বরিশাল শহর রক্ষা বাঁধ নির্মাণের পর থেকেই ত্রিশগোডাউন এলাকা নগরবাসীর নিকট বিনোদন কেন্দ্রে রূপ নিয়েছে। নদীর তীরবর্তী হওয়ায় খুব সহজেই নগরবাসীকে আকর্ষিত করে।
তাইতো সর্বদাই নগরবাসীর পদচারণায় মুখোরিত থাকে ত্রিশ গোডাউন এলাকা। এখান থেকে নৌকা ও ট্রলারে নদীতে ঘুরে বেড়ায় ভ্রমণপীপাষু নগরবাসী। আর তাই দীর্ঘদিন থেকেই নগরীর চাঁদমারী এলাকার বঙ্গবন্ধু কলোনীর বাসিন্দারা এখানথেকে নৌকা ও ট্রলারে ভ্রমনপীপাষু নগরবাসীকে নদীতে ঘুরিয়ে ও নদীর তীরে ছোট ছোট দোকান করে জীবিকা নির্বাহ করে আসছে। কিন্তু হঠাৎই গত শুক্রবার (১২ জুলাই) চাঁদমারি খেয়াঘাট এলাকায় অবৈধ চাঁদা দাবি করে এক অনাকাঙ্খিত ঘটনার জন্ম দেয় খান হাবিববাহিনী।
মহানগর মৎস্যজীবিলীগ নেতা দাবিদার খান হাবিববাহিনীর সদস্যরা চাঁদমারি খেয়াঘাট থেকে ত্রিশগোডাউন বিনোদন স্পটে এসে নৌকা- ট্রলার ও স্থানীয় দোকানদারদের কাছে নির্দিষ্টহারে চাঁদা দাবি করেন।
হাবিবাহিনীর সদস্যরা নিজেদের চাঁদমারি খেয়াঘাটের ইজারাদার দাবী করে জানান, এখান থেকে নৌকা- ট্রলার চলাচল ও দোকান করতে হলে তাদের দাবীকৃত টাকা দিতে হবে। এই সূত্র ধরে শুক্রবার হাবিববাহীনির লোকজন পরিচয়ে এনায়েত, নাসিরসহ অন্যান্যরা এক বৃদ্ধা ও তার ছেলের উপরে হামলা করে। এসময় ওই বৃদ্ধার ছেলেকে মেরে মাথাও ফাটিয়ে দেয় হাবিববাহিনী।
এ ঘটনায় একপর্যায়ে এলাকাবাসীর তোপের মুখে পড়েন হাবিববাহিনীর সদস্যরা। এসময় নাসির নামে খান হাবিবের একলোককে বেঁধে রাখে উত্তেজিত জনতা। ঘটনাস্থলে এলাকাবাসী জড়ো হয়ে শেখ হাসিনার বাংলাদেশ, চাঁদাবাজদের দিন শেষ এই স্লোগানে মুখরিত করে তোলে। আর মুহূর্তের মধ্যেই এই ঘটনা সোস্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়ে যায়। এসময় স্লোগানের সাথে সাথে এলাকাবাসী খান হাবিবের বিরুদ্ধে ঝাড়ু মিছিলও বের করেন।
এ সময় কোতয়ালী থানা পুলিশের টিম ঘটনাস্থলে এসে পরিস্থিতি শান্ত করেন। পরবর্তীতে এলাকাবাসীর তোপে পড়ে পূর্বের মতোই নৌকা ও ট্রলার চলাচল করবে আর দোকানদারও দোকান করবে তাতে কোনপ্রকার টাকাও দিতে হবেনা স্বীকার করে ঘটনাস্থল ত্যাগ করেন খান হাবীব ও তার লোকজন।
এ ঘটনায় প্রত্যক্ষদর্শী লিটু নামে এক ব্যাক্তি বলেন, চাঁদমারি খেয়াঘাটের ইজারা পাওয়া খান হাবিবের লোকজন কিছুদিন ধরেই ত্রিশগোডাউন এলাকা থেকে চলাচলরত নৌকা ও ট্রলারে ট্রিপপ্রতি নির্দিষ্টহারে চাঁদা দাবি করে আসছে।
