নওগাঁয় আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে সাজ্জাদ হোসেন (৩৫) নামের এক ঠিকাদারকে কুপিয়ে জখমের ঘটনায় অভিযুক্ত মোশাররফ হোসেন শান্ত (৩২)কে গ্রেপ্তার করেছে সদর থানা পুলিশ। সোমবার (১৫ এপ্রিল) দুপুর আড়াইটার দিকে শহরের বালুডাঙ্গা বাসস্টান্ড এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়। অভিযুক্ত মোশারফ হোসেন শান্ত শহরের চকগোবিন্দ এলাকার আক্কাস আলীর ছেলে। পরবর্তীতে সজীব নামের আরও একজনকে গ্রেপ্তার করেছে থানা পুলিশ।
তার দলীয় তেমন পরিচয় না থাকলেও মোড়ে মোড়ে ব্যানার পোস্টার দিয়ে পবিত্র ঈদ উল ফিতরের শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। সেখানে পদবী হিসেবে লেখা আছে সাবেক ছাত্রনেতা ও পশ্চিম নওগাঁ উচ্চ বিদ্যালয়ের সভাপতি। এদিকে ছাত্রলীগের সূত্রে জানা যায়, ২০১৪ সালের কলেজ শাখার আহবায়ক কমিটির সদস্য ছিল। এরপর কোনো এক কারণে সেই কমিটির কার্য়ক্রম স্থগিত হয়ে যায়।
এর আগে রবিবার (১৪ এপ্রিল) দিবাগত রাত ১০টার দিকে বালুডাঙ্গা বাসস্টান্ড এলাকায় প্রকাশ্য অস্ত্রের মহড়াসহ পল্লী বিদ্যুতের এক ঠিকাদার সাজ্জাদ হোসেনকে কুপিয়ে জখম করার অভিযোগ উঠে মোশারফ হোসেন শান্ত ও তাঁর অনুসারীদের বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় পরের দিন সোমবার (১৫ এপ্রিল) দুপুরের দিকে ভুক্তভোগী সাজ্জাদ বাদী হয়ে ৫ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত ১০-১২ জনকে আসামী করে নওগাঁ সদর মডেল থানায় মামলা দায়ের করেন। বিষয়টি নিশ্চিত করে নওগাঁ সদর মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ জাহিদুল হক বলেন, ভূক্তভোগীর মামলা দায়েরের পর এজাহার নামীয় প্রধান আসামী শান্তসহ দুই জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গ্রেপ্তারের পর পরই তাদেরকে আদালতের মাধ্যমে জেল হাজতে পাঠানো হয়েছে। এবং উর্দ্ধতন স্যারদের দিক নির্দেশনায় অন্যান্য আসামীদেরও গ্রেপ্তারে অভিযান অব্যাহত আছে। ঘটনাটি গুরত্বসহকারে দেখা হচ্ছে বলেও জানান পুলিশের এই কর্মকর্তা। এছাড়া ঘটনাটি জানার পর ওইদিন রাতেই ঘটনাস্থল পরিদর্শন করা হয়েছিলো।
এদিকে রবিবার রাতেই শান্তর প্রকাশ্য অস্ত্রের মহড়াসহ ঠিকাদারকে কুপিয়ে জখমের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেইসবুকে ছড়িয়ে পড়ে। বিষয়টি নিয়ে সংবাদ প্রকাশ হয় বিভিন্ন গণমাধ্যমে। ছড়িয়ে পড়া ওই ভিডিওতে দেখা যায়, মোশারফ হোসেন শান্ত নামে এক যুবক ১০-১২ জনকে সঙ্গে নিয়ে ধারালো অস্ত্র হাতে ঠিকাদার সাজ্জাদের উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। এক পর্যায়ে ধারালো হাঁসুয়া দিয়ে সাজ্জাদের মাথায় কোপ দেয় শান্ত। ওই মুহুর্তে গুরুত্বর জখম বাবাকে বাঁচাতে ছুটে যান সাজ্জাদের ছেলে হৃদয়। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে হৃদয়কেও মারপিট করে শান্তর অনুসারীরা। পুরো এ ঘটনাটি ঘটে ওই সড়কে চলাচলকারী শতাধিক মানুষের সামনে।
