শিরোনাম:
ফরিদপুরে স্কুলপড়ুয়া শিশুকে জ্যান্ত কবর দিয়ে হত্যার চেষ্টা কিশোর গ্যাংয়ের গেপালগঞ্জে ৩ দিনব্যাপী কৃষি মেলা সমাপ্ত নওগাঁ এডুকেশন  ফাউন্ডেশন এর ৫ম তম বৃত্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত  নওগাঁয় প্রিপেইড মিটারে ভোগান্তী; স্থাপন বন্ধের দাবী চট্টগ্রামে ইয়াবাসহ প্রেমিক প্রেমিকা আটক এয়ারপোর্ট থানাপুলিশের অভিযানে অটো রিক্সা ছিনতাইকারী চক্রের দুই সদস্য আটক কেয়ার একাডেমির উদ্যোগে  ছাত্রছাত্রীদের বৃত্তি প্রদান বোয়ালমারীতে মিফতাহুল জান্নাহ্ মহিলা মাদরাসার উদ্বোধন অনুষ্ঠিত বোয়ালমারীতে চিকিৎসকের অবহেলায় প্রাণ গেল শিক্ষার্থীর চট্টগ্রামে ট্রেনের ধাক্কায় ক্ষতিগ্রস্ত গাড়িটি ‘ওসির নির্দেশে’ ছেড়ে দেওয়ার হলো মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার দাবীতে মানববন্ধন ।

জমেছে দক্ষিণাঞ্চলের সবচেয়ে বড় নৌকার হাট দাম বেশি তবে লাভ কমেছে নৌকা কারিগরদের

মো. নাঈম হাসান ঈমন, ঝালকাঠি প্রতিনিধিঃ
  • আপডেটের সময় : শুক্রবার, ২৫ আগস্ট, ২০২৩
41.2kভিজিটর


ঝালকাঠিতে বর্ষা মৌসুমে পানি বৃদ্ধি হওয়ায় নৌকার কদর বেড়েছে। আটঘর-কুড়িয়ানা ভিমরুলী পেয়ারা বাগান থেকে পেয়ারা সংগ্রহ করে বাজারজাত করার কাজে নৌকার বিকল্প নেই। এছারা ধান কাটাসহ বিভিন্ন ফসল সংগ্রহ কাজে নৌকা ব্যবহার করা হয়। তাই দক্ষিনাঞ্চলের সবচেয়ে বড় নৌকারহাট পিরোজপুর জেলার নেছারাবাদ উপজেলা সদর থেকে পাঁচ কিলোমিটার পূর্ব দিকে আটঘর-কুড়িয়ানা ইউনিয়নে।

বছরের জ্যৈষ্ঠ থেকে ভাদ্র মাস পর্যন্ত নৌকা কেনাবেচায় ব্যস্ত হয়ে ওঠে এই হাট। এই নৌকার চাহিদা মেটাতে দিন রাত ব্যস্ত সময় পার করছেন নৌকা তৈরির কারিগররা। বর্ষা মৌসুম এলেই ঝালকাঠিসহ দক্ষিনাঞ্চলের নদী-নালা, খাল-বিল বৃষ্টিতে এলাকায় নৌকার কদর বেড়ে যায়। তখন কৃষকদের প্রয়োজনীয় একমাত্র বাহন নৌকা।

বর্ষা মৌসুম এলেই সন্ধ্যা নদীর শাখা আটঘর-কুড়িয়ানা খালের পাড়ে আধা কিলোমিটার এলাকাজুড়ে সপ্তাহের প্রতি শুক্রবার বসে ডিঙিনৌকার ভাসমান এই হাট। সকাল ৮টা থেকে বিকেল পর্যন্ত খালের পাড়ে এবং সড়কের দুই পাশে ডিঙিনৌকা সাঁড়ি বেধে সাজিয়ে বসেন বিক্রেতারা। স্থানীয় কৃষক, জেলে, গৃহস্থরা ছাড়াও বরিশাল, বানারীপাড়া, উজিরপুর, ঝালকাঠি, পিরোজপুরের কাউখালী, নাজিরপুর থেকে মানুষ আটঘরের হাটে আসেন নৌকা কিনতে। ২ থেকে ৬ হাজার টাকায় এখানে মেলে কাঠের তৈরি ছোট ডিঙিনৌকা।

নৌকায় মূলত পেয়ারা, কচু, চিচিঙ্গা, লেবু, ঝিঙা, আমড়া, কলাসহ নানা কৃষিপণ্য বহন করা হয়। বিভিন্ন স্থান থেকে আসা পাইকাররা নৌকা থেকেই সেগুলো কিনে নিচ্ছেন। স্থানীয় নৌকার কারিগররা জানান, কোষা মূলত নৌকার ক্ষুদ্র সংস্করণ। অন্যান্য নৌকার মতো এ গুলোর কাঠ বড় থাকে না।

