গোপালগঞ্জে নির্বাচন–পরবর্তী সহিংসতা ও গুলিকরে মানুষ হত্যার প্রতিবাদে দ্বিতীয় দিনের মত ঢাকা-খুলনা মহাসড়ক অবরোধ করে আন্দোলন করছে বিক্ষুব্ধ জনতা। স্থানীয় সাংসদ শেখ ফজলুল করিম সেলিমের নির্দেশ আন্দোলনকারিরা বেলা ১ টায় আন্দোলনের কর্মসূচি তুলে নেয়। বৃহস্পতিবার (১৬ মে) বেলা সাড়ে ১১ থেকে ১ টা পর্যন্ত নিহতের গ্রামের বাড়ি এলাকায় ঢাকা-খুলনা মহাসড়কের গোপালগঞ্জের চন্দ্রদিঘলিয়া বাসস্ট্যান্ডে এলাকাবাসী এ বিক্ষোভ ও সমাবেশ করে। এসময় বিক্ষুব্ধ জনতা হত্যাকান্ডের বিচারের দাবিতে সড়কের উপর টায়ার জ্বালিয়ে ও গাছের গুড়ি ফেলে তারা এ অবরোধ কর্মসূচি পালন করে।
আন্দোলনকারিরা এসময় বিভিন্ন শ্লোগান দেয়। পরে আন্দোলন কর্মসূচিতে মোটরসাইকেল বহর নিয়ে গোপালগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের শতাধিক নেতা কর্মী কর্মসূচিতে যোগ দেয়। এতে আন্দোলন আরো বেগবান হয়ে ওঠে। আন্দোলন চলাকালে ওই সড়কে দুই পাশে উত্তর ও দক্ষিন পাশে তিন কিলোমিটার এলাকা জুড়ে দূরপাল্লার যানবাহন আটকা পড়ে। এতে ভোগান্তিতে পরে সাধারন যাত্রীরা। আন্দোলনে নেতৃত্বদানকারি সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক সম্পাদক ছবেদ আলি ভূঁইয়া তার বক্তব্য বলেন, বুধবার হত্যাকান্ডের প্রতিবাদে গোপালগঞ্জ শহরের চেচানিয়াকান্দি অনুষ্ঠিত বিক্ষোভ সমাবেশে হত্যার সাথে জড়িতদের সনাক্ত করে গ্রেপ্তারের জন্য প্রশাসনকে আল্টিমেটাম দেওয়া হয়।
কিন্ত হত্যাকান্ডের ৩৬ ঘন্টা অতিবাহিত হলেও এখন পর্যন্ত প্রশাসন কেউকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি। এজন্য বৃহস্পতিবার সাড়ে এগারোটা থেকে দাবি আদায়ের উদ্দেশ্য সর্বস্তরের জনগনকে সাথে নিয়ে মহাসড়ক অবরোধ করে আন্দোলন করছি। সমাবেশে পরাজিত প্রার্থী বিএম লিয়াকত আলি ভূঁইয়া বলেন, নিহত ওসিকুর ভূঁইয়া ছিলেন আমার নির্বাচনি এজেন্ট। তাকে পরিকল্পিত ভাবে গুলি করে হত্যা করে আমার প্রতিপক্ষ। নিহত ওসিকুরের ছোট একটি ছেলে। কি অপরাধ ছিলো ওসিকুরের। আজ তার সন্তান এতিম হলো।
তার স্ত্রী ও মা-বোনকে কি জবাব দিবো? তাই দোষিদের গ্রেপ্তার না করা পর্যন্ত আন্দোলন চলবে। তিনি আরো বলেন,গোপালগঞ্জ-২ আসনের সাংসদ শেখ ফজলুল করিম সেলিম ভাইয়ের নির্দেশে আজ আন্দোলন তুলে নিলাম। তিনি এসময় প্রশাসনের প্রতি এই হত্যা কান্ডে ব্যবহারিত অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার ও গ্রেপ্তারের দাবি জানান।
