কুড়িগ্রামের চিলমারী উপজেলার নয়ারহাট ইউনিয়নের উত্তর খাউরিয়ার চর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহে বিলীন হয়ে যায় নদীগর্ভে। বিদ্যালয়টির নতুন ভবন নির্মাণ হয়নি এখনও। এর মধ্যেই রৌমারী উপজেলায় একটি কক্ষে শিক্ষার্থীদের পাঠদান শুরু করেছেন তিন শিক্ষক।
এমন বাস্তবতায় জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার নবেজ উদ্দিন সরকার বলেছেন, এক উপজেলার বিদ্যালয় অন্য উপজেলায় নেয়ার কোনো সুযোগ নেই।
চিলমারী উপজেলার স্থানীয়দের ভাষ্য, তিন শিক্ষক রৌমারী উপজেলার চর খেদাইমারি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাশে উত্তর খাউরিয়ার চর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের জন্য ঘর নির্মাণ করেন।
চিলমারী উপজেলার চর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জুলেখা ইয়াসমিন ও এক সহকারী শিক্ষক উত্তর খাউরিয়ার চরেই শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করছেন, তবে বিদ্যালয়ের বাকি সহকারী শিক্ষক আবু হোসেন মোল্লা, লায়লা খাতুন ও মোবারক হোসেনের নেতৃত্বে খেদাইমারিতে নবনির্মিত স্কুলকক্ষেই পাঠদান চলছে।
উত্তর খাউরিয়ার চরের শিক্ষার্থী বিজয় শেখ বলে, ‘আমরা আমাদের গ্রামেই স্কুল চাই। খেদাইমারি গ্রামে স্কুল হলে আমাদের ব্রহ্মপুত্র নদের দুটি শাখা নদী পার হয়ে যেতে হবে। এতে করে আমাদের পড়াশোনা বন্ধ হয়ে যাবে।’
একই এলাকার বাসিন্দা আব্দুর রাজ্জাক, আবদুল মতিন, জোলেখাসহ অনেকেই দাবি করেন, স্কুলটি তাদের গ্রামেই পুনির্নির্মাণ করতে হবে।
রাজ্জাক বলেন, ‘এটা আমাদের ভোটকেন্দ্র। আমাদের শিশু সন্তানরা তাদের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে অন্য উপজেলায় গিয়ে কেন পড়াশোনা করবে? বিদ্যালয়ের তিন সহকারী শিক্ষক তাদের সুবিধার্থে এ কাজ করেছেন।’
প্রধান শিক্ষক জুলেখা ইয়াসমিন বলেন, ‘স্কুলটি ভেঙে যাওয়ার পর খাউরিয়া চরের বাসিন্দা মোন্নাফ মিয়ার বাড়িতে কার্যক্রম ও পরীক্ষা নেয়া হচ্ছে। এ ছাড়াও বিদ্যালয়ের তিন সহকারী শিক্ষক লোকবল দিয়ে রৌমারী উপজেলার খেদাইমারি গ্রামে বিদ্যালয়ের টিনসহ অন্যান্য আসবাবপত্র নিয়ে ঘর নির্মাণ করেছেন। এ বিষয়ে উপজেলা ও জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা স্যারকে অবহিত করা হয়েছে।’
বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি মাহফুজা আক্তার বলেন, ‘বিদ্যালয়টি স্থানান্তরের বিষয়ে আমাকে অবগত না করেই রৌমারীতে নিয়ে যায় তিন সহকারী শিক্ষক। বিষয়টি উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তাকে জানানো হলেও তিনি কোনো ব্যবস্থা নেননি।’
নয়ারহাট ইউনিয়ন কমান্ডার মুক্তিযোদ্ধা ইনসাব আলীর অভিযোগ, ‘এ ব্যাপারে উপজেলা শিক্ষা অফিসারকে বললে তিনি আমার সঙ্গে খারাপ আচরণ করেন।’
সহকারী শিক্ষক আবু হোসেন মোল্লা বলেন, ‘বিদ্যালয়টি রৌমারী উপজেলার সীমানায় প্রায় ৩৩ বছর থেকে ছিল। বর্তমান নয়ারহাট ইউপি চেয়ারম্যান আসাদুজ্জামান আসাদ ভাই বিদ্যালয়টি স্থানান্তর করেছেন। আমরা তিন শিক্ষক সেখানে কার্যক্রম পরিচালনা করছি।’
নয়ারহাট ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আসাদুজ্জামান আসাদ বলেন, ‘বিদ্যালয়টি ভেঙে যাওয়ার কারণে শিক্ষার্থীদের পরীক্ষা ও কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছিল। পরে উপজেলা সহকারী শিক্ষা অফিসার জাকির হোসেনের অনুরোধে সাময়িকভাবে শিক্ষার্থীদের পরীক্ষা নেয়ার জন্য খোদাইমারি এলাকায় একটি ঘর তোলা হয়। পানি কমে গেলে বিদ্যালয়টি পুনর্নির্মাণ করা হবে।’
চিলমারী উপজেলা শিক্ষা অফিসার আবু সালেহ্ সরকার বলেন, ‘সাময়িকভাবে বিদ্যালয়টি স্থানান্তরের জন্য অন্য উপজেলায় নেয়ার পরামর্শ দেয়া হয়। পানি কমে গেলে বিদ্যালয়ের নতুন অবকাঠামো নির্মাণ করা হবে উত্তর খাউরিয়া এলাকাতেই।’
এ বিষয়ে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার নবেজ উদ্দিন সরকার বলেন, ‘এক উপজেলার বিদ্যালয় অন্য উপজেলায় নেয়ার কোনো সুযোগ নেই। এ বিষয়ে অভিযোগ পেয়েছি। তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। প্রতিবেদন পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।’