চতুর্থ শিল্প বিপ্লব ও মার্কেটিং এ উচ্চ শিক্ষা

নিজস্ব প্রতিবেদক
  • আপডেটের সময় : রবিবার, ২০ অক্টোবর, ২০২৪
10.8kভিজিটর

চতুর্থ শিল্প বিপ্লব ও মার্কেটিং এ উচ্চ শিক্ষা:-
চতুর্থ শিল্প বিপ্লব (4IR) হলো এক বৈপ্লবিক পরিবর্তন, যা বিশ্বের প্রযুক্তি, অর্থনীতি এবং সমাজের ওপর গভীর প্রভাব ফেলছে। চতুর্থ শিল্প বিপ্লব এর প্রধান বৈশিষ্ট্য হচ্ছে অটোমেশন, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (AI), রোবটিক্স, ইন্টারনেট অব থিংস (IoT), জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং, এবং বিগ ডাটার মতো উদ্ভাবনী প্রযুক্তির সমন্বয়। এই শিল্প বিপ্লব মানব জীবনের প্রায় প্রতিটি ক্ষেত্রকে পরিবর্তন করছে, এবং বিশেষ করে ব্যবসা ও শিক্ষার ওপর এর প্রভাব অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ।


উচ্চমাধ্যমিক শেষে উচ্চ শিক্ষা গ্রহনে ইচ্ছুক বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনার ক্ষেত্রে ব্যবসায় শিক্ষা শিক্ষার্থীদের প্রথম পছন্দের তালিকায় থাকে বিবিএ তথা ব্যবসায় প্রশাসন। স্নাতকের জনপ্রিয় অনুষদ বিবিএ-এর কোন বিষয়টিকে মুখ্য হিসেবে গ্রহণ করবে এ নিয়ে সংকোচ থাকে অনেকের মনে। তবে সময়ের প্রেক্ষাপটে দক্ষতাভিত্তিক ক্যারিয়ার ও উচ্চশিক্ষার অবারিত সুযোগসম্পন্ন স্মার্ট বাংলাদেশের স্মার্ট সাবজেক্ট হিসেবে অনেকে এগিয়ে রাখেন মার্কেটিংকে।

পড়াশোনার ক্ষেত্র হিসেবে মার্কেটিং সাবজেক্ট কেন বেছে নেব ? মার্কেটিং কেন পড়ব ? এই প্রশ্নের উত্তর আপনার হাতের নাগালেই। গুগলে সার্চ করে যদি আপনি কোনো জব সাইটে যান, বিশেষ করে ইন্টারনেট এ বিভিন্ন জব সাইট এ গেলেই দেখবেন সেখানে বিভিন্ন জব ক্যাটাগরি ও কোন ক্যাটাগরিতে কয়টি জব আছে সেটি দেওয়া আছে। সেখানে যদি ১০০ টি চাকরির বিজ্ঞপ্তি দেওয়া থাকে তার মধ্যে ৬০-৭০% বিজ্ঞপ্তিই থাকে মার্কেটিংয়ের জব সম্পর্কিত। এখানে আপনি মার্কেটিংয়ের বেসিক টু অ্যাডভান্স থেকে শুরু করে উচ্চ বেতনের চাকরিও পাবেন। বাংলাদেশে মার্কেটিংয়ে পড়ার প্রথম কারণ হতে পারে কর্মক্ষেত্রের অবারিত সুযোগ।


আমরা জানি, মার্কেটিং একটি ডায়নামিক একটা বিষয়। বিবিএ র অন্যান্য বিষয়ের পাশাপাশি এখানে মার্কেটিং বিষয় হচ্ছে ক্রেতা সংশ্লিষ্ট । বিক্রয় কৌশল, ক্রেতা সন্তুষ্টি, ক্রেতা সন্তুষ্টির মাধ্যমে মুনাফা অর্জন, বিজনেস স্ট্র্যাটেজি, কীভাবে ব্যবসায় শুরু করবে এবং ব্যবসায়কে বড় করবে, ব্যবসাকে সফল এটা করতে গেলে সমসাময়িক কী ধরনের বিপত্তি বা চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হতে হয় এবং তা থেকে উত্তরণের উপায়সহ আপ টু ডেট শিক্ষা প্রদান করা হয়ে থাকে। এ ছাড়াও গতানুগতিক মার্কেটিংয়ের পাশাপাশি ডিজিটাল মার্কেটিংয়ের কলাকৌশলগুলোও শেখানো হয় মার্কেটিং কোর্সে।


চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের সবচেয়ে বড় দিক হলো প্রযুক্তিগত উদ্ভাবন এবং স্বয়ংক্রিয়তার প্রসার। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ও মেশিন লার্নিং বর্তমানে বিভিন্ন জটিল কাজ সম্পাদনের ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হচ্ছে, যা আগে শুধুমাত্র মানুষের মেধার ওপর নির্ভর করত। রোবটিক্স এবং অটোমেশনের মাধ্যমে শিল্প-কারখানায় উৎপাদন প্রক্রিয়া আরও দ্রুততর এবং কার্যকর হয়ে উঠেছে। উদাহরণস্বরূপ, জটিলসব চিকিৎসা থেকে শুরু করে অত্যাধুনিক গাড়ি নির্মাণের মতো বিভিন্ন কাজ এখন রোবট এবং স্বয়ংক্রিয় যন্ত্রপাতি দ্বারা সম্পন্ন হচ্ছে। এ ছাড়া, ইন্টারনেট অব থিংস (IoT) আমাদের জীবনকে আরও সংযুক্ত ও স্বয়ংক্রিয় করেছে, যা স্মার্ট সিটি এবং স্মার্ট হোমের ধারণাকে বাস্তবে রূপ দিচ্ছে।
বাংলাদেশে চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের সম্ভাবনা অত্যন্ত উজ্জ্বল। দেশের অর্থনীতি ক্রমশ ডিজিটালাইজেশনের দিকে ধাবিত হচ্ছে, এবং তরুণ প্রজন্মের প্রযুক্তির প্রতি আগ্রহ এবং অংশগ্রহণ দিন দিন বাড়ছে। বর্তমানে দেশের তরুণ জনগোষ্ঠীর সংখ্যা প্রায় ৪ কোটি ৭৬ লাখ, যা মোট জনসংখ্যার ৩০%। এই বিপুল পরিমাণ তরুণ জনগোষ্ঠী 4IR-এর প্রযুক্তিগত সুবিধা গ্রহণের জন্য বাংলাদেশকে একটি সম্ভাবনাময় বাজারে পরিণত করেছে।
চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের প্রভাব মার্কেটিং ক্ষেত্রেও ব্যাপক। ডিজিটালাইজেশনের ফলে আধুনিক মার্কেটিং পদ্ধতি ক্রমবর্ধমানভাবে প্রযুক্তি নির্ভর হয়ে উঠছে। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, বিগ ডাটা, এবং অ্যানালিটিক্সের মাধ্যমে গ্রাহক সন্তুষ্টি এবং ব্যবসার সফলতা অর্জন আগের তুলনায় অনেক বেশি কার্যকর হয়েছে। ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানগুলো কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সাহায্যে গ্রাহকের চাহিদা বিশ্লেষণ করে এবং ব্যবসার সঠিক কৌশল গ্রহণ করছে।
ডিজিটাল মার্কেটিং বর্তমানে সবচেয়ে শক্তিশালী এবং জনপ্রিয় মার্কেটিং কৌশল। এটি সোশ্যাল মিডিয়া, ইমেইল মার্কেটিং, এবং সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশনের (SEO) মতো কৌশলগুলোর মাধ্যমে বিশ্বব্যাপী মার্কেটিং কার্যক্রম পরিচালনা করতে সহায়তা করছে। এর ফলে, মার্কেটিং পেশায় নতুন কর্মসংস্থান ও দক্ষতা বৃদ্ধির সুযোগ তৈরি হচ্ছে।
চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের সাথে তাল মিলিয়ে চলতে হলে শিক্ষার্থীদের প্রযুক্তি নির্ভর শিক্ষায় দক্ষতা অর্জন করতে হবে। উচ্চশিক্ষায় শিক্ষার্থীরা বর্তমানে ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগের উপর বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছে, এবং বিশেষ করে মার্কেটিংকে মুখ্য বিষয় হিসেবে বেছে নিচ্ছে। মার্কেটিং এ উচ্চ শিক্ষার মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা ডিজিটাল মার্কেটিং, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, এবং মার্কেটিং অ্যানালিটিক্সে দক্ষতা অর্জন করতে পারে, যা তাদেরকে ভবিষ্যৎ কর্মক্ষেত্রে সাফল্য অর্জনে সহায়তা করে।
বাংলাদেশের জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় , বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় এবং অন্যান্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে মার্কেটিং এবং ব্যবসায় প্রশাসন (বিবিএ) ডিগ্রির চাহিদা ক্রমশ বাড়ছে। ডিজিটাল মার্কেটিং, সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং, এবং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা নির্ভর মার্কেটিং পদ্ধতি শিক্ষার্থীদের প্রযুক্তিগত দিক থেকে আরও সমৃদ্ধ করে তুলছে। ফলে, উচ্চ শিক্ষার মাধ্যমে ছাত্রছাত্রীরা চাকরির বাজারে আরও ভালোভাবে নিজেকে উপস্থাপন করতে সক্ষম হচ্ছে।
চতুর্থ শিল্প বিপ্লব মার্কেটিং ক্ষেত্রসহ বিশ্বব্যাপী বিভিন্ন খাতে এক বৈপ্লবিক পরিবর্তন এনেছে। বাংলাদেশেও এর প্রভাব সুস্পষ্ট, বিশেষ করে তরুণ প্রজন্মের মধ্যে প্রযুক্তি নির্ভর শিক্ষা এবং কর্মসংস্থানের সুযোগ বৃদ্ধি পাচ্ছে। মার্কেটিং এ উচ্চ শিক্ষা এবং প্রযুক্তি নির্ভর দক্ষতা অর্জনের মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা ভবিষ্যতে আরও সফলতার সাথে এই বিপ্লবের সুবিধা গ্রহণ করতে পারবে।অন্যান্য বিষয়ের মতো মার্কেটিং বিষয়ে পড়াশোনায় রয়েছে উচ্চশিক্ষার দারুণ সুযোগ। বিবিএর অন্যান্য বিষয়ের মতো মার্কেটিং নিয়েও বিদেশে এমবিএ, পিএইচডি করার সুযোগ আছে। বিশেষ করে এখনকার সময়ে মার্কেটিং অ্যানালিটিক্স, ডিজিটাল মার্কেটিং, মার্কেটিং উইথ এআই এসব বিষয়ে উচ্চশিক্ষার অনেক সুযোগ আছে।

ড. আবু সাঈদ মো. শহীদুজ্জামান
সহঃ অধ্যাপক, মার্কেটিং বিভাগ
উত্তর বাংলা কলেজ, কাকিনা-লামনিরহাট
Shahiduzzaman.mkt@gmail.com

নিউজটি শেয়ার করুন

এই বিভাগের আরও খবর
কপিরাইট ©২০০০-২০২২, WsbNews24.com এর সকল স্বত্ব সংরক্ষিত।
Desing & Developed BY ServerNeed.Com
themesbazarwsbnews25
x