চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রেলপথে ১১টি স্টেশনে ট্রেন না থামার কারণে স্টেশনগুলো কার্যত অচল হয়ে পড়েছে। স্টেশনগুলো হচ্ছে ঝাউতলা, গোমদন্ডী, বেঙ্গুরা, ধলঘাট, খানমোহনা, চক্রশালা, খরনা, কাঞ্চননগর, খানহাট, হাশিমপুর, লোহাগাড়া।
এর মধ্যে ঝাউতলা স্টেশনটি চট্টগ্রাম সিটির মধ্যে, গোমদন্ডী, বেঙ্গুরা বোয়ালখালী উপজেলার মধ্যে, ধলঘাট, খানমোহনা, চক্রশালা, খরনা এই চারটি পটিয়া উপজেলার মধ্যে, কাঞ্চননগর, খানহাট, হাশিমপুর, চন্দনাইশ উপজেলার মধ্যে স্টেশনগুলোর অবস্থান। লোহাগাড়া উপজেলার মধ্যে লোহাগাড়া স্টেশনটি রয়েছে। ব্রিটিশ আমলে নির্মিত চট্টগ্রাম-দোহাজারী রেলপথে ঝাউতলা, ষোলশহর, জানআলীহাট, গোমদন্ডী, বেঙ্গুরা, ধলঘাট, খানমোহনা, পটিয়া, চক্রশালা, খরনা, কাঞ্চননগর, খাঁনহাট, হাশিমপুর, দোহাজারী পর্যন্ত ১২টি স্টেশনে ৩ জোড়া ট্রেন চলত।
তখন চট্টগ্রাম-দোহাজারী রেলপথে হাজার হাজার মানুষ ট্রেন দিয়ে স্বাচ্ছন্দ্যে যাতায়াত করত। স্টেশনগুলো রাতদিন কোলাহল মুখর ছিল। যাত্রী ছাড়াও ট্রেনগুলো দিয়ে লেবু, পেয়ারা, শাকসব্জি ল্যাগেজ ভ্যানের মাধ্যমে পরিবহন করা হত। চট্টগ্রাম-দোহাজারী সকালের ট্রেনে পরিবাহিত এসব পণ্য সকাল ১০টার মধ্যে চট্টগ্রাম সিটির ঐতিহ্যবাহী রেয়াজউদ্দীন বাজারে পৌঁছে যেত। রেয়াজউদ্দীন বাজার থেকে খুচরা বিক্রেতারা নগরীর বিভিন্ন স্থানে নিয়ে বিক্রয় করত। ১৯৯৮ সালে আওয়ামীলীগ সরকারের আমলে ট্রেনের ইঞ্জিন সংকট দেখিয়ে ৩ জোড়া ট্রেন থেকে কমিয়ে আপ-ডাউন একটি ট্রেন চালু রাখে।
২০০১ সালে বিএনপি ক্ষমতায় আসলে বেসরকারী কোম্পানীর কাছে ৪টি ট্রেন চালুর জন্য হস্তান্তর করেন। ২০০৮ সালে আওয়ামীলীগ সরকার পুনরায় ক্ষমতা আসলে বেসরকারী ঠিকাদার বাদ দিয়ে সরকারি ভাবে রেল কর্তৃপক্ষের অধীনে শুধু একটি ট্রেন চট্টগ্রাম-দোহাজারী রেলপথে যাতায়াত করে আসছিল।
এর মধ্যে ২০২১ সালে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রেলপথ সম্প্রসারণের কাজ শুরু হলে চট্টগ্রাম-দোহাজারী রেলপথে ট্রেন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এর মধ্যে প্রত্যেক টি স্টেশন নতুনভাবে ব্রডগেজ লাইন সিস্টেমে নির্মাণ করা হয়। প্রায় ৩০ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত স্টেশন গুলো সুন্দররূপে সাজানো হলেও ১১ টি স্টেশনে ট্রেন না থামার কারণে স্টেশন গুলো বর্তমানে পরিত্যক্ত হয়ে পড়েছে। এখানে কোন স্টেশন মাষ্টার নেই, নেই কোন কার্যক্রম। চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রেলপথ চালু হওয়ার পর ঢাকা-চট্টগ্রাম-কক্সবাজার এ রোড দিয়ে কক্সবাজার এক্সপ্রেস ও পর্যটন এক্সপ্রেস নামে ২টি ট্রেন বিরতিহীন চলাচল করে আসছে।
এরমধ্যে দক্ষিণ চট্টগ্রামের যাত্রীদের অনুরোধে ও বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির আবেদেনের প্রেক্ষিতে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ চলতি সনের বিগত ঈদের সময় ঈদ স্পেশার ট্রেন নামে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রেলপথে সকাল-সন্ধ্যা আপ-ডাউন একটি ট্রেন চালু করেছে। এই ট্রেনটি ষোলশহর, জানআলী হাট, পটিয়া, দোহাজারী, সাতকানিয়া, চকরিয়া, ডুলাহাজরা, রামু স্টেশনে থামে। তবে লোহাগাড়ায় আধুনিক মডেলে স্টেশন করা হলেও এখনও ষ্টেশনে কোন ট্রেন থামেনি।
চট্টগ্রাম-দোহাজারী রেলপথে যাত্রীদের দাবি অন্তত: ২টি ট্রেন এ রেলপথে চালু রাখা হলে বন্ধ হয়ে যাওয়া কোটি টাকা দিয়ে নির্মিত সৌন্দর্য্যমন্ডিত স্টেশন গুলো পুনঃরায় সচল হয়ে উঠবে। এতে বাসে যাত্রীর চাপ কমে যাবে। এব্যাপারে রেলওয়ে পূর্বাঞ্চল, চট্টগ্রাম পরিবহন কর্মকর্তা আকতার কামাল জানান, একদিকে শাখা লাইনের ট্রেন ইঞ্জিন সংকট রয়েছে অন্যদিকে কালুরঘাট সেতু অতিরিক্ত লোড নিতে পারছে না। তবুও ইঞ্জিন সংকট কাটলে চট্টগ্রাম-দোহাজারী রেলপথের ট্রেন চালানোর ব্যবস্থা নেয়া হবে।