চট্টগ্রামে ওয়াসার প্রকল্পে ‘লুটের ফাঁদ’দুদকের জালে উপজেলা চেয়ারম্যান

নিজস্ব প্রতিবেদক
  • আপডেটের সময় : বৃহস্পতিবার, ৮ ফেব্রুয়ারী, ২০২৪
91.4kভিজিটর

চট্টগ্রামে ওয়াসার প্রকল্পে সরকারি জমি অধিগ্রহণে ৫ কোটি টাকা ‘লুটের ফাঁদ’ বানানো সেই উপজেলা চেয়ারম্যান রেজাউল করিম দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) জালে ফেঁসে যাচ্ছেন। সঙ্গে নাম এসেছে তার ছেলে মোহাম্মদ সরোয়ার করিমের ও। এরই মধ্যে তাদের সম্পদ বিবরণী জারির সুপারিশ করে দুদক প্রধান কার্যালয়ে প্রতিবেদন দিয়েছে দুদকের চট্টগ্রাম অফিস।

জানা যায়, রেজাউল করিমের বিরুদ্ধে দুদক চট্টগ্রাম সমন্বিত জেলা কার্যালয়-১ থেকে পাঠানো অনুসন্ধান প্রতিবেদনটি এরই মধ্যে প্রধান কার্যালয়ে জমা হয়েছে। দুদক প্রধান কার্যালয়ের একটি বিশ্বস্ত সূত্রে পাওয়া ওই প্রতিবেদন পর্যালোচনায় দেখা যায়, প্রাথমিক অনুসন্ধানে দুই কোটি ৬৯ লাখ ৮ হাজার ৪৩৩ টাকার অবৈধ আয়ের তথ্য পেয়েছে দুদক। দুদকের ভাষায় ওই অবৈধ আয়কে ‘জ্ঞাত আয়ের উৎসের সঙ্গে অসঙ্গতিপূর্ণ’ বলে উল্লেখ করা হয়েছে। দুদকের ওই প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, রেজাউল করিম চট্টগ্রামের বোয়ালখালী উপজেলার শ্রীপুর গ্রামের মরহুম আবদুর রাজ্জাকের ছেলে। তিনি একজন ব্যবসায়ী ও রাজনীতিবিদ। ১৯৮১ সালে ফার্নিচার ব্যবসা শুরু করেন। ১৯৯১ সাল পর্যন্ত ওই ব্যবসা চলমান ছিল।

১৯৯৭ সালে বালি সরবরাহ ব্যবসা শুরু করেন, যা এখনো চলমান। ২০২৩ সালের ১৬ মার্চ উপ-নির্বাচনে চট্টগ্রাম জেলার বোয়ালখালী উপজেলার চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন।প্রতিবেদনের শেষাংশে উল্লেখ করা হয়, ‘অনুসন্ধানকালে রেকর্ডপত্র পর্যালোচনায় দেখা যায়, রেজাউল করিম ও ছেলে মোহাম্মদ সরোয়ার করিমের নামে ২;কোটি ৭৬ লাখ ৬৬ হাজার ২শ টাকা স্থাবর সম্পদ এবং ২৮ লাখ ৯৬ হাজার ৫৭০ টাকার অস্থাবর সম্পদসহ মোট ৩ কোটি ৫ লাখ ৬২ হাজার ৭৭০ টাকার সম্পদ রয়েছে।

তিনি ৫২ লাখ ৪৫ হাজার টাকা পারিবারিক ব্যয়সহ অন্য ব্যয় করেছেন। ব্যয়সহ তার মোট অর্জিত সম্পদের পরিমাণ ৩ কোটি ৫৮ লাখ ৭ হাজার ৭৭০ টাকা। এসব সম্পদ অর্জনের বিপরীতে তার বৈধ ও গ্রহণযোগ্য আয়ের উৎস পাওয়া যায় ৮৮ লাখ ৯৯ হাজার ৩৩৭ টাকা। এক্ষেত্রে তার গ্রহণযোগ্য মোট আয়ের চেয়ে অর্জিত সম্পদের পরিমাণ ২ কোটি ৬৯ লাখ ৮ হাজার ৪৩৩ টাকা বেশি, যা তার জ্ঞাত আয়ের উৎসের সঙ্গে অসঙ্গতিপূর্ণ।

এমতাবস্থায় অভিযোগ সংশ্লিষ্ট রেজাউল করিমের বিরুদ্ধে জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগ প্রাথমিকভাবে প্রতীয়মান হয় এবং তাদের নামে-বেনামে আর ও সম্পদ পাওয়ার সম্ভাবনা আছে বিধায় তাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশন আইন, ২০০৪ এর ২৬(১) ধারা মোতাবেক সম্পদ বিবরণী দাখিলের আদেশ জারির সুপারিশ করে অনুসন্ধান প্রতিবেদন দাখিল করা হলো। দুদকের অনুসন্ধান প্রতিবেদনে ২ কোটি ৭৬ লাখ ৬৬ হাজার ২শ টাকার স্থাবর সম্পদের মধ্যে ১৫টি রেজিস্ট্রি করা দলিলের নাম ও কেনা জমির পরিমাণ উল্লেখ করা হয়। এর মধ্যে ১০টি দলিলে ১০৩ দশমিক ৫৪৫ শতক জমি রেজাউল করিম নিজের নামে কিনেছেন। যার মূল্য তিনি দেখিয়েছেন দুই কোটি ৪৪ লাখ ৬৪ হাজার ৪২৪ টাকা। রেজিস্ট্রি খরচসহ ওই জমির মূল্য দুদকের অনুসন্ধান প্রতিবেদনে দেখানো হয়েছে ২ কোটি ১৮ লাখ ১০ হাজার ২শ টাকা।