এতে ব্যার্থ হলে আগামী রোববার (১৯মে)জেলা প্রশাসকের কার্যালয় ঘেয়াও কর্মসূচি পালন করা হবে। নিহতের মা জবেদ বেগম (৬৭) বলেন, আমার ওসিকুরের চার মাসের ছেলেকে যারা এতিম করলো তাদের ফাঁসি চাই। এতিম বাচ্চা কিভাবে বাচঁবে। আমার ছেলের খুনিদের পুলিশ গ্রেপ্তার না করলে আমি বাড়ি ফিরবো।
আন্দোলন চলাকালে এক সংক্ষিপ্ত সমাবেশে বক্তব্য রাখেন, চন্দ্রদিঘলিয়া গ্রামের বাসীন্দা ও বীর মুক্তিযোদ্ধা সবেদআলী ভূঁইয়া , পরাজিত প্রার্থী বিএম লিয়াকত আলী ভূঁইয়া, সাবেক ছাত্রলীগ নেতা ও গোপালগঞ্জ পৌর সভার কাউন্সিলর রনি হোসেন কালুসহ স্থানীয় নেতৃবৃন্দ। পরে পুলিশের অনুরোধে বেলা ১টায় যানবাহন চলাচল শুরু হয়।এলাকায় শান্তি শৃংখলা বজায় রাখতে পুলিশ, র্যাব ও বিজিবি নামানো হয়েছে। তারা সার্বক্ষনিক সদর উপজেলার বিভিন্ন স্থানে টহল অব্যাহত রেখেছে।
উল্লেখ্য মঙ্গলবার সন্ধ্যা সাড়ে ৮ টার দিকে চন্দ্রদিঘলিয়া গ্রামের জাকির বিশ্বাসের ছেলে পরশ বিশ্বাস (১৯) স্থানীয় চন্দ্রদীঘলিয়া বাজারে চায়ের দোকানের সামনে দাঁড়িয়ে পরাজিত চেয়ারম্যান প্রার্থী বিএম লিয়াকত আলী ভূঁইয়ার এক সমর্থক ধূমপান করছিল। এ সময় বিজয়ী চেয়ারম্যান একই গ্রামের কামরুজ্জামান ভূঁইয়ার সমর্থক কালু ভূঁইয়ার ছেলে দ্বীপ ভূঁইয়া ও হিদু ভূঁইয়ার ছেলে সিমন ভূঁইয়া তার বাবার সামনে ধূমপান করায় পরশ বিশ্বাসের সঙ্গে বাকবিতন্ডায় জড়িয়ে পড়ে। একপর্যায়ে পরশ বিশ্বাসকে চড়থাপ্পড় মারেন।
পরশ বিশ্বাস এ ঘটনা তার বাবাকে জানালে দুইপক্ষ দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। সংঘর্ষের সময় প্রতিপক্ষের ছোড়া গুলিতে মো. ওয়াসিকুর ভূঁইয়া (৩২), হাকিম খন্দকার (১৭), মেহেদি বিশ্বাস ( ১৭) ও লিমন ভূঁইয়াসহ (২১) ৫ জন গুরুতর আহত হন।
পরে স্থানীয়রা আহতদের উদ্ধার করে গোপালগঞ্জ ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে গেলে জরুরি বিভাগের চিকিৎসক জুয়েল সরকার মো. ওয়াসিকুর ভূঁইয়াকে মৃত ঘোষণা করেন। গুলিবিদ্ধ অন্য ৪ জনের মধ্যে একজনের শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। অপর ৩ জনকে গোপালগঞ্জ ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালে ভর্তি রাখা হয়েছে।
এ ব্যাপারে গোপালগঞ্জ সদর থানার ওসি মোহাম্মদ আনিচুর রহমান বলেন, এই ঘটনায় এখন পর্যন্ত থানায় মামলা হয়নি। তবে আইন শৃংঙ্খলা ঠিক রাখতে পুলিশের পাশাপাশি র্যাব ও বিজিবির টহল অব্যাহত রয়েছে। মামলা হলে আমারা দ্রুত দোষীদের সনাক্ত করে আইনের আওতায় আনতে সক্ষম হবো।