কালুরঘাট সেতুতে আলো, সংযোগ সড়কে নেই কালো

এম মনির চৌধুরী রানা বোয়ালখালী
  • আপডেটের সময় : মঙ্গলবার, ১২ নভেম্বর, ২০২৪
2.4kভিজিটর

চট্টগ্রামে কালুরঘাট সেতু দীর্ঘ ১৫ মাসের ও বেশি সময় ধরে সারানো হয়েছে ‘বার্ধক্যরোগ’। পিচ ঢালা সেতুতে ট্রেনের সঙ্গে দিনেরাতে চলছে যানবাহন ও। ঝলমল বাতিতে সাজানো সেতু-ওয়াকওয়ে সবই। তবে এতো সব আয়োজন শুধু সেতুর উপরেই। দু-পাশে সেতুর সংযোগ সড়কে নামতেই ঘুটঘুটে অন্ধকারে ভুগতে হবে যানবাহন চালক পথচারী সবাইকে। কালুরঘাট সেতুর দু পাশে সংযোগ সড়কে নেই কোন বাতি। ফলে পথচারীদের মোবাইলের বাতি জ্বালিয়ে ওঠানামা করতে হয় সেতুতে। আর বাতি যানবাহন চলাচলের সময়ে পথচারীদের মোবাইলের ফ্ল্যাশ লাইটের আলো চোখে পড়লেই সামনে আর কিছু দেখেন না চালকরা।

এতে বিপজ্জনক হয়ে ওঠে যানচলাচল। এ যেন রোগশোক সারিয়ে তোলা কালুরঘাট সেতুর আরেক ‘ফোড়া’। শুধু কি তাই! উঠতি বয়সী তরুণ তরুণীদের আড্ডা তো আছেই সড়কে শুয়ে বসে থাকেন কেউ কেউ। কখনো যানবাহন দুর্ঘটনা, কখনো অন্ধকারে সেতুতে উঠতে গিয়ে পথচারীদের সঙ্গে ধাক্কাধাক্কিতে বাকবিতণ্ডাও ঘটছে।

এরমধ্যে অন্ধকার ঘিরে অপরাধীদের দৌরাত্ম্যও মারাত্মক ঝুঁকিতে। কালুরঘাট সেতু দিয়ে দক্ষিণ চট্টগ্রামের বোয়ালখালী ও পটিয়ার অধিকাংশ মানুষ আসা যাওয়া করেন। সময় বাঁচাতে হেঁটে পার হন যাদের বেশিরভাগ।পথচারীদের প্রশ্ন, ঘুটঘুটে অন্ধকার সড়কে একটি ফ্লাডলাইট লাগানোরও ‘মুরোদ’ নেই রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের না কি পথচারী ঘাঁড়ে নিতে চান না!

সোমবার সন্ধ্যায় সাতটর দিকে কালুরঘাট সেতু এলাকায় সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, সেতুর ওপরে ল্যাম্প পোস্টের ফকফকা আলো নজর কাড়ছে দূর থেকেই। তবে কাছে গিয়ে বুঝা গেল সেতুতে উঠতে হলে নিজ গরজেই কাটিয়ে আসতে হবে অন্ধকারের ঘনঘটা। বেশিরভাগ পথচারীও তাই করছেন। মোবাইলের আলোতে কোনোমতে সেতুতে উঠছেন। কম আলোতে কেউ কেউ হোঁচটও খাচ্ছেন।

চাকরিজীবী আমিন বলেন, সেতু চালু করে দেওয়ার আগে অন্তত রক্ষণাবেক্ষণের বিষয়গুলো চিন্তা করা উচিত ছিল। কোথায় কোথায় সমস্যা রয়েছে। পথচারীদের কোনো সমস্যা হচ্ছে কিনা। অনেক পথচারী গভীর রাত করে বাড়ি ফিরেন উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘সেতু চালুর পর মনে হয় না কর্তৃপক্ষের কেউই এগুলো দেখভালের জন্য এসেছেন। সন্ধ্যার পরই যে সেতুর দু’পাশ অন্ধকার হয়ে যায়; এই অবস্থায় বখাটে ছেলেদের উৎপাতে বিশেষ করে মেয়েদের চলাফেরা করাটা অনিরাপদ হয়ে ওঠেছে।

