নওগাঁয় ঈদগাহের জমি খারিজের নামে কল্লোলের বিরুদ্ধে ৫৫ হাজার টাকা ঘুষ নেওয়ার অভিযোগ

অনলাইন ডেস্ক:
  • আপডেটের সময় : সোমবার, ২ সেপ্টেম্বর, ২০২৪
59.3kভিজিটর

সুবীর দাস,নওগাঁ জেলা প্রতিনিধি:চোরে না শুনে ধর্মের বানী “ধর্মপ্রাণ মুসলিম সম্প্রদায়ের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযহা। এ দুই ঈদের জামাত যে জায়গায় অনুষ্ঠিত হয় সেই ঈদগাহের জমি খারিজ করতেই ঘুষ লেগেছে ৫৫ হাজার টাকা। ঘটনাটি ঘটেছে নওগাঁ সদর উপজেলার মধ্য-দূর্গপুর গ্রামের ঈদগাহ মাঠের জমি খারিজ গিয়ে।

অভিযুক্ত ব্যক্তি হচ্ছেন- বাংলাদশে ভূমি অফিসার কল্যাণ সমিতি নওগাঁ জেলা শাখার সভাপতি ও সম্প্রতি দুর্নীতির অভিযোগে বদলী হওয়া নওগাঁ সদর-চন্ডিপুর ভূমি ইউনিয়ন সহকারী কর্মকর্তা মৌদুদুর রহমান (কল্লোল)। বর্তমানে তিনি জেলার মহাদেবপুর উপজেলার রাইগাঁ এনায়তেপুর ইউনিয়ন ভূমি অফিসে কর্মরত আছেন।
তথ্য অনুসন্ধানে জানা যায়, নওগাঁ সদর উপজেলার মধ্য-দূর্গপুর কেন্দ্রীয় ঈদগাহ মাঠের জায়গাটি দুইজন দাতা ১২ শতাংশ করে মোট ২৪ শতাংশ জায়গা দান করেন। কিন্তু সে জায়গাটি এতদিন খারিজ করেননি স্থানীয় গ্রামবাসী। গত প্রায় ৫ মাস আগে ঈদগাহ সেই জমিটি দুইটি পৃথক খারিজ আবেদন করেন ঈদগাহ কমিটি। এরপর যোগাযোগ করেন ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা মৌদুদুর রহমান (কল্লোল) এর সঙ্গে। তিনি সব কাগজ যাচাই করে এটি খারিজ করে দেয়া যাবেনা বলে জানান। পরে ঈদগাহ মোতায়াল্লী যান ভূমি অফিসে, সে সময় কল্লোল বলেন ৬০ হাজার টাকা দিলে খারিজ করে দিব, অন্যথায় হবেনা। ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান জানিয়ে অনেক অনুনয় বিনয় করার পর ৫ হাজার টাকা ছাড় দিতে রাজি হন ভুমি সহকারী কর্মকর্তা কল্লোল। এরপর কয়েকদিন আগে টাকা নিয়ে কাজটি করে দেন তিনি।
এদিকে ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান ঈদগাহের মাঠের জমি খারিজ করতে ৫৫ হাজার টাকা ঘুষ নেওয়ার বিষয়টি জানাজানি হলে গ্রামবাসীর মধ্যে ব্যাপক ক্ষোভ সৃষ্টি হয়। যেখানে প্রতি খারিজ সরকারি ফি ১১৫০ টাকা হিসেবে ২টি খারিজে দুই হাজার ৩শ টাকা লাগার কথা সেখানে ৫৫ হাজার টাকা নিয়েছেন তিনি। এমন পুকুর চুরি দুর্নীতি বন্ধে সরকারসহ প্রাশাসনের কঠোর হস্তক্ষেপ কামনা করছেন ধর্মপ্রাণ মুসল্লিসহ পুরো এলাকাবাসী।

মধ্য দূর্গপুর কেন্দ্রীয় ঈদগাহ মাঠের সাধারণ সম্পাদক আবুল কালাম আজাদ বলেন, সভাপতি-ক্যাসিয়ারসহ আমরা যখন কাগজপত্র নিয়ে কল্লোল সাহেবের কাছে গেলাম তখন তিনি দেখে বলেন এটা খারিজ হবেনা। পরে মোতায়াল্লী গিয়ে কথা বলে ৫৫ হাজার টকা কন্টাক্ট করেছে। সেই কন্টাক্ট অনুযায়ী টাকা নিয়ে খারিজ বের করে দিয়েছে।

মধ্য দূর্গপুর ঈদগাহ মাঠ ও মসজিদের মোতায়াল্লী নজরুল ইসলাম বলেন, আমি যখন কল্লোল সাহেবের নিকট গিয়ে খারিজটা পার করে দেয়ার অনুরোধ করি, তখন তিনি বলেন ৬০ হাজার টাকা লাগবে খারিজ পার করতে। অনেক অনুরোধের পর ৫ হাজার টাকা কমাতে রাজি হন। সেদিন তার হাতে ৩০ হাজার টাকা দিয়ে আসি এবং কাজ করতে বলি। পরে তার অফিসের এক ছেলেকে বাসায় পাঠায় তার হাতে আরও ২০ হাজার টাকা দেই।এর পরে আমি গিয়ে অফিসে আবার তাকে ৫ হাজার টাকা দিয়ে কাগজপত্র নিয়ে আসি। তিন ধাপে সর্বমোট ৫৫ হাজার টাকা দিয়েছি তাকে।

ঈদগাহের সভাপতি আফজাল হোসেন বলেন, একটা ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের কাজ করতে গিয়ে যদি এত টাকা ঘুষ দিতে হয়। তাহলে সাধারণ মানুষের জমিজমার কাজ করতে তিনি কত টাকা নেন? এগুলার সঠিক তদন্ত হওয়া দরকার, এদের বিচার হওয়া দরকার।

এ বিষয়ে ভূমি সহকারী কর্মকর্তা মৌদুদুর রহমান (কল্লোল) এর সঙ্গে কথা হলে তিনি বলেন, তাদের একটা দলিল ৬৮ সালের সেটা পুড়ে গেছে, ভলিউম নাই এ কারণে আমি না করে দিয়েছিলাম। পরে তাদের অনুরোধে খারিজ প্রস্তাব করেছি, খারিজ করেছে এসিল্যান্ড। আমি কোন টাকা নেইনি, কে টাকা নিছে না নিছে আমি বলতে পারবনা।

নওগাঁ সদর উপজেলার সাবেক ভূমি কর্মকর্তা শওকত মেহেদী সেতু বলেন, আমার কাছে খারিজের প্রস্তাব এসেছে আমি খারিজ করে দিয়েছি। আমি কোন লেনদেন করিনি, এখানে কে টাকা নিয়েছে তা আমার জানা নেই।
এ বিষয়ে নওগাঁ সদর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা এস,এম, রবিন শীষ বলেন, উনি (কল্লোল) তো আমাদের এখানে আর নেই, বদলি হয়ে গেছে। আর যেহেতু এটা একটা ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের বিষয় সেহেতু আমার কাছে কোনো অভিযোগ আসলে আমি উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নিকট জানাবো,তারা যে ব্যবস্থা নেবে সেটাই হবে।

নিউজটি শেয়ার করুন

এই বিভাগের আরও খবর
কপিরাইট ©২০০০-২০২২, WsbNews24.com এর সকল স্বত্ব সংরক্ষিত।
Desing & Developed BY ServerNeed.Com
themesbazarwsbnews25
x