৯ বছরে হাজারের বেশি নরমাল ডেলিভারি, প্রসূতিদের আস্থার নাম স্বাস্থ্যকর্মী মেহেরুন নেহার লিলি ৯ বছরে হাজারের বেশি নরমাল ডেলিভারি, প্রসূতিদের আস্থার নাম লিলি স্বাস্থ্যকর্মী মেহেরুন নেহার লিলি
পঞ্চগড়: পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া উপজেলার সীমান্তের প্রত্যন্ত গ্রামে প্রসূতি নারীদের নরমাল ডেলিভারি করিয়ে আস্থার প্রতীক হয়ে উঠেছেন এক কমিউনিটি ক্লিনিকের সিএইচসিপি পদের স্বাস্থ্যকর্মী মেহেরুন নেহার লিলি।
গত নয় বছরে করিয়েছেন এক হাজারের বেশি প্রসূতির নরমাল ডেলিভারি।
এতে করে এক অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন পুরো জেলাজুড়ে।
স্থানীয়রা বলছে, শুধু প্রসূতিদের চিকিৎসা নয়, যে কোনো শারীরিক সমস্যায় পরামর্শ দিয়ে আসছেন তিনি।
মেহেরুন নেহার লিলি উপজেলার বুড়াবুড়ি ইউনিয়নের কাজিপাড়া কমিউনিটি ক্লিনিকে সিএইচসিপি হিসেবে কর্মরত রয়েছেন।
সরেজমিনে কাজিপাড় কমিউনিটি ক্লিনিক ঘুরে দেখা গেছে, বিভিন্ন এলাকা থেকে ছুটে আসছেন কিশোরী থেকে শুরু করে প্রসূতি নারীরা।
আর বিভিন্ন রোগীর প্রাথমিক চিকিৎসাসহ পরামর্শ দিচ্ছেন স্বাস্থ্যকর্মী লিলি।
চিকিৎসা নিতে আসা স্থানীয় প্রসূতিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, শারীরিক যে কোনো সমস্যায় চিকিৎসাসেবায় এগিয়ে আসেন স্বাস্থ্যকর্মী লিলি।
প্রসূতি আইরিন আক্তার বাংলানিউজকে বলেন, লিলি আপা আমার নরমাল ডেলিভারি করিয়েছেন। কোনো ধরনের সমস্যা হয়নি, খরচও হয়নি তেমন। মা-শিশু ভালো আছি।
একই কথা বললেন শালবাহান ইউনিয়নের প্রসূতি আয়শা সিদ্দিকা।
তিনি বলেন, সাতদিন আগে হঠাৎ প্রসব ব্যথা ওঠে। কোনো কূলকিনারা না পেয়ে আমার শাশুড়ি লিলি আপার সঙ্গে যোগাযোগ করেন। পরে তার দেওয়া পরামর্শে ক্লিনিকে এসে নরমাল ছেলেসন্তান জন্ম দিই। এখন আমরা মা-ছেলে ভালো আছি। আপার পরামর্শ নিতে আবারও চেকআপে এসেছি।
এদিকে চিকিৎসা নিতে আসা তরুণী সুমাইয়া আক্তার বাংলানিউজকে বলেন, আমাদের মেয়েদের অনেক রকম শারীরিক সমস্যা হয়। যেগুলো অন্য চিকিৎসকের কাছে শেয়ার করতে পারি না, সেটা আন্টির সঙ্গে শেয়ার করে ভালো চিকিৎসাসেবা নিতে পারি। এই ক্লিনিকটা হওয়ায় আমাদের কয়েক এলাকার মানুষের অনেক উপকার হচ্ছে।
কথা হয় কমিউনিটি ক্লিনিকের সিএইচসিপি মেহেরুন নেহার লিলির সঙ্গে।
তিনি বাংলানিউজকে বলেন, বুকে অনেক ভয় নিয়ে প্রথম ডেলিভারির কাজ করেছিলেন। এক থেকে দুটা, পরে চারটা এভাবে আমার ভয় কেটে যায়। ইনশাআল্লাহ সকলের দোয়ায় এখন পর্যন্ত এক হাজারের বেশি নরমাল ডেলিভারি করিয়েছি। আর যেগুলো করেছি সব মা ও সন্তান আল্লাহর রহমতে ভালো ও সুস্থ রয়েছে। এজন্য আমাকে যারা সহযোগিতা করেছেন তাদের সবার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি।
তিনি আরও বলেন, এ ক্লিনিকে যোগদানের পর এখানকার হতদরিদ্র, সুবিধাবঞ্চিত যারা সিজার করাতে পারেন না তাদেরকে সেবা দিতেই এ কাজ শুরু করি। হাসপাতালের বাইরেও অনেকে আমার কাছে নরমাল ডেলিভারি করাতে আস্থা রাখছেন।
এখন পর্যন্ত কোনো দুর্ঘটনা ঘটেনি। এর মাঝে যাদের অবস্থা গুরুতর ঠেকেছে তাদের উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স বা সদর হাসপাতালে যাওয়ার পরামর্শ দিচ্ছি। এখন রাত-দিনে সমস্যা হলেই ডাক পড়ে। রোগীরা সরাসরি কিংবা মোবাইল ফোনে কল করে সমস্যার কথা জানাচ্ছেন। তাদের সেবা করতে পেরে ভালো লাগে।
স্থানীয়দের দাবি, কমিউনিটি ক্লিনিকটি গড়ে ওঠার পর থেকে এখন পর্যন্ত কোনো ধরনের সংস্কার করা হয়নি। সরকারি মান উন্নয়ন করা হলে আরো ভালো সুবিধা পাবেন হাজার হাজার মানুষ।
জানা গেছে, ১৯৯৮ সালে উপজেলার বুড়াবুড়ি ইউনিয়নের কাজিপাড়া গ্রামে ৮ শতাংশ জমির ওপর গড়ে ওঠে এই ক্লিনিকটি। আর এ স্থান থেকে তেঁতুলিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের দূরত্ব প্রায় ২০ কিলোমিটার ও জেলা আধুনিক সদর হাসপাতালে দূরত্ব প্রায় ৩৫ কিলোমিটার হওয়ায় চিকিৎসা সেবায় জমি দান করেছিলেন স্থানীয় নারী রমিনা খাতুন।
এর পর ২০১১ সালে মেহেরুন নেহার লিলি কমিউনিটি হেলথ কেয়ার প্রোভাইডার (সিএইচসিপি) হিসেবে চাকরিতে যোগ দেন। যোগদানের পর তেঁতুলিয়া হাসপাতাল থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে শুরু করেন প্রাথমিক চিকিৎসা।
২০১৪ সালে ঠাকুরগাঁও সদর হাসপাতালে কমিউনিটি স্কিল বার্থ অ্যাটেন্ডেন্ট (সিএসবিএ) বিষয়ে ছয় মাসের প্রশিক্ষণ নিয়ে ২০১৫ সালে স্বাস্থ্যসেবার পাশাপাশি শুরু করেন নরমাল ডেলিভারির কার্যক্রম। এভাবেই গত ৯ বছরে এক হাজারের অধিক প্রসূতি নারীর নরমাল ডেলিভারি করিয়েছেন তিনি।