ফরিদপুরের বোয়ালমারীতে স্বনামধন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কাজী সিরাজুল ইসলাম মহিলা কলেজের অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগে উঠেছে।
তদন্তে অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় প্রতিষ্ঠানটির ছাত্রীরা অধ্যক্ষের পদত্যাগ বা অপসারণের দাবিতে বিক্ষোভ করেছে।
অভিযুক্ত অধ্যক্ষের নাম মো. ফরিদ আহমেদ।
২৯ আগস্ট বেলা ১১টা থেকে দুপুর ২ টা পর্যন্ত কলেজ ক্যাম্পাসে এ বিক্ষোভ করে শিক্ষার্থীরা। পরে গভর্নিং বডির সদস্য শহীদউদ্দিন মিয়া দিপুর নিকট দুই কর্মদিবসের মধ্যে অধ্যক্ষ ও তার দুর্নীতির দোসর শরীরচর্চা শিক্ষক আব্দুর রউফের পদত্যাগের সময় বেঁধে দেয় শিক্ষার্থীরা। দাবি আদায় না হলে পরবর্তীতে কঠোর আন্দোলনের হুশিয়ারিও জানান তারা।
শিক্ষার্থীরা বলেন- অধ্যক্ষ মো ফরিদ আহমেদ স্বনামধন্য এ প্রতিষ্ঠানের দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকেই কলেজটির শিক্ষার পরিবেশ চরম ভাবে অবনতি ঘটেছে। তিনি শিক্ষকদের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করে রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় নানা অনিয়ম ও দুর্নীতি করে আসছেন।
কলেজটির পরিচালনা পর্ষদ, অধ্যক্ষ ও শরীরচর্চা শিক্ষক আব্দুর রউফ খানের বিরুদ্ধে আনীত ১৪ টি অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগে ৪ সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে। তদন্ত কমিটি আর্থিক অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ গুলো খতিয়ে দেখে।এতে অধ্যক্ষ ফরিদ আহমেদের ব্যাপক অর্থিক অনিয়ম ও দুর্নীতি ধরা পরে। এতে গভর্নিং বডির অনুমোদন ছাড়াই বিধি বহির্ভূতভাবে নানা প্রকল্প নিয়ে অর্থ আত্মসাৎ প্রমাণিত হয়।
তদন্ত কমিটি গত ২০২৩ খ্রিস্টাব্দের ৮ নভেম্বর এ বিষয়ে তদন্ত পূর্বক প্রতিবেদন জমা দেন। এতে কলেজটির প্রতিষ্ঠাতা ও গভর্নিং বডির সভাপতি, ফরিদপুর -১ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য আলহাজ্ব কাজী সিরাজুল ইসলাম বরাবর অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করা হলেও তা অদ্যবধি বাস্তবায়ন না হওয়ায় শিক্ষার্থীরা এ বিক্ষোভ করে। এ ছাড়া শরীরচর্চা শিক্ষক আব্দুর রউফ খানের বিরুদ্ধে হোস্টেল পরিচালনায় নানা অনিয়ম ও অধ্যক্ষের দুর্নীতির আপাদমস্তক সহায়তাকারী ও বিভিন্ন প্রকল্পে ঠিকাদারি করে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ আনেন শিক্ষার্থীরা।
শরীরচর্চা শিক্ষক আ. রউফ খান এর দৃষ্টি আকর্ষণ করলে তিনি দুর্নীতিতে তার সম্পৃক্ততার বিষয়টি এড়িয়ে যান। জানা যায় এক সময় এ কলেজে দুর দুরান্তের শতাধিক শিক্ষার্থী কলেজ হোস্টেলে থেকে পড়ালেখা করলেও শরীরচর্চা শিক্ষক হোস্টেলের দায়িত্ব নেওয়ার পর খাবারের মান নিম্নমানের দেওয়া ছাড়াও অতিরিক্ত অর্থ আদায় ও দুর্ব্যবহারে বর্তমানে হোস্টেলে মাত্র ৬ জন শিক্ষার্থী থেকে নিজেরাই মেস করে থাকেন।
অধ্যক্ষ ফরিদ আহমেদ বলেন- এখানে দুর্নীতির কোনো সুযোগ নাই। আয়-ব্যয় সব ব্যাংকের মাধ্যমে হয়। এবং প্রতিটি প্রকল্প কমিটি সম্পাদন করে থাকে। আমি গভর্নিং বডির নিকট লিখিত জবাব দিয়েছি। আমি কোনো প্রকার অনিয়ম ও দুর্নীতির সাথে জড়িত নই।
তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপক মো. আব্দুর রশিদ জানান- ৩য় ও চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীদের আনীত অভিযোগ তদন্ত করে আমরা ব্যাপক আর্থিক অনিয়মের প্রমাণ পাই। তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার পর আমাদের ১ টি সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। তাতে অধ্যক্ষ মহোদয়ের নিকট লিখিত জবাব চাওয়া হয়েছে। তিনি সেটা জমাও দিয়েছেন। পরবর্তী গভর্নিং বডির মিটিংয়ে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার কথা ছিলো। দীর্ঘদিন সভাপতির ব্যস্ততায় মিটিং হয়নি। মন্ত্রণালয়ের প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী বর্তমান সভাপতি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা। তাঁর সাথেও এ বিষয়ে কথা হয়েছে। অচিরেই সভা করে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
কলেজটির সভাপতি ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তানভীর হাসান চৌধুরী বলেন- শিক্ষার্থীরা আমার নিকট এসেছিল। কলেজটির অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগের একটি লিখিত জবাব তিনি জমা দিয়েছেন, অচিরেই পরবর্তী সভা ডেকে এ বিষয়ে যাচাই-বাছাই করা হবে, দোষী প্রমাণিত হলে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। শিক্ষার্থীদের এসময় পর্যন্ত ধৈর্য ধরার পরামর্শ দিয়েছি।