এছাড়াও বঙ্গবন্ধু কলোনীর কিছু বাসিন্দা ছোট ছোট দোকান করে জীবিকা চালিয়ে আসলে তাদের থেকেও চাঁদা চাচ্ছে খান হাবিবের লোকজন। এরই ধারাবাহিকতায় শুক্রবার এক বৃদ্ধা তার ছেলেসহ একটি কাঠের চৌকি ও টেবিল ট্রলারে নিয়া আসলে খান হাবিবের লোকজন তাদের থেকে ৩শ টাকা দাবি করে। এসময় গরীব অসহায় বৃদ্ধা ও তার ছেলে তাদের দাবিকৃত টাকা দিতে অস্বিকৃতী জানালে তাদের মারধর করে এনায়েতসহ তার সাঙ্গপাঙ্গরা।
এসময় বৃদ্ধার ছেলের মাথা ফাটিয়ে দেয় এনায়েত। আর অসহায় বৃদ্ধার চিৎকারে এলাকাবাসী জড়ো হয়ে খান হাবিবের লোকজনকে অবরুদ্ধ করে রাখলে মুহূর্তেই পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। এ সময় স্থানীয়রা শেখ হাসিনার বাংলাদেশ, চাঁদাবাজদের দিন শেষ বলে স্লোগান দিতে থাকে। তিনি আরো জানান, খান হাবিব চাঁদমারি খেয়াঘাটের ইজারা পেলেও পুরো এলাকাতে চাঁদা তোলার পসরা বসিয়েছে। তার লোকেরা স্থানীয়দের হুমকী ধামকি দিচ্ছে। এই খান হাবিবের থেকে স্থানীয়রা মুক্তি চায় বলেও জানান তিনি।
সূত্রে জানাগেছে, বরিশাল সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে আবুল খায়ের আব্দুল্লাহ (খোকন সেরনিয়াবাত) বিসিসির মেয়রের দায়িত্ব নেয়ার সাথে সাথেই মাথা চাড়া দিয়ে ওঠে খান হাবিব। আওয়ামী মৎস্যজীবীলীগ বরিশাল মহানগরের সভাপতি খান হাবিব বর্তমান মেয়র খোকন সেরনিয়াবাতের ডান হাত পরিচয় দিয়ে বিভিন্নস্থানে দখল মিশনে নামে। গত বছরও তারা পেশিশক্তি ব্যবহার করে প্রকৃত ইজারাদার থেকে একতলা লঞ্চঘাট ও বালুরঘাটটি অবৈধভাবে দখলে নেয়। এ বছরও প্রকৃত ইজারাদারকে ঘাটের দখল না দিয়ে নিজেদের দখলে রাখতে বিভিন্ন পন্থা অবলম্বন করে।
যা নিয়ে একাধিক গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হয়। তারপরেও টনক নড়েনি প্রশাসনের। খান হাবিবের বিরুদ্ধে নেয়া হয়নি কোন ব্যবস্থা। এ কারনেই দিনে দিনে আরো বেপরোয়া হয়ে উঠছে খান হাবিব ও তার সাঙ্গপাঙ্গরা। এদের লাগাম টানবে কে? আর কেই বা রুখবে বেপরোয়া খান হাবিবকে? এমনই প্রশ্ন নগরবাসীর।
এ ঘটনায় খান হাবিব জানান, তার ইজারাকৃত ঘাটের সীমানা আছে, সেই সীমানার মধ্যেই তার লোকের টাকা উঠায়। কিন্তু বঙ্গবন্ধু কলোনীর বাসিন্দারাই সেখানে উল্টো ঝামেলা করে।
সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত © ওয়েবসাইট এর কোনো লেখা, ছবি অনুমতি ছাড়া কপি করা নিষেধ