দফায় দফায় হরতাল অবরোধ, গাড়ি ভাঙচুর ও আগুন দেয়ার মত নানা কর্মসূচিতে আ.লীগ সরকারকে হটানোর চূড়ান্ত আন্দোলনে রয়েছে বিএনপির নেতাকর্মীরা। কিন্তু এ আন্দোলনে মাঠে দেখা যায়নি পাবনা জেলা বিএনপির পদধারী নেতা বা তাদের সমর্থকদের। দলীয় কর্মসূচিতে কেবল সহমত অবস্থানে রয়েছেন তারা। এ নিয়ে পাবনার বিএনপির তৃণমুল ও পদবঞ্চিত নেতাকর্মীদের মধ্যে ক্ষোভ বিরাজ করছে।
গত ২৮ অক্টোবরের সমাবেশের ঘটনার পর থেকে পর্যবেক্ষণ করে দেখা গেছে, সরকার হটানোর লক্ষ্যে সারাদেশে পর্যায়ক্রমে হরতাল-অবরোধসহ নানা কর্মসূচী পালন করছে বিএনপি নেতাকর্মীরা। অথচ পাবনা জেলা বিএনপির নতুন আহ্বায়ক কমিটির পদধারী কাউকেই আন্দোলনের মাঠে দেখা যায়নি। জেলা বিএনপির আহ্বায়ক হাবিবুর রহমান হাবিবকে একটি মামলায় ৪ বছরের কারাদন্ড দেয়ার পর থেকেই পাবনার রাজনীতির মাঠে তাকে তেমনভাবে দেখা যায়নি। অনেকটা গা ঢাকা দেবার মতই ছিলেন তিনি।
তবে গত সোমবার (২০ নভেম্বর) দিবাগত রাত ১ টার দিকে যৌথবাহিনীর অভিযানে ঢাকার একটি বাসা থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় বিএনপির একটি সূত্র। অন্যদিকে সদস্য সচিব এড. মাসুদ খন্দকার নাশকতা পরিকল্পনার অভিযোগে গত ৩০ অক্টোবর জেলা শহরের রাঘবপুরের বোনের বাসা থেকে আটক হন।
এছাড়া জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক আব্দুস সামাদ খান মন্টু, আনিসুল হক বাবু, শেখ আবু ওবায়দা তুহিন ও নুর মোহাম্মদ মাসুম বগা সহ পদধারী কাউকেই আন্দোলনের মাঠে দেখা যায়নি। এমনকি তাদের কোনো সমর্থকদেরও তেমন সরব ভূমিকা নিতে দেখা যায়নি। ফলে হরতাল অবরোধে জামাত ও বিএনপি নেতা জাকারিয়া পিন্টু সমর্থকদের প্রভাবে ঈশ্বরদীতে কিছুটা উত্তাপ থাকলেও জেলা শহরে নেই এর তেমন কোনো উত্তাপ।
তবে দলীয় তেমন পদবী না থাকলেও কিছুটা নিয়মিতই দলীয় কর্মসূচি পালনে তৎপর দেখা গেছে জেলা বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক মাহমুদুন্নবী স্বপন ও জেলা ছাত্রদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক তসলিম হাসান খান সুইট ও তাদের সমর্থকদের। গত ২০ নভেম্বর হরতাল সমর্থনে স্বপন ও সুইট সমর্থক মিছিলকারীরা শহরের সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের সামনে একটি ট্রাক ও লেগুনার গ্লাস ভাঙচুর করে।
বিস্ফোরণ ঘটায় কয়েকটি ককটেলও। এছাড়া শহরের মহিষের ডিপো মোড়ে পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের বাসের গ্লাসও ভাঙচুর করে তারা। এসব ঘটনায় ১৪ জনকে আসামি করে পাবনা সদর থানায় পুলিশ বাদী একটি মামলাও দায়ের করা হয়েছে। এনামুল হক পলাশ নামে এক বিএনপি নেতাকে আটকও করেছে পুলিশ। অথচ পদধারী কোনো নেতা বা তাদের সমর্থকদের আন্দোলনের মাঠে দেখা মিলেনি বলে অভিযোগ তৃণমুল ও পদবঞ্চিত নেতাকর্মীদের।
নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক পদবঞ্চিত একাধিক নেতাকর্মী বলেন, আন্দোলনের শুরুতেই জেলা বিএনপির সদস্য সচিব এড. মাসুদ খন্দকার আটক হলেন। তিনি এ্যাডভোকেট বার সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক, তার নামে তেমন কোনো মামলাও নেই। অথচ হুট করেই তিনি আটক। আটকের ব্যাপারটি খুবই রহস্যজনক।
আন্দোলন থেকে দুরে থাকতে পুলিশের সাথে যোগসাজশ করে তিনি আটক হয়েছেন কি না সে নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে। তাছাড়া তারা হয়তো জেলে, কারো বিরুদ্ধে হয়তো কারদণ্ড বা গ্রেফতারি পরোয়ানা রয়েছে। কিন্তু তাদের কি কোনো সমর্থকও নেই? যারা অন্তত দলীয় কর্মসূচি পালনে এগিয়ে আসবে। এটি সত্যিই দুঃখজনক।
এ ব্যাপারে জেলা বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক মাহমুদুন্নবী স্বপন জানান, মামলা জেল জুলুম থাকবেই সেটি ভেবে তো আন্দোলন রেখে ঘরে বসে থাকলে চলবে না। তাছাড়া কে কি করলো সেটি আমাদের দেখার বিষয় না। তারেক রহমানের নির্দেশে আমরা দেশের এই সংকটময় মুহুর্তে অবৈধ সরকারের পদত্যাগের দাবিতে আন্দোলন করছি। এই দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত আমরা ঘরে ফিরবো না।
জেলা ছাত্রদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক তসলিম হাসান খান সুইট বলেন, পদ পদবীর আশায় রাজনীতি করি না। অবৈধ সরকারের তান্ডবে মানুষ এখন দিশেহারা। এখন মামলা গ্রেফতারের ভয়ে ঘরে বসে থাকার সময় নয়। বিশেষত দায়িত্ব নিয়ে ঘরে বসে থাকাটা শোভনীয় নয়। কর্মী সমর্থকদের নিয়ে মাঠে আসতে হবে। সমন্বিতভাবে দুর্বার আন্দোলন গড়ে তোলার মধ্য দিয়ে স্বৈরাচারী সরকারকে উৎখাত করতে হবে। আমরা রাজপথে আছি এবং থাকবো।
তবে এ অভিযোগ মিথ্যা দাবি করে জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক নুর মোহাম্মদ মাসুম বগা বলেন, একবোরেই আন্দোলনের মাঠে নেই বা দলীয় কর্মসূচি পালিত হচ্ছে না এটি সত্য নয়। ইউনিয়ন পর্যায়ের নেতারাও আটক/গ্রেফতার এড়াতে বাড়ি ছাড়া। চাইলেই বড় জমায়েত করে কর্মসূচি পালন সম্ভব নয়। যার ফলে নিজস্ব পন্থায় বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করা হচ্ছে।
সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত © ওয়েবসাইট এর কোনো লেখা, ছবি অনুমতি ছাড়া কপি করা নিষেধ