“দেনমোহর, ভরণপোষণ ও সন্তানের কাস্টডি” মেয়ে নিজে যদি তালাক দেন তবে দেনমোহর পাবেন কিনা? যদি সন্তান থেকে থাকে, আর মেয়েটি তালাকের পর দেনমোহর বা ভরণপোষণ দাবি করেন তবে সেক্ষেত্রে “মা” তাঁর বাচ্চার কাস্টডি হারাবেন কিনা বা বাবা বাচ্চা নিয়ে যাবে কিনা?বিয়ে বিচ্ছেদের পর এ দুইটি প্রশ্ন খুব কমন যা মেয়ে বা মেয়ে পক্ষ থেকে পাওয়া যায়। খুব অবাক করা একটি বিষয় আমি দেখেছি এই প্রশ্নটি বেশি আসে মধ্যবিত্ত এবং উচ্চবিত্ত শ্রেণীর মেয়েদের থেকে!!
অধিকাংশ সময়ই মেয়েটি শিক্ষিত অর্থাৎ লেখাপড়া জানা হয়, এমনকি তারা উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাও হয়ে থাকেন!অধিকাংশ মেয়েরই ধারণা থাকে যে, সে যদি দেনমোহর বা ভরণপোষণ দাবি করেন তবে এতে প্রমাণিত হয় যে, তিনি সন্তান পালনে অক্ষম এবং কোর্ট তার এই চাওয়াটিকে অযোগ্যতা ভেবে বাচ্চা বাবাকে দিয়ে দিবে।
মানুষ বিয়েটি খুব সহজভাবে করতে পারলেও এর সাথে সম্পর্কিত বিষয়গুলো নিয়ে কোন ধারণাই রাখেন না, বা ভ্রান্ত ধারণা পোষণ করে থাকেন।তালাকের পর একজন মেয়ের দেনমোহরের সাথে বাচ্চার কাস্টডির কোন সম্পর্ক নেই। দেনমোহর ও ভরণপোষণ চাওয়া কোনভাবেই বাচ্চার কাস্টডির অধিকার লঙ্ঘিত করে না।
এটি প্রমাণ করে না যে আপনি সন্তান পালনে অক্ষম।আইনগত ভাবে, বাচ্চাটি যদি ছেলে হয় তাহলে সাত বছর পর্যন্ত এবং মেয়ে বাচ্চা হলে সাবালিকা হওয়া পর্যন্ত মায়ের কাছে থাকবে। তবে অনেক সময় পারিপার্শ্বিক অবস্থার উপর ভিত্তি করে এর পরিবর্তন হতে পারে।
দেনমোহর একজন মেয়ের অধিকার। এই দেনমোহর পাবার অধিকার একজন মেয়ে কোনভাবেই হারান না, যদি না তিনি নিজে এটি নেয়াতে অনাগ্রহ প্রকাশ করেন। কোন মেয়ে নিজে তালাক দিক বা অপরপক্ষ থেকে তালাক দেয়া হোক, মেয়েটি তালাকের নোটিশ পাবার পরই দেনমোহর দাবি করতে পারেন।
এতে কোন বাধা নেই। আবার তালাকটি কার্যকর হবার পরও দেনমোহর দাবি করতে পারেন। তবে অবশ্যই সেটি তিন বছরের মাঝে হতে হবে।মৌখিকভাবে কোন মেয়ে নিজেই বা ভাইবোন, আত্মীয়, বন্ধু দ্বারা দেনমোহর দাবি করতে পারেন। যদি অপরপক্ষ দেনমোহর দিতে রাজি থাকে তবে এই বিষয়টি কোর্টে না এসেও সমাধান করা যায়। উভয় পক্ষের সম্মতিতে সাক্ষীদের উপস্থিতিতে ও স্বাক্ষর নিয়ে নন-জুডিশিয়াল স্ট্যাম্পে সমস্ত শর্তাবলী লিখে একটি লিখিত চুক্তি তৈরির মাধ্যমে সমস্যাটি সমাধান করা যেতে পারে।
আর যদি এরকম ভাবে সমস্যা সমাধান না হয় তবে কোর্টে যেয়েও দেনমোহর দাবি করতে পারেন। কোর্ট চাইলে একবারে অথবা কিস্তিতে দেনমোহর ও ভরণপোষণ পরিশোধ করার আদেশ দিতে পারেন। মেয়ে তালাকের নোটিশ পাবার পর থেকে তিন মাস এবং তালাক কার্যকরি হবার পর ইদ্দতকালীন তিন মাসের ভরণপোষণ অবশ্যই পাবেন; আর মেয়েটি যদি গর্ভবতী হয়ে থাকে, তবে সন্তান প্রসব হওয়া পর্যন্ত মেয়েটি ভরণপোষণ পাবেন।
তার যদি কোন পূর্ববর্তী ভরণপোষণ বাদ যেয়ে থাকে, চাইলে সেটিও একই সাথে দাবি করতে পারেন। তবে অধিকাংশ সময়ই এটি প্রমাণ করা কঠিন হয়ে পড়ে যে, বিয়ে বলবৎ থাকা অবস্থায় মেয়েটিকে তার স্বামী ভরণপোষণ দেননি।
দেনমোহর ও ভরণপোষণের মামলা অবশ্যই বিয়ের কাবিননামা, তালাকের নোটিশ অথবা তালাক কার্যকর হয়ে গেলে তালাকের সার্টিফিকেট এবং দুইজন সাক্ষী সমেত মামলাটি দায়ের করতে হয়।যে কাজীর কাছে বিয়ে পড়ানো হয়, সেই কাজী অফিস থেকে বিয়ের কাবিননামা যতবার খুশি ততবার তোলা যায়। আবার যে তালাকের নোটিশ পাঠানো হয়, সেখানে সংশ্লিষ্ট কাজী অফিসের ঠিকানা দেয়া থাকে, সেখান থেকে প্রয়োজনমতো তালাকের সার্টিফিকেট তোলা যায়।
সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত © ওয়েবসাইট এর কোনো লেখা, ছবি অনুমতি ছাড়া কপি করা নিষেধ