অপরদিকে প্রকাশ্য অস্ত্রের মহড়ার এ ঘটনার পর সোমবার সকাল থেকেই শহরজুড়ে আতঙ্ক বিরাজ করছিলো। ঘটনার পর গা ঢাকা দিয়েছিলো মোশাররফ হোসেন শান্ত ও তাঁর অনুসারীরা। তাঁদের আটকে রাত থেকেই সাড়াশি অভিযানে নামে থানা পুলিশ। সর্বশেষ মামলার একঘন্টার মধ্যে এদিন পুলিশ অভিযান চালিয়ে শান্তকে গ্রেপ্তার করে। পরবর্তীতে সজীব নামের আরও একজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে বালুডাঙ্গা বাসস্টান্ড এলাকার স্থানীয় বেশ কয়েকজন বাসিন্দা জানান, বাসস্টান্ডে সোহরাওয়ার্দী নামে একটি মুদিখানার দোকানীকে রাতে আকস্মিক কল দিয়ে হাত পা ভেঙে ফেলার হুমকি দেয় শান্ত। এর কিছুক্ষণ পর ওই দোকানে গিয়ে সোহরাওয়ার্দীকে মারপিট শুরু করেন শান্ত ও তাঁর অনুসারীরা। পুরো এ ঘটনাটির প্রত্যক্ষদর্শী ছিলেন ঠিকাদার সাজ্জাদ। ওই মুহুর্তে বাঁধা দিতে গেলে সাজ্জাদের উপর চড়াও হয় শান্ত ও তাঁর অনুসারীরা। এরপর সেখান থেকে কিছুটা দূরে গিয়ে তাঁরা শুরু করে অস্ত্রের মহড়া। হামলা করা হয় সাজ্জাদ ও তাঁর ছেলের উপর।
ঘটনার বর্ণনায় ঠিকাদার সাজ্জাদ হোসেন বলেন, নববর্ষের দিন স্ত্রী-সন্তানকে নিয়ে ঘুরাঘুরি শেষে বাড়িতে ফিরছিলাম। ফেরার পথে স্ত্রীকে পাঠিয়ে দিয়ে ছেলেকে সঙ্গে নিয়ে বাসস্টান্ডে নেমে যাই। অন্যায়ের প্রতিবাদ করার কারণে এবং এর আগে শান্ত আমার কাছে চাঁদা চেয়েছিল। এই দুই ঘটনার জেরে পথরোধ করে ৫০ হাজার টাকা চাঁদা দাবি করে। শান্তর সাথে থাকা ১০-১২ জনের প্রত্যেকের হাতেই ধারালো অস্ত্র ছিলো। চাঁদা দিতে অস্বীকৃতি জানালে তাঁরা আমার শরীরে বিভিন্ন স্থানে কোপাতে থাকে।
ভুক্তভোগী সাজ্জাদ হোসেন আরও বলেন, আমাকে বাঁচাতে এলে আমার ছেলেকেও তাঁরা বেদম মারপিট করেছে। অনেক আকুতি মিনতী করেও লাভ হয়নি। শান্ত বাহিনীর অত্যাচারে আমাদের পুরো বাসস্টান্ড এলাকায় আমরা অতিষ্ট। স্থানীয় ক্ষমতাশীলদের ঘনিষ্ঠজন হওয়ায় শান্ত কাওকেই তোয়াক্কা করে না। তাই অনেকে শান্তর বেপরোয়া চলাফেরা দেখেও নীরব ভ‚মিকায় থাকে। এ ঘটনায় থানায় মামলা করলে আমাকে হত্যা করবে বলে হুমকি দিয়েছিলো শান্ত বাহিনীর সন্ত্রাসীরা। এরপরেও জীবনের ঝুঁকি নিয়ে মামলা করেছি। আমি ন্যায় বিচার চাই।
ছেলে হৃদয় বলেন, আমার বাবাকে তারা অন্যায়ভাবে মারছিল। আমি এগুতে গেলে তারা আমাকেও মারে। আমি এর বিচার চাই।
একইভাবে কান্নাজড়িত কন্ঠে বিচার চাইলেন সাজ্জাদের স্ত্রী রাজিয়া সুলতানা। তিনি বলেন, আমি বাড়িতে আসার শুনতে পাই আমার স্বামী ও সন্তানকে তারা মারছে। সেখানে গিয়ে তাদের হাত পায়ে ধরেছি আমার স্বামী ও সন্তানকে যেন আর না মারে। আমি এর সঠিক বিচার।
নামকরা নজিপুর হোটেলের স্বত্বাধিকারী ও পৌর আওয়ামী লীগের সদস্য আলী আজগর সোহেল বলেন, আমার হোটেলের কর্মচারি অন্য দোকানে চলে যায়। সেই কথা সোহরাওয়ার্দী নামের একজন বলতে গেলে ওই হোটেল মালিক শান্তকে ফোন দেয়। শান্ত এসে সোহরাওয়ার্দীকে মারতে লাগে। সাজ্জাদ আটকাতে গেলে তাকে তারা এভাবে মারে। এবং আমার হাতে প্রথম আঘাত করে তারা।
এছাড়া শান্ত গ্রেপ্তার হওয়ায় ও অন্যান্য আসামী পলাতক থাকায় তাদের বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।