দেশের মানচিত্রে বরিশালের উত্তরে ঢাকা বিভাগের শরীয়তপুর জেলার কোলঘেসে অবস্থিত হিজলা উপজেলা। উত্তরে শরীয়তপুর জেলার গোসাইরহাট উপজেলা চাদপুর জেলার হাইমচর উপজেলা, দক্ষিণে মেহেন্দীগঞ্জ উপজেলা , পূর্বে লক্ষিপুর জেলার রায়পুর উপজেলা, পশ্চিমে মুলাদী উপজেলা। জেলা সদর হতে দূরত্ব ৫০ কিঃ মিঃ। সর্বগ্রাসী মেঘনা নদী বেষ্টিত এমন একটি উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে যোগদান করেন মোঃ জাহাঙ্গীর হোসেন। ৯ ই এপ্রিল হিজলা উপজেলায় নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে যোগদানের পরে ৮ মাসে একজন মানবিক ইউএনও হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন সাধারণ মানুষের মাঝে।
দিন যত যাচ্ছে তার কর্মযজ্ঞে মুগ্ধতা ছড়াচ্ছেন প্রতিনিয়ত। উত্তাল মেঘনা নদীর পাড়ের এই উপজেলাটিতে ঘুর্ণিঝড় রিমেল মোকাবেলায় তার ভুমিকায় উপকৃত হয়েছেম কয়েক হাজার পরিবার। ঝড় পরবর্তী সময়ে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় নিয়মিত পরিদর্শন করে শুকনো খাবার থেকে শুরু করে খিচুড়ি রান্না করে নিজেই পৌঁছে দিয়েছেন ঘরে ঘরে।বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে নিহত শহীদ মোঃ শাহিন (১৫) এর অসহায় পিতা মোঃ হাসান সাহেবের হাতে আর্থিক সহায়তা প্রদান করেন তিনি, শহীদ মো. শাহিনের অসহায় পরিবারের পাশে হিজলা উপজেলা প্রশাসনের সহায়তা অব্যাহত থাকবে বলে প্রতিশ্রুতি দিয়ে নিয়মিত খোঁজও রাখছেন।
আন্দোলনে আহতদেরও সহয়তা দিয়েছেন এবং প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন পাশে থাকার। উপজেলার বড়জালিয়া ইউনিয়ন এর শারিরীক প্রতিবন্ধী রাশেদা বেগম ও তার ছেলে রাসেল ভুমিহীন, নেই ভিটে বাড়ি, তিনি জানতে পেরে সরকারি জমিতে নিজ অর্থায়নে তাদের বাসস্থানের ব্যবস্থা করেছেন। এছাড়াও বেদে সম্প্রদায়ের মানুষজনকে সহযোগিতা, বাবাকে তার মেয়ে বিয়ে দেয়ার জন্যে আর্থিক সহযোগীতা, কোনো অসহায় নারী যদি সেলাই মেশিন চালাতে পারে তবে তাদের সেলাই মেশিন কিনে দেয়া, পবিত্র ঈদুল আযহা উপলক্ষে এতিম শিশুদের মাঝে ঈদ-সামগ্রি বিতরণের মাধ্যমে ঈদ আনন্দ ভাগাভাগি করে সমাজের অসহায়-পিছিয়ে পড়া মানুষের সাথে ঈদ আনন্দ ভাগাভাগি করার জন্য বিত্তবানদের এগিয়ে আসার জন্য অনুরোধও করেন তিনি। পরিক্ষার্থীদের খেয়া ভাড়া মওকুফ,প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ের কোমলমতি শিক্ষার্থীদের মাঝে গাছের চারা বিতরণ।খেলাধুলার মাধ্যমে শিশুর বিকাশে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কোমলমতি শিক্ষার্থীদের মাঝে ক্রীড়া সামগ্রী বিতরণ।
