চট্টগ্রাম চট্টগ্রামে এস আলম সুপার রিফাইন্ড সুগার ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের কারখানার পুড়ে যাওয়া চিনির বর্জ্য কর্ণফুলী নদীতে পড়তেই এর বিরূপ প্রভাব শুরু হয়েছে। মঙ্গলবার (৫ মার্চ) থেকে নদীতে মারা যাচ্ছে মাছ, কাঁকড়াসহ নানা জলজ প্রাণী।
এদিন রাত থেকে স্থানীয় লোকজন নদীতে নেমে মাছ ধরছে। আজ বুধবার (৬ মার্চ) সকালে কর্ণফুলী থানাধীন এস আলম সুগার মিলের পেছনে থাকা কর্ণফুলী নদীতে গিয়ে দেখা গেছে স্থানীয় লোকজন বিভিন্ন কায়দায় মাছ ধরছে। এর মধ্যে কেউ হাতজাল দিয়ে আবার কেউ হাত দিয়ে ভেসে থাকা মৃত এবং অর্ধমৃত মাছগুলো ধরছে। মাছ ধরায় জড়িত স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, ‘মঙ্গলবার রাত থেকে নদীতে মাছ মরে যাচ্ছে।
এস আলমের পোড়া চিনি নদীতে পড়ার পর মাছ মরছে। এর আগে এ ধরনের ঘটনা কখন ও ঘটেনি। পোড়া চিনির বর্জ্যগুলো কারখানা থেকে সরাসরি কর্ণফুলী নদীতে পড়ছে। এভাবে থাকলে নদীর মাছ একটি ও থাকবে না। সব মরে ভেসে উঠবে। সরেজমিন দেখা গেছে, এস আলমের পোড়া চিনির বর্জ্য কারখানা থেকে সরাসরি ড্রেনের মাধ্যমে পড়ছে কর্ণফুলী নদীতে। এসব বর্জ্যে নদীর পানির রং পরিবর্তন হয়ে লালচে বর্ণে রূপ নিয়েছে। কর্ণফুলী নদীর কয়েক কিলোমিটার জুড়ে পানির রং পরিবর্তন হয়েছে।
যেসব স্থানে পানি দূষিত হয়েছে শুধু সেসব স্থানেই মরছে মাছসহ অন্যান্য জীব। এ প্রসঙ্গে পরিবেশ অধিদফতর চট্টগ্রাম জেলা কার্যালয়ের পরিচালক ফেরদৌস আনোয়ার বলেন, ‘সুগার মিলের পোড়া চিনি কর্ণফুলী নদীতে পড়ছে এমন তথ্য পেয়ে গতকাল ৬ মার্চ মঙ্গলবার আমাদের ল্যাব থেকে লোকজন গিয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে। বিভিন্ন স্থান থেকে নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। ল্যাবের রিপোর্ট পাওয়ার পর বিষয়টি সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া যাবে।
তিনি আরও বলেন,পানিতে অক্সিজেনের পরিমাণ কমে যাওয়ার কারণে মাছসহ অন্যান্য জীববৈচিত্র্য মারা যাচ্ছে বা দুর্বল হয়ে পড়ছে। অবশ্যই এটি নদীর জন্য ক্ষতির কারণ। এ প্রসঙ্গে বিশিষ্ট পরিবেশবিদ ড. ইদ্রিস আলী বলেন, ‘শিল্পকারখানা গড়ে তোলার আগে কিছু বিষয় মাথায় রাখা উচিত ছিল। তারা ডাম্পিংয়ের জন্য পর্যাপ্ত জায়গা রাখেনি।
এ কারণে কারখানা থেকে পোড়া বর্জ্য পড়ছে কর্ণফুলী নদীতে। এতে নদীর পানি দূষিত হবে। ক্ষতি হবে মৎস্যসম্পদ এবং জীববৈচিত্র্য। এস আলম গ্রুপ হয়তো পুড়ে যাওয়া সম্পদের ক্ষতি একসময় পোষাতে পারবে। পরিবেশের যে ক্ষতি হচ্ছে তা আর পূরণ হবে না।
এ জন্য আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোকে সজাগ হতে হবে। এ প্রসঙ্গে ৬ মার্চ মঙ্গলবার এস আলম গ্রুপের জেনারেল ম্যানেজার (অ্যাডমিন) আকতার হাসান সাংবাদিকদের বলেন, ‘আগুনে পোড়া চিনি কর্ণফুলীতে যাচ্ছে না। এসব নিজস্ব জমিতে ডাম্পিং করা হচ্ছে।
আর নদীতে গেলেও তা নদী কিংবা জীববৈচিত্র্যের কোনও ক্ষতি হবে না। কেননা এখানে কোনও ক্ষতিকারক রাসায়নিক নেই। ফায়ার সার্ভিসের সহকারী পরিচালক এম ডি আবদুল মালেক বলেন, ‘আগুন এখনও জ্বলছে। হয়তো নিভতে আরও সময় লাগবে।
যেখানে আগুন লেগেছে সেটিতে বিপুল পরিমাণ অপরিশোধিত চিনি মজুত ছিল। এগুলো এক ধরনের দাহ্য পদার্থ। পানি দিয়েও এ আগুন নেভানো যাচ্ছে না। এ কারণে আগুন নেভাতে দীর্ঘ সময় লেগে যাচ্ছে। তবে আগুন যাতে ছড়িয়ে না পড়ে আমরা তা নিয়ন্ত্রণ করতে পেরেছি। কবে নাগাদ আগুন নেভানো যাবে তা এ মুহূর্তে বলা যাচ্ছে না।