সিএনজি চালক মানিক বলেন, ‘দুপাশে বাতি লাগানোর বিষয়ে এতদিনেও রেল কর্তৃপক্ষ কোনো উদ্যোগ নেয়নি। লাইট না থাকার কারণে যেকোনো সময় বড় কোনো দুর্ঘটনা হয়ে যেতে পারে।
তিনি আরো বলেন, ‘রাতে চাকরি থেকে আসার সময় দেখা যায়, লাইট না থাকার কারণে সেখানে কিছু বখাটে ছেলে স্থান নেয়। অনেক সময় অন্ধকারে তাদের ভালোভাবে খেয়ালও করা যায় না। রাতে আসতেও ভয় লাগে। কখন কি না কি হয়ে যায়। অন্ধকার ওয়াকওয়ের ওপরে বখাটের আড্ডা চলে। কোনো সমস্যা হয়ে গেলে এসবের দায় কে নেবে? দ্রুত দুপাশের এপ্রোচ সড়কে বাতি লাগানো হোক।
রেলওয়ে সূত্রে জানা গেছে, বুয়েটের বিশেষজ্ঞ দলের সদস্যরা সংস্কার কাজ পরিদর্শনকালে কিছু পর্যবেক্ষণের কথা জানিয়েছিলেন। এর মধ্যে, রাতে সেতুতে যান চলাচল যেন বিঘ্ন না ঘটে সেজন্য বিভিন্ন পয়েন্টে লাইট রিফ্লেকটিং রং ব্যবহার, পর্যাপ্ত বাতির ব্যবস্থা করার পরামর্শ দিয়েছিলেন। তবে সেতুর সংস্কারকাজে দায়িত্বপ্রাপ্ত ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ম্যাক্স ইনফ্রাস্ট্রাকচার লিমিটেড সূত্রে জানা গেছে, সেতুর সংস্কারে নকশা অনুযায়ী সেতুর দু’পাশের অ্যাপ্রোচ সড়কে লাইট লাগানোর বিষয়টি ছিল না।

সেজন্য সেখানে লাইট লাগানোর কোনো জায়গা (খুঁটি) রাখা হয়নি। কথা ছিল শুধু সেতুতে লাইট লাগানোর। আর সে সসব লাইটে কোনো ধরনের সমস্যা হলে তা রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব ম্যাক্স ইনফ্রাস্ট্রাকচার লিমিটেডের।
জানতে চাইলে ম্যাক্স ইনফ্রাস্ট্রাকচার লিমিটেডের প্রকল্প ব্যবস্থাপক মো. মেহেদী হাসান বলেন, ‘বুয়েট কর্তৃক প্রণীত নকশায় সেতুর অ্যাপ্রোচ সড়কে লাইটের ব্যবস্থা বা লাগানোর বিষয়টি ছিল না। আমাদের শুধু সেতুর ওপর লাইট লাগানোর কথা ছিল; সেগুলো লাগানো হয়েছে। আর সেতুর ওপরের লাইটগুলোতে কোনো সমস্যা হলে সেটির রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব আমাদের। এ বিষয়ে জানতে রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের সেতু প্রকৌশলী জিসান দত্তের সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলেও তিনি সাড়া দেননি।

৯০ বছরের পুরোনো এ সেতুর সংস্কার কাজ শুরু হয় ২০২৩ সালের ১ আগস্ট। প্রায় ৪৩ কোটি টাকা ব্যয়ে সেতুর সংস্কারকাজ শেষ হয়েছে সম্প্রতি। গত ২৪ সেপ্টেম্বর কালুরঘাট সেতুর সংস্কার কাজ পরিদর্শন করেন বুয়েটের তিন সদস্যের বিশেষজ্ঞ দল। তারা সংস্কার কাজের অগ্রগতি ও গুণগত মান পরীক্ষা শেষে দ্রুততম সময়ের মধ্যে যান চলাচলের জন্য সেতু চালু করে দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছিলেন।

গত ২৭ অক্টোবর সকাল ১০টা থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে সেতুর এপাড় ওপাড় দিয়ে যান চলাচল শুরু হয়। কালুরঘাট সেতুতে যান চলাচলে আপাতত কোনো টোল নিচ্ছে না রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। সর্বোচ্চ ৮ ফুট উচ্চতার সব ধরনের যানবাহন চলাচল করতে পারছে। তবে চলাচল করছে না ট্রাক-বাসের মতো ভারী যান।

নিউজটি শেয়ার করুন

এই বিভাগের আরও খবর
কপিরাইট ©২০০০-২০২২, WsbNews24.com এর সকল স্বত্ব সংরক্ষিত।
Desing & Developed BY ServerNeed.Com
themesbazarwsbnews25
x