পিরোজপুর জেলার ভান্ডারিয়া থানার জুনিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সভাপতি ও প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে তিন ধাপে ৬ জন চতুর্থ শ্রেণী কর্মচারী নিয়োগ দিয়ে ৪২ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ উঠেছে।
জুনিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয় ঘুষ দিয়ে চাকরি পাওয়া ৬ জন কর্মচারীর মধ্যে পাঁচজনই তাদের দেয়া ঘুষের টাকা সভাপতি ও প্রধান শিক্ষকের কাছে ফেরত চেয়েছেন।
জুনিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সভাপতি ও প্রধান শিক্ষক ৪২ লক্ষ টাকা ঘুষ নিয়ে ৬ জন কর্মচারী নিয়োগ দেওয়ায় ক্ষিপ্ত হয় অত্র প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক এবং এলাকাবাসী ও সচেতন মহল। তারই ধারাবাহিকতায় জনৈক দুইজন ব্যক্তি সভাপতি ও প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বরাবর লিখিত আকারে অভিযোগ দেন। অধিদপ্তরের অভিযোগ নাম্বার ৪৮৩০,৪৮৩১।
জুনিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও সভাপতি প্রতিষ্ঠানে নিয়োগ দিয়ে ৪২ লক্ষ টাকার ঘুষ বাণিজ্যের বিষয়টি নিয়ে বরিশাল আঞ্চলিক অফিসের উপ-পরিচালক আনোয়ার হোসেনের কাছেও পৃথক দুইটি অভিযোগ দায়ের করেছেন ঘুষ বাণিজ্যে ক্ষুব্ধ সচেতন নাগরিক।
অভিযোগ সূত্রে ও অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে জানা যায়, ঘুষ দিয়ে চাকরি নেওয়া ৬ জন কর্মচারী পথে বসতে চলেছেন।
ঠিক সেই সময়ই আবারও অএ প্রতিষ্ঠানের বেপরোয়া প্রধান শিক্ষক ও সভাপতি কর্মচারীদের থেকে বাড়তি টাকা ও উপঢৌকন দাবি করেন।
জুনিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের আয়া পদে নিয়োগ পাওয়া আয়শা আক্তার (আয়া)গণমাধ্যম কর্মীদের কাছে অভিযোগ করে বলেন আমার কাছ থেকে সভাপতি ও প্রধান শিক্ষক ৭ লক্ষ টাকা নিয়েছেন যা আমার স্বামীর ও বাবার জমি বন্ধক রেখে ও বিভিন্ন জায়গা থেকে লাভে টাকা এনে দিয়েছি। এরপরেও প্রধান শিক্ষক আমার কাছে একটি মোবাইল ফোন কিনে দিতে বলে আমি তাতে রাজি না হলে আমার সাথে সভাপতি ও প্রধান শিক্ষক অশোভনীয় আচরণ করে প্রতিষ্ঠানে বসে।নিয়োগের সময় এত টাকা লাগবে কিসে জানতে চাইলে সভাপতি ও প্রধান শিক্ষক বলেন যারা নিয়োগ বোর্ডে থাকবে তাদেরকে টাকা দিয়ে ম্যানেজ করতে হবে তোদের টাকা একবারে উপর মহল পর্যন্ত দিতে হবে তাই এত টাকা প্রয়োজন।
