প্রতিদিন শতশত হলুদ অটোরিকশা বানিয়ে রাস্তায় ছাড়ছে কিছু অসাধু ওয়ার্কশপ মালিক। আর এর প্রভাবে ব্যাপক যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে পুরো নগরী জুড়ে।অনেকের মতে, বরিশাল নগরী এখন অটোরিকশার নগরীতে পরিণত হয়েছে। প্রতিটি অলিগলি থেকে শুরু করে সড়ক-মহাসড়ক সবখানেই এই অটোরিকশার দাপট। এসব রিকশার বৈধ কোনো কাগজপত্র না থাকায় একদিকে সরকার যেমন মোটা অঙ্কের রাজস্ব হারাচ্ছে, তেমনি প্রতিদিন সড়কজুড়ে একের পর এক দুর্ঘটনা ঘটছে।
আইনের তোয়াক্কা না করে অনেক অটোরিকশা মালিক প্রশিক্ষণ ছাড়াই অল্প বয়সী চালকদের হাতে তুলে দিচ্ছেন গাড়ি। ফলে তারা অদক্ষতার কারণে যানজটের পাশাপাশি বিভিন্ন সময়ে দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছেন।
বরিশাল নগরীর লাগোয়া চরবাড়িয়া রাড়ি মহল শফি মিয়ার গ্রেজ সংলগ্ন এলাকায় অটোরিকশা তৈরি করা জান্নাত ওয়ার্কশপের মালিক জাহাংগীর সত্যতা স্বীকার করে বলেন, আমি অবৈধ ভাবে অটোরিকশা তৈরি করি। তাছাড়া সরকার এসব অটোরিকশার যন্ত্রাংশ আমদানি করা বন্ধ করুক, তাহলে আর এগুলো তৈরি হবে না।
সরজমিনে দেখা যায় নগরীর বেশ কয়েকটি স্থানে তৈরী হচ্ছে অবৈধ অটোরিক্সা নাম প্রকাশ না করে আরেক ওয়ার্কশপ মালিক বলেন, আমরা শুধু কাস্টমারদের কাছ থেকে অটো তৈরির অর্ডার নিই না আমারা দালালের মাধ্যমে অর্ডার নিয়ে নতুন অটোরিক্সা তৈরী করে থাকি। তারপর তাদের পছন্দ অনুযায়ী সেগুলো বানিয়ে দিই। এখন তারা যদি অনুমতি না নিয়ে সেগুলো রাস্তায় ছাড়ে সেখানে আমাদের কী করার আছে। তিনি আরও বলেন, সিটি করপোরেশন বা বিআরটিএ এখন অটোরিকশার জন্য কোনো লাইসেন্স দেয় না। প্রশাসনের অসাধু কিছু কর্মকর্তার যোগসাজশে বিট মানির বিনিময়ে এগুলো রাস্তায় চলে।
এদিকে, অটোরিকশার দৌরাত্মে নাজেহাল নগরবাসী দুষছেন প্রশাসনকে। তাদের অভিযোগ, প্রশাসনের নাকের ডগায় এমন হাজারও অদক্ষ চালক দিয়ে অটোরিকশা চলাচল করলেও তাদের আইনের আওতায় আনা হচ্ছে না। তারা শুধু বৈধ পরিবহন ও মোটরসাইকেলের ওপর তাদের আইন প্রয়োগ করছে।
নগরীতে চলাচলকারী বেসরকারি কোম্পানির এক কর্মকর্তা ইকবাল হাসান বলেন, বৈধ কাগজপত্র থাকার পরও ট্রাফিক পুলিশ প্রতিদিন অফিসে যাওয়া আসার পথে নগরীর একটি বেসরকারি কোম্পানির প্রাইভেটকারচালক জব্বার বলেন, এসব অটোরিকশার জন্য নগরীতে প্রবেশ করা যায় না। সকাল-সন্ধ্যা যানজট লেগেই থাকে। তাছাড়া বিভিন্ন সময় তারা দুর্ঘটনা ঘটাচ্ছে। পরে দেখা যায় ওইসব অটোচালকের কোনো লাইসেন্সই নেই।
বরিশাল বিআরটিএর পরিচালক মো. জিয়াউর রহমান বলেন, সামনে আর এসব অবৈধ যানবাহন তৈরি করবে না এমন শর্তে ওয়ার্কশপ মালিকদের কাছ থেকে স্ট্যাম্পে লিখিত নেওয়া হয়েছে। তারপরও যদি তারা বিনা অনুমতিতে এগুলো তৈরি করে তাহলে আর সতর্ক নয়, সোজা জেল-জরিমানা করা হবে।
বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (ট্রাফিক) মো. ফারুক হোসেন সবার সহযোগিতা কামনা করে বলেন, অনেকে হঠাৎ করে পেশা বদল করে কোনো প্রশিক্ষণ না নিয়ে অটোরিকশা চালানো শুরু করেন। এতে নগরীতে কিছুটা যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে। তবে এ বিষয়ে প্রশাসন নিরলস কাজ করে যাচ্ছে।