স্কুল মাদ্রাসার মালিকানাধীন জমি সংক্রান্ত জটিলতা নির্মুল, এবং মাদ্রাসার মালিকানাধীন ১৭টি দোকান ঘর উদ্ধার করে মাদ্রাসাকে বুজিয়ে দেয়া, উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় এলজিইডি কর্তৃক নির্মাণাধীন আরসিসি রাস্তা, ব্রিজ এবং প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নির্মাণ কাজ পরিদর্শন। কাজের যথাযথ মান বাজায় রেখে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কাজ শেষ হয়েছে কিনা তা নিশ্চিত করা সহ বিভিন্ন প্রকল্প নিয়মিত পরিদর্শন।
ভূমিহীন ও গৃহহীন মানুষের জন্য নির্মাণাধীন ঘরের নির্মাণ কাজে সর্বোচ্চ গুণগত মান নিশ্চিতকরণের জন্য পরিদর্শন ও প্রয়োজনীয় নির্দেশনা প্রদান। দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের মাঝে টিন ও চেক হস্তান্তর।
নিম্ন আয়ের মানুষের মাঝে ভর্তূকি মূল্যে টিসিবি পণ্য বিক্রিতে স্বচ্ছতা নিশ্চতকরনে টিসিবি পণ্য বিক্রির কার্যক্রম সরেজমিনে পরিদর্শন করা।
অগ্নিকাণ্ডে ঘরবাড়ি বা ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ক্ষতিগ্রস্ত হলে সহয়তা প্রধান, শারদীয় দুর্গা পুজা উদযাপনে সর্বোচ্চ সহযোগিতা এবং পূজায় সঠিক ভাবে দায়িত্ব পালন করায় গ্রাম পুলিশদের মাঝে চাউল বিতরণ। গলদা চিংড়ি রেনু পোনা সংরক্ষণে অভিযান,
মা ইলিশ সংরক্ষণ অভিযানের ২২ দিন অক্লান্ত পরিশ্রম করে নদী ও স্থল পথে অভিযান চালিয়ে অভিযান সফল করা যা বিগত ১০ বছরের মধ্যে সেরা অভিযান বলে বিবেচিত । মেঘনা নদী থেকে অবৈধ ভাবে বালু উত্তলন এর জন্য ড্রেজার আটক, সরকারি জমির মাটি কেটে নিয়ে যাওয়ায় ভেকু ও ট্রলার আটক করে মোবাইল কোর্ট এর মাধ্যমে জরিমানা আদায়।
কৃষি জমি সুরক্ষায় মোবাইল কোর্ট অভিযান পরিচালনা করে অর্থদণ্ড প্রদান।
নদীভাঙ্গন প্রবণ হিজলা উপজেলার অবশিষ্ট কৃষি জমি সুরক্ষায় নিয়মিত অভিযান ।
অবৈধভাবে ইটভাটা স্থাপন এর অপরাধে অর্থদণ্ড প্রদান এবং মালামাল জব্দ করা ।
স্থায়ী বাঁধ নির্মাণের মাধ্যমে মেঘনা নদীর তীর সংরক্ষণে ৬২৮ কোটি টাকার প্রকল্পটি যা ইতোমধ্যে ২১ টি প্যাকেজে টেন্ডার কাজ সম্পন্ন হয়েছে এবং ২১ টি প্যাকেজের মধ্যে ৮ নং থেকে ১৩ নং প্যাকেজের কাজ চলমান কাজ নিয়মিত পরিদর্শন । এসবের বাইরে গত ৫ ই আগষ্ট এর পুর্ব ও পরবর্তী সময়ে যখন সারা দেশের আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি খুবই নাজুক তখন তিনি অত্যান্ত দক্ষতার সাথে হিজলা উপজেলার আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রেখে প্রশংসা কুড়িয়েছেন সর্ব মহলে। বিভিন্ন রাজনৈতিক ও পেশাজীবি সংগঠনের নেতৃবৃন্দদের নিয়ে করেছেন সম্প্রতি সমাবেশ। হিজলা উপজেলাকে মুক্ত রেখেছেন বড় ধরনের কোনো আশংকা থেকে। তাই সর্বগ্রাসী মেঘনা পাড়ের মানুষ তাকে দেখছে আশার আলো হিসেবে, বলছেন একজন মানবিক ইউ এন ও জাহাঙ্গীর হোসেন।