ফরিদপুরের ঢাকা-খুলনা মহাসড়কের সদর উপজেলার তেতুল তলা এলাকায় মর্মান্তিক বাস- পিকআপ সংঘর্ষের ঘটনায় আরো একজনের মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। মঙ্গলবার দিবাগত রাতে ফরিদপুর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় পপি বেগম(২৫) নামে ওই নারীর মৃত্যু হয়। এর আগে দুপুরে তার স্বামী ইকবাল শেখকে ঢাকায় নেওয়ার পথে মৃত্যু হয়। এ নিয়ে এই দুর্ঘটনায় মোট ১৫ জনের মৃত্যুর ঘটনা ঘটলো। নিহত পপি বেগমের বাড়ি আলফাডাঙ্গা উপজেলার হিদাডাঙ্গা এলাকায়। তার লাশ পিতার বাড়ি বুধবার দুপুরে দাফন-কাফন সম্পন্ন করা হয়েছে।
এই হৃদয়বিদারক দুর্ঘটনায় ওই এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে। দুর্ঘটনার সময় তার ১৮ মাস বয়সী ইয়াসিন শেখ নামে এক শিশু সন্তান বেঁচে যান। শিশু বাচ্চাটি মা-বাবাকে হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে পড়েছে। বারবার মা-বাবা বলে চিৎকার চেঁচামেচি করতে দেখা যায় শিশুটিকে। বর্তমানে শিশু সন্তানটির দাদা-দাদি ছাড়া আর কেউ বেঁচে থাকলো না। পপি ও ইকবালের গত তিন বছর আগে বিয়ে হয়। তারা সকলেই ফরিদপুর জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে ত্রাণে ঢেউ টিন আনতে নিয়ে পিকআপের করে যাচ্ছিলেন।
উল্লেখ্য মঙ্গলবার সকাল ৮টার দিকে ঢাকা-খুলনা মহাসড়কের ফরিদপুরের কানাইপুরের দিকনগর তেতুল তলা এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে। নিহত ১৫ জনের মধ্যে ৮ জন নারী, ৪ জন পুরুষ ও ৩ জন শিশু রয়েছে।
নিহতরা হলেন বোয়ালমারী উপজেলার ছত্রকান্দা রাকিবুল ইসলাম মিলন(৪৫), তার স্ত্রী সুমি বেগম (৩০), দুই ছেলে রুহান মোল্লা (৮) ও আবু সিনাম (৩), ছত্রকান্দা এলাকার মর্জিনা বেগম (৭৩), এছাড়া বোয়ালমারীর কুমরাইল এলাকার মোঃ ইকবাল(৩০) ঢাকায় রেফার্ড করা হলে সেখানে তার মৃত্যু হয়।
আলফাডাঙ্গা উপজেলার হিদাডাঙ্গা এলাকার সূর্য বেগম (৪০), শুকুরুন্নেছা (৭০), কোহিনুর বেগম (৬০),পপি বেগম (২৫), বেজিডাঙ্গা এলাকার নূরানী (২), সোনিয়া বেগম (২৮), জাহানারা বেগম (৪৫), কুসুমদি এলাকার নজরুল ইসলাম (৩৫), চর বাকাইল এলাকার তবিবুর খান (৫৫)। এরই মধ্যে লাশগুলো পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।
ঢাকায় সচিবালয়ের কর্মরত নিহত রাকিবুল ইসলাম মিলনের মামাতো ভাই নুরুজ্জামান খসরু বলেন, ঢাকা থেকে কয়েকটি দরিদ্র পরিবারের জন্য ত্রাণের টিনের ব্যবস্থা করে সোমবার বিকেলে বাড়িতে আসে মিলন। সকালে ফরিদপুর রওনা হয় এলাকার তালিকায় নাম থাকার লোকদের নিয়ে। ত্রাণের টিনগুলো বুঝিয়ে দিয়ে ওই পথেই ঢাকায় চলে যাওয়ার কথা ছিল মিলনের।
এদিকে ফরিদপুরে সড়ক দুর্ঘটনায় ১৫ জন নিহতের ঘটনার কারণ অনুসন্ধানে গঠিত তদন্ত কমিটির সদস্য সংখ্যা ৫ জন থেকে বাড়িয়ে ৭ সদস্যবিশিষ্ট করা হয়েছে। তদন্ত কমিটিতে বুয়েটের একজন প্রকৌশলীকে এক্সপার্ট হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। তদন্ত কমিটির প্রধান করা হয়েছে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মো. আলী সিদ্দিকীকে।
জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে এ তথ্য।
দুর্ঘটনার পরপরই ঘটনাস্থলে ছুটে যান জেলা প্রশাসক কামরুল আহসান তালুকদার ও পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মোর্শেদ আলম সহ প্রশাসনের কর্তা ব্যক্তিরা।
জেলা প্রশাসক কামরুল আহসান তালুকদার বলেন, আগামী তিন কার্যদিবসের মধ্যে তদন্ত কমিটিকে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
তদন্ত কমিটিতে সড়ক ও জনপদ বিভাগ, হাইওয়ে পুলিশ, জেলা পুলিশ, ফায়ার সার্ভিসের একজন করে প্রতিনিধিকে রাখা হয়েছে। পরে দুপুরে তদন্ত কমিটির সদস্য সংখ্যা আরো দুজন বাড়িয়ে সাত সদস্যবিশিষ্ট করা হয়।
এদের মধ্যে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন বিশেষজ্ঞ প্রকৌশলীকে নতুন করে অন্তর্ভুক্ত করে তদন্ত কমিটি সাত সদস্যবিশিষ্ট করা হয়েছে বলে সূত্র জানিয়েছে।
এদিকে, নিহতদের লাশের সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরির পর ময়নাতদন্ত ছাড়াই লাশ হস্তান্তর করা হয়েছে পরিবারের সদস্যদের কাছে। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে নিহতদের দাফনের জন্য প্রত্যেকের জন্য ২০ হাজার টাকা এবং আহতদের চিকিৎসার জন্য ১০ হাজার টাকা করে প্রদান করা হয়েছে।
এছাড়া জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে প্রতিটি নিহত সদস্যর পরিবারকে পাঁচ লক্ষ টাকা আর আহতদের তিন লক্ষ টাকা করে দেয়ার কথা ঘোষণা দেয়া হয়েছে।