সুনামগঞ্জের বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার ফতেপুর ইউনিয়নের সুনামধন্য প্রাচীনতম বিদ্যাপীঠ মুরারি চাঁদ উচ্চ বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক পবিত্র ভুষন তালুকদার'কে শারীরিকভাবে লাঞ্চিত করে জোরপূর্বক পদ থেকে সরিয়ে দিয়ে সহকারী শিক্ষক সঞ্জীবন রায় ঐ পদে বসানোর প্রতিবাদে এবং ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি আব্দুল হেকিমের নিয়োগ বাণিজ্যের প্রক্রিয়াসহ ম্যানেজিং কমিটি বাতিলের দাবিতে শিক্ষার্থীদের মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়েছে।
রবিবার দুপুরে মুরারি চাঁদ উচ্চ বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি আব্দুল হেকিম ও তাঁর পকেটে থাকা ম্যানেজিং কমিটি বাতিলের দাবিতে বিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের আয়োজনে বিদ্যালয়ের সামনে এ মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়।
মানববন্ধনে বিভিন্ন এলাকা থেকে প্রতিষ্ঠানের প্রাক্তন ও নবীন শিক্ষার্থীসহ,ম্যানেজিং কমিটির সদস্যসহ এলাকার লোকজন অংশগ্রহণ করেন।
প্রতিষ্ঠানের প্রাক্তন শিক্ষার্থী রূপম তালুকদারের সঞ্চালনায় বক্তব্য রাখেন, স্কুল পরিচালনা কমিটির সদস্য ডা: বাদল বর্মন, প্রাক্তন শিক্ষার্থী ও সাংবাদিক দ্বিপাল ভট্রাচার্য্য,ইউনিয়ন যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক মতিন মিয়া, স্কুলের প্রাক্তন শিক্ষার্থী ও ইউনিয়ন কৃষক লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক বাবলু দাস, প্রাক্তন শিক্ষার্থী সবুজ মিয়া,মহিবুর রহমান, পিনাক তালুকদার, প্রলয় তালুকদার রুবেল, রাজীব বিশ্বাস, তোফাজ্জল মল্লিক, ধীরাজ দাস প্রমুখ।
বক্তারা বলেন, ২০২২ সালের ২২ নভেম্বর মাসে সিন্ডিকেটের মাধ্যমে তৈরি হওয়া ম্যানেজিং কমিটি গঠন করে কমিটির স্বশিক্ষিত সভাপতি ইউপি সদস্য আব্দুল হেকিম'র নেতৃত্বে একটি চক্র নীতিমালা লংঘন করে তার নির্দেশে ম্যানেজিং কমিটির মোট ৮ সদস্যর মধ্যে ৫জন মিলে গত পহেলা সেপ্টেম্বর প্রতিষ্ঠানের প্রবীন ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক পবিত্র ভূষণ তালুকদারকে ক্লাস চলাকালীন সময়ে তার পক্ষে প্রবেশ করে জিম্মি করে পদ থেকে জোরপূর্বক অপসারণ করা হয়। সেই জায়গাতে অন্যায়ভাবে বিদ্যালয়ের সরকারী শিক্ষক মাদকসেবী, ইভটেজার সঞ্জীবন রায়কে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব দেয়ায় ফোসেঁ উঠেন শিক্ষার্থীরা।
তারা আরো বলেন কমিটির স্বশিক্ষিত সভাপতি আব্দুল হেকিম নীতিমালা না মেনেই নিয়োগ বানিজ্যে করার পায়ঁতারার অংশ হিসেবে এই বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক পদে ১ জন, সহকারী প্রধান শিক্ষক পদে ১জন,অফিস সহকারী পদে ২জন,কম্পিউটার অপারেটর,ল্যাব পদে ২ এবং নিরাপত্তা প্রহরী পদে ২জন নিয়োগ দেয়ার প্রক্রিয়া করতে চাইলে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক পবিত্র ভূষন তালুকদার এতে বাধা প্রধান করেন। এতে কমিটির সভাপতির সাথে পবিত্র ভূষন তালুকদারের মনোমালিন্য দেখা দেয়ায় তাকে বিদ্যালয় থেকে জোরপূর্বক অপসারণ করা হয় বলে বক্তারা উল্লেখ করেন।
তারা আরো বলেন,কমিটির সভাপতি নানানভাবে বিদ্যাপীঠকে অস্থির করে তলুতে এবং ক্ষমতার দাপঠে বিদ্যালয়ে শিক্ষা কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। এদিকে স্কুলের ম্যানিজিং কমিটির স্বশিক্ষিত সভাপতি আব্দুল হেকিম কোনো প্রতিষ্ঠানে পড়াশোনা করেননি বলে জানান বক্তারা। এছাড়া ও কমিটির সভাপতির বিরুদ্ধে অনিময় আর দূর্নীতির বিরুদ্ধে প্রশাসনে বিভিন্ন সময় লিখিত অভিযোগ ও করেছেন এলাকাবাসী বলে দাবী তাদের।
