উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের তৃতীয় ধাপে স্থগিত হওয়া পটিয়ার কাশিয়াইশ ইউনিয়নের পূর্ব পিঙ্গলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে পুনর্ভোটের মধ্যে সড়ক অবরোধ করেছে একজন ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থীর অনুসারীরা।
পটিয়া থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) জসিম উদ্দিন জানান, বুধবার সকাল ১০টার দিকে কেন্দ্রের কাছে পিঙ্গলার টেক এলাকায় গাছ ফেলে সড়ক অবরোধ করা হয়। এ সময় অবরোধকারীরা কেন্দ্রের পথে থাকা এক প্রবাসী ভোটারের মাথা ফাটিয়ে দেয়।
খবর পেয়ে আমরা ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠাই। আহত ব্যক্তি একজন পুরুষ ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থীর অনুসারীদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছেন৷ আবার আরেক প্রার্থীর লোকজন দাবি করেছেন, তাদের গাড়ি ভাংচুর করা হয়েছে। পরে পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এনে সড়ক থেকে অবরোধকারীদের সরিয়ে দিয়েছে জানিয়ে ওসি বলেন, এখন কোনো বাধা নেই। কেন্দ্রে শান্তিপূর্ণ ভাবে ভোট হচ্ছে। স্থানীয় ভোটারদের অভিযোগ, পুলিশের ধাওয়ায় প্রথমে অবরোধকারীরা রাস্তা ছাড়লেও পরে তারা ফিরে আসে এবং বড় বড় কাটা গাছ রাস্তায় ফেলে রাখে। তখন ছবি তোলার চেষ্টা করলে অবরোধকারীরা সাংবাদিকদের হুমকি দেয় ।
পরে পরিচয় পেয়ে তারা কয়েকজন সাংবাদিকদের ছেড়েও দেয়। আহত ভোটার সিদ্দিক আহমদ ফারুক বলেন, আমি ভোট দিতে যাচ্ছিলাম। লাঠি হাতে উড়োজাহাজ মার্কার ব্যাজ পরা কয়েকজন ছেলে আমার মাথায় মেরেছে। চার ধাপের উপজেলা নির্বাচনের শেষ ধাপের ভোট চলছে ৬০ উপজেলায়। সকাল ৮টা থেকে শুরু হয়েছে বিরতিহীনভাবে ভোট চলবে বিকাল ৪টা পর্যন্ত। সকালে এই কেন্দ্রে শতশত মানুষ লাইনে দাঁড়ান ভোট দেওয়ার জন্য। সকাল সাড়ে ৯টা পর্যন্ত শান্তিপূর্ণভাবে ভোট হয়। ওই সময়ে পিঙ্গলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে ১০টি বুথের সামনেই ভোটারের লাইন দেখা যায়।
কিন্তু সড়ক অবরোধের পর সাড়ে ১০টার দিকে আটটি বুথই ফাঁকা হয়ে যায় বলে জানান প্রিসাইডিং কর্মকর্তা মো. ইলিয়াস। তিনি বলেন, সকাল ১০টা পর্যন্ত ৯২৩ ভোট পড়েছে। যা মোট ভোটের ২৫ শতাংশ। কেন্দ্রে কোনো সমস্যা নেই। গত ২৯ মে তৃতীয় ধাপে চট্টগ্রামের পটিয়া উপজেলা পরিষদের নির্বাচন হয়। সেদিন সকালে কাশিয়াইশ ইউনিয়নের পূর্ব পিঙ্গলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে প্রবেশ করে দুই শতাধিক বহিরাগত।
তারা ব্যালট বাক্স, ব্যালট পেপার, সিল ও কালিসহ ভোটের সরঞ্জাম নিয়ে চলে যায়। ওই দিন চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান এবং পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন এবং ওই কেন্দ্রের ভোটগ্রহণ স্থগিত ঘোষণা করেন। ওই রাতে স্থগিত কেন্দ্রটি বাদে পটিয়া উপজেলা পরিষদের ১২৮টি কেন্দ্রের মধ্যে ১২৭টির ফল ঘোষণা করা হয়। পুরুষ ভাইস চেয়ারম্যান পদে আবু ছালেহ মোহাম্মদ শাহরিয়ার (উড়োজাহাজ) ২৩ হাজার ৮৫০ ভোট এবং নিকটতম এমদাদুল হাসান (বই) ২৩ হাজার ৭৩ ভোট পান।
মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে মাজেদা বেগম শিরু (কলস) ২৪ হাজার ৮৯৪ ভোট পেয়ে এগিয়ে থাকেন।
তার নিকটতম সাজেদা বেগম (প্রজাপতি) ২৪ হাজার ৭৩১ ভোট পান। পূর্ব পিঙ্গলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে মোট ভোটার ৩৬১৫ জন। ফলে সেদিন দুই ভাইস চেয়ারম্যান পদেই জয়-পরাজয় ঘোষণা করা সম্ভব হয়নি। তািই এখানে পুনর্ভোটের আয়োজন করা হয়েছে। মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থী মাজেদা বেগম শিরু বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “ভোটারদের স্বতঃস্ফূর্ত উপস্থিতি দেখে দুস্কৃতকারীরা সড়ক অবরোধ করেছে। সকাল থেকে মানুষ ভোট দিতে দেখে তারা ভয় পেয়েছে।
প্রশাসন সড়কের বাধা দূর না করলে ভোটাররা ভয়ে কেন্দ্রে আসবে না। এই কেন্দ্রে ভোটারদের চলাচলের নিরাপত্তা চেয়ে ৩ জুন প্রধান নির্বাচন কমিশনার, রিটার্নিং কর্মকর্তা, জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাসহ সংশ্লিষ্টদের কাছে লিখিত আবেদন করেছিলেন মাজেদা বেগম শিরু।
তখন রিটার্নিং অফিসার ও পুলিশ কর্তারা অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন সহ সার্বিক নিরাপত্তা গ্রহণের বিষয়ে আশ্বস্ত করেছিলেন। সকাল থেকে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট জিমরান মোহাম্মদ সায়েক ও পটিয়া থানার ওসি জসিম উদ্দিন কেন্দ্রটিতে দায়িত্ব পালন করছেন।