পরে আয়শা আক্তার জানতে পারে এই ৭ লক্ষ টাকার অধিক অংশই সভাপতি ও প্রধান শিক্ষক আত্মসাৎ করেছে, তাই তাদের কাছে টাকা ফেরত চেয়েছেন আয়া আয়েশা আক্তার। আয়শা বলেন আমি মাত্র সাড়ে ৯ হাজার টাকা মাসিক বেতন পাই কত বছরে আমার আসল টাকা পাব ও ঋণ পরিশোধ করব। তাই এখন আমি অনেক আর্থিক সংকটের মধ্যে আছি। আয়শা আক্তার এ সকল কথা বলেন সাংবাদিকদের কাছে মুঠোফোনে যাহার কল রেকর্ডিং রয়েছে।
উক্ত নিয়োগের ৬ জনের আরেকজন মোহাম্মদ ইয়াসিন (নাইট গার্ড) তিনিও আয়া আয়েশা আক্তারের মতই সভাপতি ও প্রধান শিক্ষকের কাছে নিয়োগের সময় দেয়া ঘুষের টাকা ফেরত চেয়েছেন বলে জানান সাংবাদিকদেরকে। তিনি বলেন সভাপতি ও প্রধান শিক্ষক আমাকে ভুল বুঝিয়ে ৭ লক্ষ টাকা ঘুষ নিয়েছে এখন আমি কোন উপায় পাইনা আমি এই চাকরি করতে চাই না আমার টাকা ফেরত চাই এবং সভাপতি ও প্রধান শিক্ষকের শাস্তি চাই।
উক্ত নিয়োগে আরেক ভুক্তভোগী ইমাম হোসেন(পরিচ্ছন্নতাকর্মী)ও নিয়োগের সময় দেয়া ঘুষের টাকা সভাপতি ও প্রধান শিক্ষকের নিকট ফেরত চেয়েছেন বলে জানান সাংবাদিকদের কাছে, যাহার কল রেকর্ডিং রয়েছে।
ঘুষ দিয়ে নিয়োগ পাওয়া ৬ জনের মধ্যে আরেক ভুক্তভোগী অত্র প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক নাসির স্যারের স্ত্রী মনি আক্তার (অফিস সহায়ক)যে টাকা দিয়ে চাকরি নিয়েছেন তা ফেরত চেয়েছেন সভাপতি ও প্রধান শিক্ষকের কাছে কেননা নিয়োগ পাওয়ার পরে মনি আক্তার কে কোন কাজ বুঝিয়ে না দিয়ে প্রতিষ্ঠানের টয়লেটও সাফ করান প্রধান শিক্ষক। এমন অভিযোগ করেন সাংবাদিকের কাছে, যাহার কল রেকর্ডিং রয়েছে।
উক্ত ৬ জন নিয়োগে আরেকজন ইমাম হোসেন (পরিচ্ছন্ন কর্মী) তিনিও সভাপতি ও প্রধান শিক্ষকের কাছে টাকা ফেরছ চেয়েছেন যা তিনি তার নিয়োগের সময় দিয়েছিলেন। ইমাম হোসেন সাংবাদিকদেরকে বলেন আমি এখন অনেক অসহায় সংসারে ভাতও খেতে পারছি না এই সভাপতি ও প্রধান শিক্ষকের খপ্পরে পড়ে আমি এদের শাস্তি চাই ও আমার দেওয়া টাকা ফেরৎ চাই, যাহার কল রেকর্ডিং রয়েছে।
উক্ত ৬ জন নিয়োগের আরেক ভুক্ত ভুগি আল আমিন (নিরাপত্তা কর্মী) তিনিও বলেন আমার থেকেও নিয়োগের সময় খরচ বাবদ টাকা নিয়েছে সভাপতি ও প্রধান শিক্ষক, যাহার কল রেকর্ডিং রয়েছে।
উক্ত ভুক্তভোগী ৬ জনার মধ্যে আরেক জন মেহেদী হাসান (অফিস সহকারি) তিনি সভাপতি ও প্রধান শিক্ষকের ঘনিষ্ট বাজন হওয়ায় নিয়োগের সময় ঘুষের টাকা দেওয়ার কথা অস্বীকার করেন তবে অনুসন্ধানে জানা যায় মেহেদী হাসান ব্যাংক থেকে লোন নিয়ে সভাপতি ও প্রধান শিক্ষককে নিয়োগেয় সময় যে ৭ লক্ষ টাকা ঋণ করে দিয়েছিল তাহা পরিশোধ করেন। যাহা অত্র প্রতিষ্ঠানের অনেক শিক্ষক ও মেহেদির এলাকার লোকজন নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেছেন এবং মেহেদী হাসান স্বীকার করেছেন নিয়োগ পাওয়ার পরে ব্যাংক থেকে লোন উত্তোলন করেছি।
জুনিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সভাপতি ও প্রধান শিক্ষক ৬ জন কর্মচারী নিয়োগ দেওয়ার ব্যাপারে ঘুষ নিয়েছেন কিনা তা অনুসন্ধান করতে গিয়ে অত্র প্রতিষ্ঠানের অবসরপ্রাপ্ত এক কর্মচারী আব্দুল হামিদের কাছে জানতে চাইলে তিনি সাংবাদিকদেরকে জানান আমি জানি যে উক্ত ৬ জন কর্মচারীর থেকে মোটা অংকের টাকা ঘুষ নিয়ে নিয়োগ দিয়েছে সভাপতি ও প্রধান শিক্ষক।
অনুসন্ধান করতে গিয়ে এলাকার একাধিক লোককে জিজ্ঞেস করলে তারাও বলেন আমরা জানি সভাপতি ও প্রধান শিক্ষক ঘুষ নিয়ে ৬ জন কর্মচারী নিয়োগ দিয়েছেন। সভাপতি ও প্রধান শিক্ষকের ঘুষ বাণিজ্য নিয়ে অত্র এলাকায় জল্পনা কল্পনার আর শেষ নেই। তাই অত্র এলাকার সকলই উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের তদন্ত সাপেক্ষে সভাপতি ও প্রধান শিক্ষকের শাস্তি দাবি করেন।
অত্র এলাকার অনেকেই আক্ষেপ করে বলেন বর্তমান সরকারের আমলে ঘুষ নিয়ে কেমনে এরা এখনো সভাপতি ও প্রধান শিক্ষকের চেয়ারে বসে আছেন তা আমরা জানিনা এই ঘুষখোর সভাপতি ও প্রধান শিক্ষক আমরা দেখতে চাই না। অএ প্রতিষ্ঠানের একাধিক শিক্ষকরা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন আমাদের প্রধান শিক্ষক তিনি রীতিমতই অনিয়ম করে যাচ্ছেন কোন সরকারি প্রোগ্রামে অংশগ্রহণ করেন না এবং ঠিকমতো প্রতিষ্ঠানেও আসেন না আসলেও ছুটি পর্যন্ত তিনি থাকেন না এবং সকল শিক্ষক কর্মচারীদের সাথে খারাপ ব্যবহার করেন।
জুনিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয় এর প্রধান শিক্ষক পরিতোষ চন্দ্র ব্যাপারী ব্যাপারে বরিশাল মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের কতিপয় কর্মকর্তা কর্মচারীদের সাথে আলাপ করলে তারা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন পরিতোষ ডেয়ারিং লোক তার ব্যাপারে অনেক অভিযোগ আছে এবং ঘুষ বাণিজ্যেরও অভিযোগ পেয়েছি, তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে কর্তৃপক্ষ আদেশ দিলে।
জুনিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয় এর ৪২ লক্ষ টাকার ঘুষ বাণিজ্যের
অভিযোগ পেয়েছেন কিনা এবং ব্যবস্থা নেবেন কিনা এ ব্যাপারে বরিশাল আঞ্চলিক অফিসের উপ-পরিচালক আনোয়ার হোসেনের সাথে কথা বললে তিনি জানান এ ধরনের দুর্নীতি সহ্য করার মতো নয় আমি অভিযোগ পেয়েছি এবং তদন্তের জন্য পিরোজপুর জেলা শিক্ষা অফিসারের নিকট প্রেরণ করেছি রিপোর্ট আসলেই ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য ঢাকায় শিক্ষা অধিদপ্তরে পাঠিয়ে দিব।
জুনিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও সভাপতির বিরুদ্ধে কোন অভিযোগ পেয়েছেন কিনা পিরোজপুরের জেলা শিক্ষা অফিসারের কাছে জানতে চাইলে তিনি জানান বরিশাল আঞ্চলিক অফিস থেকে তদন্ত প্রতিবেদন দেওয়ার জন্য অভিযোগ পেয়েছি তদন্ত কার্যক্রম অব্যাহত আছে তদন্ত শেষে রিপোর্ট দিয়ে দিব। তবে এ ধরনের দুর্নীতি যদি হয়ে থাকে তাহলে অবশ্যই প্রধান শিক্ষক ও সভাপতির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। পিরোজপুর জেলা শিক্ষা অফিসার আরো বলেন অত্র প্রতিষ্ঠানে আর একজন ল্যাব সহকারী নিয়োগ এর কার্যক্রম ছিল তা আমি এই অভিযোগ পাওয়ার পরে ল্যাব সহকারী নিয়োগ কার্যক্রম বন্ধ করে দিয়েছি।
৪২ লক্ষ টাকার নিয়োগ বানিজ্যের ঘুষ দুর্নীতির বিষয় জুনিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয় এর প্রধান শিক্ষক পরিতোষ চন্দ্র বেপারীকে কাছে ফোন করলে তিনি সাংবাদিক পরিচয় দেওয়ার সাথে সাথেই ফোন কেটে ফোনটি বন্ধ করে দেন তাই তার কোন বক্তব্য দেওয়া গেলো না।
জুনিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সভাপতি মো: বাদশা তালুকদার কে ফোন করলে তিনি জানান নিয়োগের সময় কিছু খরচ হয়, কারন নিয়োগ বোর্ডে যারা থাকেন তাদেরকে দিতে হয়, তাই আমরা কিছু খরচ নিয়েছি তবে ৪২ লক্ষ টাকা নয়, সভাপতি ও প্রধান শিক্ষক নিয়োগের ব্যাপারে খরচ নিতে পারেন কিনা জানতে চাইলে তিনি কোন উত্তর না দিয়ে বলেন এই খরচ নেয়া আমাদের ঠিক হয় নাই। আপনার সাথে বরিশাল এসে কোথায় দেখা করা যাবে আমরা দেখা করব সভাপতির সকল কথার মুঠোফোন রেকর্ডিং রয়েছে সাংবাদিকদের কাছে।
উল্লেখ্য যে জুনিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ৪২ লক্ষ টাকা নিয়োগে ঘুষ বাণিজ্য হওয়া এবং প্রধান শিক্ষক ও সভাপতির অবৈধ সম্পদের ব্যাপারে পিরোজপুর দুদক অফিসে অভিযোগ দেওয়া হয়েছে বলে জানান অভিযোগকারীরা।
তারই সূত্র ধরে পিরোজপুর জেলার দুদক অফিসের সহকারি পরিচালক মোহাম্মদ আরিফুর রহমানকে ফোন করলে তিনি জানান আমাদের অফিসে অভিযোগ পেয়েছি তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। উক্ত অভিযোগে সভাপতি ও প্রধান শিক্ষকের ব্যাংক একাউন্ট নাম্বার সহ কোন তারিখে কি লেনদেন হয় তাও উল্লেখ করা হয়েছে বলে জানান অভিযোগকারীরা।
নিয়োগ বাণিজ্যকারী সভাপতি ও প্রধান শিক্ষকের আরো কিছু দুর্নীতি এবং প্রধান শিক্ষকের জালজালিয়াতি কর্মকাণ্ড নিয়ে শীঘ্রই প্রকাশ করা হবে, তাই চোখ রাখুন পত্রিকার পাতায়।
সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত © ওয়েবসাইট এর কোনো লেখা, ছবি অনুমতি ছাড়া কপি করা নিষেধ