মেহেরপুর শহরের রমেশ ক্লিনিকে অ্যানেসথেসিয়া প্রয়োগে ভুল করায় স্বর্ণালী খাতুন নামের এক রোগীর মৃত্যুর অভিযোগ উঠেছে। স্বর্ণালী খাতুন মেহেরপুর শহরের মল্লিক পাড়ার সাদ্দাম হোসেনের স্ত্রী ও রমেশ ক্লিনিকের সিনিয়র স্টাফ নার্স।রোগীর স্বজনরা জানায়, অ্যানেসথেসিয়ার সময় মাত্রাতিরিক্ত ঔষধ প্রয়োগের কারণে স্বর্ণালী খাতুনের আর জ্ঞান ফেরেনি।
ওই সময় স্বর্ণালীর মৃত্যু হয়েছে মর্মে গুজব ছড়িয়ে পড়লে এলাকাবাসী উত্তেজিত হয়ে রমেশ ক্লিনিকে হাজির হয়। দুদিন ধরেই রোগীর স্বজন ও এলাকাবাসীর ভিতরে ক্ষোভ বিরাজ করছিলো। মৃত্যুর সংবাদে এলাকা আরো উত্তপ্ত হলে পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে পরিবেশ শান্ত করে।পরিবারের অভিযোগ, গত বৃহস্পতিবার (২১সেপ্টেম্বর) বিকালে মেহেরপুর শহরের মল্লিক পাড়ার রমেশ ক্লিনিকের সিনিয়র স্টাফ নার্স স্বর্ণালী খাতুনের পেটে ব্যথা ওঠে। এ সময় ঢাকা থেকে আগত ক্লিনিকের কর্তব্যরত চিকিৎসক জাহিদ হাসান বিপু পরীক্ষা করে জানান, রোগীর অ্যপেনটিসাইটিসের ব্যথা উঠেছে। দ্রুত অপারেশন করতে হবে।এদিন সন্ধ্যায় পরিবারের সদস্যদের কিছু না জানিয়েই রোগী স্বর্ণালীকে অপারেশন থিয়েটার (ওটিতে) নেওয়া হয়।
অপারেশনের আগে অ্যানেসথেসিয়ার চিকিৎসককে না ডেকে ঐ ক্লিনিকের ম্যানেজার শহিদুল নিজেই অ্যানেসথেসিয়ার চিকিৎসকের সাথে ফোনে পরামর্শ নিয়ে রোগীর শরীরে ইনজেকশন প্রয়োগ করে।এরপর অপারশন শেষ হলেও রোগীর জ্ঞান না ফিরলে রোগীকে মেহেরপুর জেনারেল হাসপাতালের আইসিইউ বিভাগে নেওয়া হয়। রোগীর অবস্থার উন্নতি না হলে শুক্রবার তাকে ঢাকা মেডিকেলে রেফার করা হয়।
ঢাকায় নেওয়ার পথে তার মৃত্যু হয়।তবে ক্লিনিক ম্যানেজার শহিদুলের দাবি, অ্যানেসথেসিয়ার চিকিৎসক মেহেদি হাসান নিজে অ্যানেসথেসিয়া দিয়েছেন। এ ঘটনার পর থেকে ডা. মেহেদি হাসান আত্মগোপনে রয়েছেন। তার ফোনও বন্ধ রয়েছে। রুগীর স্বজন শয়ন বলেন, আমার ভাবিকে কখন কিভাবে কোন ডাক্তার দিয়ে অপারেশন করা হয়েছে, আমাদের পরিবারেরর কেউ জানে না।
ইতিপূর্বেও রমেশ ক্লিনিকে এভাবে তিনজন রুগীর মৃত্যু হয়েছে। ক্লিনিকটির বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানাচ্ছি।রমেশ ক্লিনিকের ম্যানেজার শহিদুল ইসলাম বলেন, সঠিক নিয়মে অপারেশন হয়েছে। কিন্তু রোগীর উচ্চ রক্তচাপ ছিলো। প্রেশারের ঔষধ না খাওয়ার কারনে রোগীর হয়ত ব্রেন স্ট্রোক হয়ে মৃত্যু হয়েছে।অতিরিক্ত পুলিশ সুপার প্রশাসন কামরুল আহসান বলেন, পরিবারকে লিখিত অভিযোগ দেবার জন্য বলা হয়েছে। অভিযোগ পেলে পুলিশ আইনগত ব্যবস্থা নেবে। সিভিল সার্জেন ডা. জওয়াহেরুল আনাম সিদ্দিকী বলেন, অভিযোগ পেলে তদন্ত বোর্ড গঠন করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এদিকে শনিবার দুপুরের পর স্বর্ণালীর মরদেহ মেহেরপুরে এসে পৌঁছালে স্বর্ণালীর মরদেহবাহী অ্যাম্বুলেন্স রমেশ ক্লিনিকের সামনে রেখে এলাকাবাসী ক্লিনিক বন্ধের দাবিতে অবরোধ শুরু করেন। এ সময় এলাকাবাসী রমেশ ক্লিনিকের ব্যবস্থাপক শহিদুল ইসলামের বিচার দাবি জানান। এলাকার শত শত নারী পুরুষ দীর্ঘক্ষণ রাস্তার উপরে অবস্থান করেন।
খবর পেয়ে জেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান গোলাম রসুল, সদর থানা পুলিশের ওসি সাইফুল ইসলাম ও ডিবির ওসি সাইফুল আলম উপস্থিত হয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে। পরিবেশ শান্ত রাখতে ক্লিনিক চত্বরে মেহেরপুর থানা পুলিশ ও ডিবি পুলিশের দুইটি ইউনিট মোতায়ন করা হয়েছে।