অঞ্চলবিশেষে এর আকারে কম-বেশি দেখা যায়। এর আদর্শ দৈর্ঘ্য নয় মিটার। কখনো কখনো ছয় মিটার দৈর্ঘ্যের কোষাও দেখা যায়। এই হাটে দুই থেকে পাঁচ হাজার টাকা দামের নৌকা পাওয়া যায়। কাঠের মান, আকার অনুযায়ী দাম। নৌকার খোলে পণ্য পরিবহনের জন্য দুটি বাক্স আকারের আলাদা ডেক রয়েছে। মাঝখানটায় পানি জমার জন্য ফাঁকা। পানি সেচের সুবিধার্থে নৌকাগুলোর এমন ডিজাইন করা হয়েছে।

হাটে নৌকা কিনতে আসা বানারীপাড়ার আসলাম সরদার বলেন, নৌকা কিনতে প্রতিবছর বর্ষা মৌসুমে এই হাটে আসি। এক বছর পর ডিঙিনৌকা নষ্ট হয়ে যায়। কৃষিকাজ ও মাছ ধরার জন্য নৌকা ব্যবহার করি।

নৌকা ব্যবসায়ী স্বরূপকাঠির দ্বীন ইসলাম বলেন, আগে বাবা বর্ষা মৌসুমে প্রতিবছর এই হাটে নৌকা কেনাবেচা করতেন। এখন আমি এই ব্যবসা শুরু করেছি। প্রতি বছরের তুলনায় এবার নৌকা বেশি দামে কিনে বেশি দামে বিক্রি করতে হচ্ছে। কিন্তু ব্যবসায়ীদের বারে না লভ্যাংশ।

ব্যবসায়ী তাহের উদ্দিন বলেন, হাটের দিন খুব সকালে কারিগরদের কাছ থেকে নৌকা কিনে ট্রলারে করে হাটে নিয়ে আসেন। বেচাকেনা ভালো হলে প্রতি হাটে ৩৫থেকে ৪৫টি নৌকা বিক্রি হয়। নৌকাপ্রতি লাভ হয় ৫০০ থেকে ১ হাজার টাকা। কোন কোন সময় আবার লোকসানও গুনতে হয়।

আটঘর-কুড়িয়ানা নৌকার হাটের ইজারাদার আবদুর রহিম বলেন, আগে প্রতি বছর নৌকা বিক্রির মৌসুমে প্রতি হাটে ১০০০ থেকে ১২০০টাকায় নৌকা বিক্রি হতো। এবছর নৌকা কিছু কম বিক্রি হচ্ছে। আগের তুলনায় এবছর নৌকার দাম অনেক বেশি।

নৌকা তৈরির কারিগর আলতাফ মিয়া, সোহরাফ, সুখরঞ্জন মিস্ত্রি বলেন, কড়াই, চাম্বল ও মেহগনি কাঠ দিয়ে নৌকা তৈরি করা হয়। বিক্রি বাড়লেও এবার কমেছে লাভের অংক। আগে সুন্দরী কাঠ দিয়ে নৌকা তৈরি করতাম। ওই সময় বেশি লাভ হতো। এখন সুন্দরী কাঠ পাওয়া যায় না তেমন। বিগত বছরের তুলনায় এবছর দাম বেশি। তবে কাঠ, লোহাসহ সবকিছুর খরচ বেড়ে যাওয়ায় লাভ কমেছে।

নৌকা তৈরির কারিগর ইউসুফ আলী, বিপুল বিশ্বাস বলেন, বাপ-দাদার আমল থেকে আটঘর-কুড়িয়ানা হাট বসে। ধীরে ধীরে হাটের ব্যাপ্তি বেড়েই চলেছে। কিন্তু উন্নতি হয়নি কারিগরদের অর্থনৈতিক অবস্থার। কাঠ, লোহাসহ নৌকা তৈরির উপকরনের দাম বাড়লেও সেই তুলনায় নৌকার দাম বাড়ে নায়।

তাছাড়া নিজস্ব পূঁজি না থাকায় ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে অগ্রিম টাকা নিয়ে উপকরণ কিনতে হয়। যে কারণে তেমন দাম পাওয়া যায় না। তবুও প্রতি হাটে তৈরি করা নৌকা নিয়ে আসি। বর্তমানে এ পেশায় থেকে সংসার চালানো কঠিন হয়ে পড়েছে।

ঝালকাঠি বিসিক শিল্প সহায়ক কেন্দ্রের উপ-ব্যাবস্থাপক এইচএম ফাইজুর রহমান বলেন, নৌকা তৈরির কারিগরদের পূঁজি সংকট আছে। এ সমস্যা সমাধানের জন্য তাদেরকে বিসিক থেকে স্বল্প সুদে মৌসুমী ঋণ দেওয়ার একটি প্রকল্প আছে। তারা যদি ঋণের জন্য আসে তাদের যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

নিউজটি শেয়ার করুন

এই বিভাগের আরও খবর
কপিরাইট ©২০০০-২০২২, WsbNews24.com এর সকল স্বত্ব সংরক্ষিত।
Desing & Developed BY ServerNeed.Com
themesbazarwsbnews25
x