অন্যদিকে ৫৮ লাখ ৫৬ হাজার টাকায় কেনা ৮৯ দশমিক ৩০ শতক জমি ৫ দলিলে রেজিস্ট্রি হয় ছেলে মোহাম্মদ সরোয়ার করিমের নামে। অস্থাবর সম্পদ হিসেবে নিজের মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান বোয়ালিয়া মেরিন সার্ভিস অ্যান্ড কনস্ট্রাকশন নামে চারটি ব্যাংক হিসাবে ৪ লাখ ৯৬ হাজার ৫৭০ টাকা জমা রয়েছে। পাশাপাশি রেজাউল করিমের নিজের নামে ২৪ লাখ টাকা মূল্যের একটি জিপ গাড়ির কথা উল্লেখ করা হয়। জানা যায়, চট্টগ্রাম ওয়াসার ভাণ্ডালজুড়ি পানি সরবরাহ প্রকল্পের বোয়ালখালীর পূর্ব গোমদণ্ডী মৌজায় অধিগ্রহণের জমি অস্বাভাবিক মূল্যে হস্তান্তর করে দলিল গ্রহিতাদের বিরুদ্ধে অপ্রদর্শিত আয় প্রদর্শন করে অবৈধভাবে লাভবান হওয়াসহ জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের একটি অভিযোগ অনুসন্ধানে নামে দুদক।

২০২৩ সালের ৯ মার্চ তারিখে দুদক প্রধান কার্যালয়ের ০৪.০১.১৫০০.৬২২.০১.০৩৮.২৩.চট্ট-১/৯৫০৭ পত্রের আলোকে দুদক চট্টগ্রাম সমন্বিত জেলা কার্যালয়-১ এর সহকারী পরিচালক জুয়েল মজুমদারকে অনুসন্ধানকারী কর্মকর্তা নিয়োগ দেওয়া হয়। এরপর রেজাউল করিম ও তার স্ত্রী সন্তানদের নামে সম্পদ আছে কিনা তা যাচাই করার জন্য অনুসন্ধানকারী কর্মকর্তা জুয়েল মজুমদার বিভিন্ন তপসিলি ব্যাংক, ডাক বিভাগ, বিআরটিএ, সিকিউরিটি অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন, স্টক এক্সচেঞ্জ, চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের ভূমি অধিগ্রহণ শাখা, বোয়ালখালী ভূমি অফিস, চট্টগ্রাম ওয়াসাসহ সংশ্লিষ্ট সরকারি দপ্তরে চিঠি দেন।

পরবর্তীসময়ে এসব সরকারি দপ্তর থেকে পাওয়া কাগজপত্র পর্যালোচনা করে বোয়ালখালী উপজেলা চেয়ারম্যান রেজাউল করিম রাজার বিরুদ্ধে জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের সত্যতা পায় দুদক। এরপর আরও সম্পদ আছে কি না, যাচাই করার জন্য সম্পদ বিবরণী জারির সুপারিশ করে প্রাথমিক অনুসন্ধান প্রতিবেদন দেওয়া হয়।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে দুদক চট্টগ্রাম সমন্বিত জেলা কার্যালয়-১ এর উপ পরিচালক মো. নাজমুচ্ছায়াদাৎ বলেন, ‘বোয়ালখালী উপজেলা চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে অভিযোগ অনুসন্ধান একটি গোপনীয় বিষয়।

এ বিষয়ে কোনো বক্তব্য দেওয়া সম্ভব নয়। ২০২৩ সালের ১৬ মার্চ অনুষ্ঠিত চট্টগ্রামের বোয়ালখালী উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান পদের উপ-নির্বাচনে নৌকা প্রতীক নিয়ে জয়ী হন উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক রেজাউল করিম। এলাকায় তিনি ‘রাজা’ নামে পরিচিত।

এর আগে ২০২২ সালের ১০ ডিসেম্বর উপজেলা আওয়ামী লীগের কাউন্সিলের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন তিনি। উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে নির্বাচন কমিশনে জমা দেওয়া হলফনামায় রেজাউল করিম তার মালিকানাধীন কৃষি জমির পরিমাণ দেখান ১০৩ দশমিক ৫৪৫ শতক। যার মূল্য তিনি দেখিয়েছেন ২ কোটি ৪৪ লাখ ৬৪ হাজার ৪২৪ টাকা।
অনুসন্ধানে জানা যায়, রেজাউল করিম রাজা এসব জমির পুরোটাই কিনেছেন ২০২০ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর থেকে ২০২১ সালের ২০ জানুয়ারি পর্যন্ত ৪ মাসের মধ্যে। ৮টি আলাদা দাগের সব জমিই বোয়ালখালী উপজেলার পূর্ব গোমদণ্ডী মৌজায় পাশাপাশি লাগানো। বোয়ালখালী পৌরসভার ৬ নম্বর ওয়ার্ডের মীরা পাড়া এলাকায় অবস্থান এসব কৃষিজমির। ওই জায়গায়ই হওয়ার কথা ছিল চট্টগ্রাম ওয়

নিউজটি শেয়ার করুন

এই বিভাগের আরও খবর
কপিরাইট ©২০০০-২০২২, WsbNews24.com এর সকল স্বত্ব সংরক্ষিত।
Desing & Developed BY ServerNeed.Com
themesbazarwsbnews25
x