিয়ে যাওয়া হয় নৌকায় থাকা বিভিন্ন মালামাল এমন অভিযোগ নৌ-মালিক, শ্রমিক ও ব্যবসায়ীদের।
নদী-বাংলা নৌকার সুকানি সেলিম মিয়া বলেন, ঘাগড়া-লাউড়েরগড় ঘাটে আমার কাছ থেকে ৩ হাজার টাকা টোল দাবি করা হয়। আমি এত টাকা দিতে অপরাগতা জানালে তারা আমাকে মারধর করার হুমকি দেয়। মারধরের ভয়ে তাদের চাহিদা মতো টাকা দিতে বাধ্য হয়।
অভিযোগ উঠেছে এই চাঁদাবাজির সাথে যুক্ত রয়েছেন সুনামগঞ্জ জেলা পরিষদের সদস্য ও আওয়ামীলীগ নেতা মজিবুর রহমান তালুকদার, তাহিরপুর উপজেলার যুবলীগের সিনিয়র যুগ্ম আহবায়ক রায়হান উদ্দিন রিপনের লোকজন। তাদের নেতৃত্বে ১০/১৫ জনের একটি সন্ত্রাসী গ্রুপ ঘাগড়া-লাউড়েরগড় নৌ-ঘাটে টোল আদায়ের নামে চাঁদাবাজি করে আসছে। গত দুই মাসে এ চাঁদাবাজ চক্রটি এ নৌঘাট থেকে অন্তত কয়েক কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন।
এ প্রসঙ্গে উপজেলার যুবলীগের সিনিয়র যুগ্ম আহবায়ক রায়হান উদ্দিন রিপন বলেন, আমি এসবের কিছুই জানিনা। আমার প্রতিপক্ষের লোকজন এসব দুর্নাম ছড়াচ্ছে। আমার কোনো লোকজন এর সঙ্গে জড়িতও না।
এ নিয়ে বক্তব্য জানতে জেলা পরিষদের সদস্য মজিবুর রহমান তালুকদারের ব্যবহৃত মোবাইল নম্বরে (০১৭১৩২২৬০৩০) একবাধিকবার কল করেও তা বন্ধ পাওয়া গেছে। যেকারনে তার বক্তব্য জানা সম্ভব হয়নি।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সুপ্রভাত চাকমা বলেন, ঘাগড়া-লাউড়েরগড় নৌঘাটে আদালতের আদেশে টোল আদায় বন্ধ রয়েছে। এখন কেউ যদি এর নাম করে চাঁদাবাজির কাজে জড়িত হন তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।