“আমরা মনে করি, পুলিশের মধ্যে ‘ফ্যাসিস্ট সরকারের’ প্রেতাত্মারা এখনও অবস্থান করছে। তারা এই সরকারকে ব্যর্থ করতে চায়”, বলেন আইনজীবী নেতা নাজিম উদ্দিন।
চট্টগ্রামে সংঘাতের সব মামলায় চিন্ময়কে প্রধান আসামি করার দাবি সনাতনী জানগণ মঞ্চের নেতা চিন্ময় কৃষ্ণ দাশ ব্রহ্মচারীকে কারাগারে পাঠানোর দিন সংঘর্ষের প্রতিক্রিয়ায় টানা দ্বিতীয় দিন কর্মবিরতি পালন করলেন চট্টগ্রামের আইনজীবীরা।
নিহত আইনজীবী সাইফুল ইসলাম আলিফ হত্যার প্রতিবাদে আজ বৃহস্পতিবার ২৮ নভেম্বর চট্টগ্রাম আদালতে টানা দ্বিতীয় দিন কর্মবিরতি পালন শেষে সমাবেশ থেকে সব মামলায় সনাতনী জানগণ মঞ্চের নেতা চিন্ময় কৃষ্ণ দাশ ব্রহ্মচারীকে প্রধান আসামি করার দাবি জানানো হয়েছে। জেলা আইনজীবী সমিতির সিদ্ধান্তের কারণে গতকাল ২৭ নভেম্বর বুধবারের পাশাপাশি বৃহস্পতিবার সকাল থেকে চট্টগ্রাম আদালতের ৭৪টি আদালতে বিচারিক কার্যক্রম হয়নি। দুপুরে আইনজীবীদের একটি মিছিল বের হয় আদালত প্রাঙ্গণ থেকে।
মিছিলটি নগরীর লালদীঘির পাড় ও কোতয়ালী মোড় থেকে ঘুরে আবার আদালত চত্বরে এসে শেষ হয়। এরপর চট্টগ্রাম পুরাতন আদালত ভবনের সামনের চত্বরে মানববন্ধন ও সমাবেশে অংশ নেন আইনজীবীরা। সমাবেশে চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি মো. নাজিম উদ্দিন অভিযোগ করেন, মঙ্গলবার ২৬ নভেম্বর সংঘাতে পুলিশকে তারা নিষ্ক্রিয় দেখেছেন। তিনি বলেন, “পুলিশ প্রিজন ভ্যান ফেলে দিয়ে দূরে দাঁড়িয়ে ছিল।
আমরা এতে পুলিশের ইন্ধন ছিল মনে করি। আমরা মনে করি, কোন এক জায়গা থেকে এই ষড়যন্ত্র হয়েছে। সনাতনী জাগরণ মঞ্চের নেতা চিন্ময় কৃষ্ণ দাশের সমর্থকরা কীভাবে প্রিজন ভ্যানের কাছে গেছে, সেই প্রশ্ন তুলে তিনি বলেন, “পত্রিকায় দেখেছি, চিন্ময় দাশ প্রিজন ভ্যান থেকে হ্যান্ডমাইক দিয়ে বক্তব্য দিয়েছেন। বক্তব্য দিয়ে বলেছে, তার আন্দোলনে সমর্থকদের এগিয়ে যাওয়ার জন্য। যতগুলো মামলা হবে এই চিন্ময় দাশ যেন এক নম্বর আসামি হয়। যদি তাকে আসামি করা না হয়, তাহলে আমরা মানব না।
অন্তর্বর্তী সরকারকে ব্যর্থ করার জন্য ‘ষড়যন্ত্র’ হচ্ছে দাবি করে এই আইনজীবী নেতা বলেন, “পুলিশ নীরব ভূমিকা পালন করছে। আমরা মনে করি, পুলিশের মধ্যে ‘ফ্যাসিস্ট সরকারের’ প্রেতাত্মারা এখনও অবস্থান করছে। তারা এই সরকারকে ব্যর্থ করতে চায়। আমরা ব্যর্থ হতে দেব না। আইনজীবীদের পরবর্তী কর্মসূচি বিষয়ে জানতে চাইলে সমিতির সভাপতি নাজিম উদ্দিন বলেন, “ আগামী রোববার বসে আমরা সমিতির পরবর্তী কর্মসূচি নির্ধারণ করব। সেদিন বেলা ২টায় শোক মিছিল হবে।
“সাইফুল ইসলাম আলিফ হত্যার ঘটনায় তার পরিবার মামলা করবে। মামলা পরিচালনায় আমরা সমিতির পক্ষ থেকে সব সহযোগিতা করব। চিন্ময় কৃষ্ণ দাশকে কারাগারে নেওয়ার সময় সহিংসতা ও আইনজীবী খুনের ঘটনায় আর ও ৮ জনকে গ্রেপ্তারের কথা জানিয়েছে পুলিশ। নগর পুলিশের উপ কমিশনার (ক্রাইম) রইছ উদ্দিন বলেন, “তাদের মধ্যে ২ জনকে সহিংসতার ঘটনায় ছড়িয়ে পড়া ছবি থেকে শনাক্ত করা হয়েছে।
মঙ্গলবারের ওই ঘটনায় ৩ টি মামলা করেছে পুলিশ; এ পর্যন্ত মোট ৩৫ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তবে আলিফ হত্যার ঘটনায় বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত কোনো মামলা হয়নি। গত সোমবার ২৫ নভেম্বর ঢাকায় আটকের পর রাষ্ট্রদ্রোহ মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে মঙ্গলবার চট্টগ্রাম আদালতে তোলা হয় চিন্ময়কে।
তার জামিন আবেদন বাতিল করে কারাগারে পাঠানোর আদেশের পর আদালত প্রাঙ্গণে প্রিজন ভ্যান ঘিরে বিক্ষোভ করে সনাতনী সম্প্রদায়ের লোকজন। ৩ ঘণ্টা পর পুলিশ সাউন্ড গ্রেনেড ছুড়ে বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করে চিন্ময় দাশকে কারাগারে নিয়ে যায়। বিক্ষোভকারীরা আদালত সড়কে রাখা বেশ কিছু মোটরসাইকেল, প্রাইভেটকার,
আদালতের মসজিদে ভংয়কর তান্ডব চালায় এতে । এরপর আদালতের সাধারণ আইনজীবী ও কর্মচারীরা মিলে তাদের ধাওয়া করে।
ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার মধ্যে রঙ্গম কনভেনশন হল সড়কে আইনজীবী সাইফুল ইসলাম আলিফ নিহত হন। পুলিশ কর্মকর্তা রইছ উদ্দিন বলেন, ছড়িয়ে পড়া একটি ভিডিওতে দেখা যায়, “রঙ্গম কনভেনশন হল সড়কে খুন হয় আইনজীবী আলিফ। সড়কে লুটিয়ে পড়া অবস্থায় তাকে বেশ কয়েকজন এলোপাতাড়ি মারধর করছে।