চট্টগ্রামে জরায়ুমুখ ক্যানসার প্রতিরোধে কিশোরীদের এক ডোজ হিউম্যান পেপিলোমা ভাইরাস (এইচপিভি) টিকায় চট্টগ্রাম জেলায় গত ২৪ অক্টোবর থেকে ৩ নভেম্বর পর্যন্ত অগ্রগতি হয়েছে ৫২ শতাংশ। আর মহানগরে হয়েছে ৪০ শতাংশ। এ ছাড়া আবেদনেও এগিয়ে আছে জেলা।
সেখানে মোট আবেদন পড়েছে লক্ষ্যমাত্রার ৫৬ শতাংশ। এই ধাপে জেলার ১৫টি উপজেলায় লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করা হয়েছে ৩ লাখ ১৮ হাজার জন শিক্ষার্থী। আর মহানগরের লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করা হয়েছে ১ লাখ ৩৬ হাজার জন।
টিকা নিয়েছে ৫৩ হাজার ৬২৩ জন। তবে টিকা দেওয়া শুরুর ১২ দিন পার হলেও এখনো কাটেনি গুজবের প্রভাব। নতুন কোনো কোনো অঞ্চল থেকে অসুস্থ হওয়ার খবর ছড়িয়ে পড়ায় সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগছেন অনেক অভিভাবক। চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (চসিক) স্বাস্থ্য বিভাগ ও জেলা সিভিল সার্জনের কার্যালয় সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে। চিকিৎসকরা মনে করছেন, এই প্রভাব না পড়লে আরও বেশি অগ্রগতি হতো।
এদিকে রবিবার চট্টগ্রামের সাতকানিয়া উপজেলার কেঁওচিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ে দুপুরে ২১ জন শিক্ষার্থী অসুস্থ হয়ে পড়ে। উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. এ কে এম আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, ‘সাইকোজনিক (ম্যাস সাইকোজনিক ইলনেস) কারণে একের দেখাদেখি অন্যরাও অসুস্থ হয়ে পড়েছিল। এতে ভয়ের কোনো কারণ নেই। তার আগে দেশের বিভিন্ন জেলায় টিকা নিয়ে অসুস্থ হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।
এসব কারণে চট্টগ্রামের জেলা ও মহানগরে অভিভাবকরা সিদ্ধান্তহীনতহায় ভুগছেন। জেলার কালুরঘাট বাসিন্দা শহীদ বলেন, ‘আমি কয়েকটি খবর দেখে এখনো সিদ্ধান্ত নিতে পারছি না, মেয়েকে টিকা নিতে বলব নাকি বলব না? পটিয়া বাসিন্দার ওমর ফারুক বলেন, ‘আমি এখনো পর্যবেক্ষণ করছি। টিভিতে খবর দেখে মেয়েরও একটু ভয় লাগছে। এদিকে চট্টগ্রামে স্বাস্থ্য উপদেষ্টা নূরজাহান বেগম বলেছিলেন, ‘জরায়ু ক্যানসার রোধে কার্যকরী এইচপিভি টিকা নিয়ে নানা রকম অপপ্রচার চলছে, নানা রকম কথাবার্তা হয়েছে।
আমি মনে করি, অপপ্রচার সবসময় থাকে। একসময় আমরা যখন ফ্যামিলি প্ল্যানিং নিয়ে কাজ করেছি, ডায়রিয়া নিয়ে কাজ করেছি, তখনো অপপ্রচার ছিল। মানুষের মধ্যে সচেতনতা তৈরি করতে পারলে অপপ্রচার রুখে দেওয়া সম্ভব হবে। এটার ওপর আমরা সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিচ্ছি। এর আগে গত ২৪ অক্টোবর থেকে কিশোরীদের জরায়ুমুখ ক্যানসার প্রতিরোধে এক ডোজ এইচপিভি দেওয়া শুরু করে সরকার। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সম্প্রসারিত টিকাদান কর্মসূচি (ইপিআই) পরিচালিত এ কার্যক্রম চলবে ২৪ নভেম্বর পর্যন্ত।
চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. ইমাম হোসেন বলেন, ‘টিকা নিয়ে আমাদের প্রচার কার্যক্রম এখনো চলমান আছে। আমরা অভিভাবকদের সচেতন করে তুলতে কাজ করছি। আমাদের স্বাস্থ্যকর্মীরাও প্রচার-প্রসারে কাজ করছে। টিকা সম্পর্কে নেতিবাচক ধারণা দূর করতে তাদের ভূমিকা আছে। অন্যদিকে চট্টগ্রাম জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয়ের স্বাস্থ্য তত্ত্বাবধায়ক সুজন বড়ুয়া জানিয়েছেন, জেলায় অগ্রগতি ৫২ শতাংশ।
আর লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৩ লাখ ১৮ হাজার জন। সেই হিসেবে ১ লাখ ৪৩ হাজার ২৪৬ জন টিকা নিয়েছে। জেলায় মোট ৪ হাজার ৩৮৮টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পঞ্চম শ্রেণি থেকে নবম শ্রেণির ১০-১৪ বছরের ছাত্রীদের মধ্যে এ কার্যক্রম চলছে। তিনি আরও জানান, জেলার ফটিকছড়ি উপজেলা আছে শীর্ষে। এই উপজেলায় ৩ নভেম্বর পর্যন্ত টিকা নিয়েছে ২০ হাজার ১১৪ জন শিক্ষার্থী। আর পটিয়ায় ১৪ হাজার ৭১৭ জন, সীতাকুণ্ডে ১২ হাজার ৮৭ জন, রাঙ্গুনিয়ায় ১২ হাজার ৫৫ জন, সাতকানিয়ায় ১১ হাজার ৯৮০ জন, হাটহাজারীতে ১১ হাজার ৯৫৯ জন, বাঁশখালীতে ১১ হাজার ৩৯, আনোয়ারায় ১০ হাজার ৯৩৬ জন, চন্দনাইশে ৮ হাজার ২৬৭, কর্ণফুলীতে ৮ হাজার ১৫৯, লোহাগাড়ায় ১০ হাজার ৫৬৮, মিরসরাইয়ে ১১ হাজার ২৪০, রাউজানে ১০ হাজার ৩৯৬, সন্দ্বীপে ১০ হাজার ১৪৪ জন। মোট ১ লাখ ৭৩ হাজার ১৮৪ জন টিকা নিয়েছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নগরের সরকারি স্কুলগুলোতে অগ্রগতি ভালো হলেও অন্য এলাকার বিদ্যালয়গুলোতে প্রচারের অভাবে টিকা নিচ্ছে না অনেকে। আবার কেউ কেউ জন্মনিবন্ধন জটিলতায় নিবন্ধনও করতে পারছে না। কেউ কেউ আবার নিবন্ধনও করতে জানে না।
ফলে ১২ দিন চলে গেলেও চসিক এলাকায় আবেদন এখনো অর্ধেকে আছে। সচেতন মহল মনে করছে, প্রচার আরও বাড়ানো প্রয়োজন। এমনকি টিকার জন্য নিবন্ধনে পূর্ণ সহযোগিতা করাও প্রয়োজন।
অন্যদিকে চট্টগ্রামের কয়েকটি বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জানিয়েছেন, অভিভাবকদের সম্মতিতে ৯০ শতাংশ শিক্ষার্থীকে তারা টিকার আওতায় আনতে সক্ষম হয়েছেন। মহানগরের ডা. খাস্তগীর সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও এফ এম ইউনুছ বলেন, ‘আমাদের বিদ্যালয়ের ষষ্ঠ থেকে নবমে প্রায় ১৭০০ শিক্ষার্থী আছে।
এর মধ্যে ৮২ শতাংশ মেয়ে টিকা দিয়েছে। জামালখানের শাহ ওয়ালীউল্লাহ ইনস্টিটিউটের প্রধান শিক্ষক মোহাম্মদ আবু সোলেমান বলেন, ‘মোট ৯৬ শতাংশ শিক্ষার্থী টিকা দিয়েছে। তবে অনেকে এখনো রেজিস্ট্রেশন করেনি। আমরা আবারও নোটিশ দিয়ে সচেতন করব।