স্কুল ম্যানেজিং কমিটির সদস্য ডা: রবীন্দ্র বর্মন জানান,' বর্তমান কমিটি নানান অপকর্মের সঙ্গে যুক্ত আর এই অপকর্মের সঙ্গে কিছু শিক্ষক যুক্ত হচ্ছেন। তাই প্রবীন শিক্ষক পবিত্র ভূষন তালুকদারকে স্বপদে পূনরায় বহাল করে এবং ম্যানেজিং কমিটি বাতিলসহ নিয়োগ প্রক্রিয়া বন্ধ করে নীতিমালা অনুসরণ করেই স্কুলের সুষ্ঠু পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে সরকারের শিক্ষামন্ত্রী এবং প্রশাসনের সুদৃষ্টি কামনা করছেন শিক্ষার্থীরা।
বক্তারা এসময় আরো বলেন ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক হতে অতি উৎসাহী জুনিয়র শিক্ষক সঞ্জীবন রায় একজন গাঁজা সেবনকারী এবং মেয়ে শিক্ষার্থীদের ইনবক্সে নানান অনৈতিক কথা-বার্তা বলে ইভটিজিং করেন বলে দাবী করেন। এছাড়াও এই ম্যানেজিং কমিটির সভাপতির সাথে যুক্ত হয়ে স্কুলের মৌলভী শিক্ষক আলামিন ক্লাসের মধ্যে উস্কানিমূলক কথাবার্তা বলে শিক্ষার পরিবেশ বিনষ্ট সহ বর্তমান ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক পবিত্র ভূষণ তালুকদারকে মিথ্যা অপবাদ দিচ্ছে এবং নানান ভাবে অপদস্থ করে যাচ্ছেন বলে জানান।
এ ব্যাপারে প্রতিষ্ঠানের অপসারিত ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক পবিত্র ভূষন তালুকদার জানান,ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি আব্দুল হেকিম প্রতিষ্ঠানে নীতিমালা লংঘন করে নিয়োগ বানিজ্য করতে চাইলে আমি বাধা প্রদান করার কারণে আমাকে জোরপূর্বক পদ থেকে অপসারণ করা হয়েছে। তিনি বলেন নিয়ম হলো আমার কোন দোষক্রটি থাকলে কমিটির দায়িত্ব ছিল আমাকে প্রথমে সোকজ করবে তারপরে জেলা প্রশাসক অথবা উপজেলা নির্বাহী অফিসার কিংবা মাধ্যমিক শিক্ষা আফিসার বরাবরে লিখিত অফিযোগ দিতে পারতেন তদন্তে আমার কোন দোষ থাকলে আমার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া যেত। কিন্ত সভাপতি সেটা না করে নীতিমালা লংঘন করে সেটা অন্যায়ভাবে করেছেন বলে তিনি দাবী করেন।
এ ব্যাপারে মুরারিচাদঁ উচ্চ বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি মো. আব্দুল হেকিম তার বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগ মিথ্যা দাবী করেন বলেন, আমি ৮মাস ধরে বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতির দায়িত্ব পালন করে আসছি,আমি ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক পবিত্র ভূষন তালুকদারকে বিদ্যালয়ের আয়ব্যয়ের হিসাব দেয়ার পাশাপাশি বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক নিয়োগের বিষয়টি বলায় তাকে স্বপদে বহাল রাখার অনুরোধ করেন বলে জানান তিনি। পরবর্তীতে কমিটির সংখ্যাগরিষ্ট ৫জন সদস্যকে নিয়ে পবিত্র বাবুর জায়গাতে সহকারী শিক্ষক সঞ্জীবন রায়কে ভারপ্রাপ্ত শিক্ষকের দাযিত্ব দেয়া হয়েছে বলে তিনি জানান।
এ ব্যাপারে বিশ্বম্ভরপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার সাদি-উর রহিম জাদিদ ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে জানান,ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষককে যদি অন্যায়ভাবে অপসারণ করা হয়ে থাকে তিনি অভিযোগ দিলে বিষয়টি তদন্ত সাপেক্ষে দোষীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত © ওয়েবসাইট এর কোনো লেখা, ছবি অনুমতি ছাড়া কপি করা নিষেধ