চট্টগ্রাম–কক্সবাজার রেলপথে ট্রেনে কাটা পড়ে মৃত্যুর সংখ্যা বাড়ছে। এই রুটের স্থানীয় প্রত্যক্ষদর্শী এবং স্টেশন মাস্টারদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, কক্সবাজার রেলপথে দোহাজারী থেকে ট্রেনের গতি বাড়তি থাকে। গড়ে ৭০ কিলোমিটারের উপরে চলে আন্তঃনগর ট্রেন দুটি। দ্বিতীয় নতুন এই রেলপথের আশেপাশের লোকজনের মধ্যে এখনো সচেতনতা সৃষ্টি হয়নি।
তারা যখন তখন রেলপথ পার হতে চান এবং গরু ছাগল, মহিষ সহ কৃষি কাজের ট্রাক্টর, পিক আপ, সিএনজি, অটোরিকশা মোটর সাইকেল পার করার সময় প্রায়ই দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছেন। এতে প্রতি মাসেই লোকজনের প্রাণহানির ঘটনা ঘটছে এই রেলপথে।
বেশ কয়েকজন স্টেশন মাস্টার জানান, এই রেলপথের বৈধ ক্রসিং গুলোর পাশাপাশি স্থানীয়রা যত্রতত্র অনেকগুলো অবৈধ ক্রসিং সৃষ্টি করে গরু পারাপার করছেন, মোটর সাইকেল, পিক আপ, নাসিমন করিমন গাছের গাড়িগুলো পারাপারের ব্যবস্থা করেছেন। ট্রেন যাওয়ার সময়টুকুও তারা অপেক্ষা করছেন না। ফলে দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছেন।
স্টেশন মাস্টার, স্থানীয় জনগণ এবং বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমের খবরে জানা গেছে, গত মে মাস থেকে এই পর্যন্ত কসবাজার রুটে ট্রেনের কাটা পড়ে এবং ধাক্কায় ১২ জনের প্রানহানির ঘটনা ঘটেছে। গতকাল বিকাল ৩টায় রামুতে ট্রেনে কাটা পড়ে দুই যুবকের ঘটনাস্থলে মৃত্যু হয়েছে। তারা মোটর সাইকেল নিয়ে রেলপথ পার হওয়ার সময় চট্টগ্রাম থেকে কসবাজারগামী একটি ট্রেনের ধাক্কায় কাটা পড়ে ঘটনাস্থলেই নিহত হন।
সুত্রে জানা গেছে, দোহাজারী -কসবাজার পর্যন্ত নতুন রেলপথে ট্রেন চলাচল শুরু হয়েছে প্রায় ১ বছর। অথচ এই ১ বছরে এখনো এই রুটের ৯টি স্টেশনের কোনোটাই পুরোদমে চালু করতে পারেনি রেল কর্তৃপক্ষ। এই স্টেশনগুলোর কাজ এখনো শেষ হয়নি। এখনো এই রুটে পুরোদমে সিগন্যালিং ব্যবস্থা চালু হয়নি। প্রতিটি স্টেশনে পর্যাপ্ত লোকবলও নিয়োগ দেয়া হয়নি।
কসবাজার আইকনিক রেলস্টেশনের মাস্টার গোলাম রাব্বানী বলেন, গতকাল বিকেল ৩টার দিকে রামু উপজেলার রশিদনগরের কাহাতিয়া পাড়া এলাকায় ২ যুবক মোটরসাইকেল নিয়ে রেল লাইন পার হওয়ার সময় ট্রেনে কাটা পড়ে মারা গেছেন। এই ঘটনায় আমাদের কারও দায়িত্ব পালনে অবহেলার অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
রামু থানা পুলিশের অফিসার ইনচার্জ (ওসি) ইমন কান্তি চৌধুরী বলেন, দুই বন্ধু মিলে ঈদগাঁও বাজার থেকে বাজার করে বাড়ি ফিরছিলেন। তারা রেল লাইন পার হতে গিয়ে মোটর সাইকেলের ইঞ্জিন বন্ধ হয়ে যায়। এ সময় চট্টগ্রাম থেকে কসবাজারগামী একটি ট্রেন তাদের ধাক্কা দেয়। এতে দুইজন ঘটনাস্থলেই মারা যান। মনসুর নামে এক স্থানীয় বলেন, রেলক্রসিংয়ে কেউ না থাকার কারণে এই ঘটনা ঘটেছে। এইজন্য রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ দায়ী।
গত মাসে ও রামু এলাকায় একজন মারা গিয়েছিলেন। জুলাই মাসে রামুতে আরো ১ জন, আগস্ট মাসে পটিয়া স্টেশনের কাছে ১ জন, সেপ্টেম্বরে চকরিয়া এলাকায় ১ জন মারা গিয়েছিলেন ট্রেনে কাটা পড়ে। এর আগে জুলাই মাসে বোয়ালখালী পটিয়ার কাছাকাছি স্থানে একজন মারা গিয়েছিলেন।
মে মাসে সাতকানিয়া লোহাগাড়া অংশে ১ জন মারা যান। রেল কর্তৃপক্ষ বলছে, আমরা সচেতনতার জন্য নিয়মিত ক্যাম্পেইন পরিচালনা করছি। প্রতিটি এলাকায় মাইকিং করছি। পাশাপাশি রেলওয়ে পুলিশ ও নিয়মিত জনগণকে সচেতন করছে নানা কর্মসূচির মাধ্যমে। স্থানীয় মানুষ সচেতন হলে ট্রেনে কাটা পড়ে মৃত্যুর সংখ্যা অনেক কমে আসবে।
গত ২৭ জুন সকাল ৭টায় পটিয়া উপজেলার গোবিন্দারখীল এলাকায় রেল লাইনের পাশ দিয়ে হাঁটার সময় ট্রেনের ধাক্কায় এক নারী মারা গেছেন। গত ৩ অক্টোবর দুপুর ২টায় চকরিয়া উপজেলার পূর্ব ভেওলা এলাকায় কঙবাজারমুখী ট্রেনে কাটা পড়ে এক বৃদ্ধ মারা যান। গত ৬ অক্টোবর কঙবাজারের চকরিয়া পৌরশহরের কাহারিয়াঘোনার ছনখোলা এলাকায় ট্রেনের ধাক্কায় মোহাম্মদ ইব্রাহিম নামে এক যুবকের মৃত্যু হয়েছে। এদিকে ঈদগাঁওয়ে মে মাসে ট্রেনে কাটা পড়ে এক কৃষকের মৃত্যু হয়েছে।