ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গা উপজেলায় তালিকাভুক্ত আবাদি কৃষকের কাছ থেকে ধান ক্রয় না করে সুবিধামতে অন্য জায়গা থেকে কম দামে আমন ধান কিনে সরকারি খাদ্য গুদামে বিক্রি করে মুনাফা লুটছে অফিস সহ সিন্ডিকেট প্রভাবশালীরা। আর এতে সহায়তা করছে খোদ ভারপ্রাপ্ত খাদ্যগুদাম কর্মকর্তা সানাউল্লাহ।
তবে কর্মকর্তারা বলছেন, বাজারে ধানের দাম বেশি হওয়ায় কৃষক ধান দিচ্ছে না।ধান ক্রয় করে লক্ষ্যমাত্রা পুরন না করলে আর কোন বরাদ্দ আসবে না।আপনারা যত পারেন ধান দেন।সরকারি লক্ষ্যমাত্রা পুরন করতে যে কোন লোকের কাছ থেকে ধান ক্রয় করছি।
এবার সরকারিভাবে প্রতি মণ আমন ধানের সংগ্রহ মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে এক হাজার ২৮০ টাকা (প্রতি কেজি ৩২ টাকা)। উপজেলায় আমন ধান ১৩৭ মে.টন ,আমন সিদ্ধ চাউল ১২৫ মে. টন প্রতি কেজি ৪৫ টাকা, আতপ চাল ৪৩ মে. টন প্রতি কেজি ৪৪ টাকা দরে এবং একইঙ্গে ৩৪ টাকা দরে গম কেনারও সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
৩১ আগস্ট পর্যন্ত কেনা হবে। কৃষকদের জন্য আমন ধানই মুখ্য। কারণ চাল বিক্রি করেন মালিকরা। এবার গত বছরের চেয়ে ধানের দাম প্রতি কেজিতে দুই টাকা বেশি ধরা হয়েছে। কিন্তু প্রকৃত কৃষকরা সরকারের কাছে ধান বিক্রি করতে পারছেন না বলে অভিযোগ উঠেছে।
উপজেলার কৃষক রিপন মিয়া বলেন, নানা অজুহাতে আমাদের আটকে দেওয়া হয়। এরমধ্যে আছে কৃষক কার্ড, ময়েশ্চার (আর্দ্রতা), ধানে চিটা। কেউ কেউ কেন্দ্রে নিতে পারলেও এইসব অজুহাতে ধান ফেরত দেয়া হয়। আমাদের পরিবহন খরচ গচ্চা যায়।তাই বাধ্য হয়ে ১০০০-১১০০ টাকা হাটে বাজারে মণ বিক্রি করছি।
এবার দুই একর জমিতে আমন আবাদ করেছেন উপজেলার কৃষক নাসির উদ্দিন। ফলনও ভালো পেয়েছেন। তিনি জানান, প্রথমে কৃষককে কৃষি কার্ড পেতে হয়, ব্যাংক অ্যাকাউন্ট থাকতে হয়। এরপর ধান নিয়ে গেলে লটারি করা হয়। লটারিতে যাদের নাম আসে তাদের ধানের আর্দ্রতা পরীক্ষা করা হয়। যদি আর্দ্রতা ১৪ শতাংশের বেশি হয় তাহলে ধান নেয় না।
অভিজ্ঞতার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, গত বছর আমার যে ধান সঠিক আর্দ্রতা নেই বলে ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছে সেই ধান সিন্ডিকেটের কাছে বিক্রি করার পর তাদের কাছ থেকে একই ধান কিন্তু ক্রয় কেন্দ্র নিয়েছে। সিন্ডিকেটের সঙ্গে খাদ্য গুদাম কর্মকর্তাদের একটা অবৈধ যোগাযোগ আছে। তারা মিলে একটা সিন্ডিকেট।
কিন্তু কৃষকের কাছে তো আর্দ্রতা মাপার যন্ত্র নেই, ফলে ধান কেন্দ্রে নিয়ে গিয়ে বিপাকে পড়েন তারা। কারণ তাকে বাড়ি গিয়ে ধান আরো শুকিয়ে আনতে হলে পরিবহন খরচ লাগে। আর কৃষি কার্ড পেতেও আছে জটিলতা। কারণ জমির মালিকানা না থাকলে পাওয়া যায় না। বর্গা চাষিরা তাই কৃষি কার্ড পান না। আর ব্যাংক অ্যাকাউন্টও নেই অনেকের। যদিও ১০ টাকায় অ্যাকাউন্ট খোলার সুযোগ আছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক উপজেলা কৃষি অধিদফতরের একজন কর্মকর্তা বলেন, আসলে স্হানীয় এবং কর্মকর্তাদের পছন্দনীয় ব্যবসায়ীদের নিয়ে সিন্ডিকেট করেন। ফলে অনেক প্রকৃত কৃষক কেন্দ্র পর্যন্ত যেতে পারেন না। কিন্তু এটা তো আমরা দেখতে পারি না।
আমাদের কাজ কৃষি তালিকা করে দেওয়া।তবে পুরাতন তালিকা দিয়েই ধান কেনা হয় এটা জানি অন্য দপ্তরে মাথা ঘামানো যায় না। এটা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাজ। যারা দালাল তাদেরও কৃষি কার্ড আছে। আর দালালরা তো সংঘবদ্ধ।
উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক ও খাদ্য ক্রয়কমিটি সদস্য জগৎ জ্যোতি বিশ্বাস বলেন, কৃষক ছাড়া অন্য কেহই গুদামে ধান বিক্রির সুযোগ নেই। আপনার মাধ্যমে এই মাত্র অনিয়মের কাথা শুনলাম।কোন কৃষক যদি অভিযোগ করেন তাহলে তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্হা নিবো।
খাদ্য ক্রয়কমিটি সভাপতি ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সারমীন ইয়াছমীন বলেন,এখন অভিযোগ শুনতে পেলাম,খোজ নিয়ে দেখবো।তদন্ত করে অনিয়ম হলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্হা গ্রহন করবো।ভারপ্রাপ্ত খাদ্যগুদাম কর্মকর্তা সানাউল্লাহ