ফরিদপুরে জিহাদ মাতুব্বর (১৩) নামে এক স্কুল শিক্ষার্থী শিশুকে মেরে জ্যান্ত কবর দিয়ে হত্যা চেষ্টার অভিযোগ উঠেছে কিশোর গ্যাংয়ের বিরুদ্ধে।
মাদকের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করায় এমন নির্মম ঘটনা ঘটেছে বলে ওই শিক্ষার্থী সাংবাদিকদের ঘটনার বর্ণনা দিয়ে জানিয়েছেন।
সে জেলা সদরের কানাইপুর ইউনিয়নের বড় মাধবপুর গ্রামের ব্যবসায়ী মোস্তাক মাতুব্বরের বড় ছেলে। ওরা মোট ৪ ভাই – বোন।
এ ঘটনার বিচারের দাবিতে রোববার(৯ ডিসেম্বর) ফরিদপুর শহরের একটি পত্রিকার কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করেছেন তাঁর পরিবার। এর আগে গত শনিবার(৮ নভেম্বর) রাত ৯ টায় ওই এলাকার ওয়াজ মাহফিল থেকে ওই শিক্ষার্থীকে ডেকে নিয়ে ফাঁকা জায়গায় নিয়ে এমন ঘটনা ঘটায়।
পুরো ঘটনাটি একজন ভিডিও করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছাড়লে বিষয় টি সাংবাদিক দের নজরে আসে।
ওই ভিডিওতে এমন নির্মমতার দৃশ্যটি ফুটে উঠেছে। এ ঘটনায় কোতয়ালী কিশোর গ্যাংয়ের ছয়জনের নাম উল্লেখ করে হত্যাচেষ্টার মামলা করেছেন তাঁর বাবা।
তাঁদের মধ্যে রয়েছে, হোগলাকান্দি গ্রামের হালিম মোল্যার ছেলে সিফাত মোল্যা (২৪), ইউসুফ শেখের দুই পুত্র মাসুম শেখ (২৩) ও মারুফ শেখ (২০), মোহন শেখের ছেলে শাকিল শেখ (১৯), বড় মাধবপুর গ্রামের ফরিদ মোল্যার ছেলে আরাফাত মোল্যা (২০) ও মৃগী গ্রামের সজল (২২)।
সংবাদ সম্মেলনে মোস্তাক মাতুব্বর ইনকিলাব কে বলেন, গত শনিবার রাতে তার ১৩ বছর বয়সী স্কুলপড়ুয়া ছেলে জিহাদ মাতুব্বর ওয়াজ শুনতে যাওয়ার সময় এলাকার বখাটে কতিপয় কিশোর তাকে ধরে বেদম মারপিটের পরে একটি কবরস্থানে নিয়ে কবর খুড়ে জ্যান্ত পুতে হত্যার চেষ্টা করে।
এ সময় ওই কিশোরগ্যাং আমার ছেলেকে দিয়ে আমার কাছে ফোন দিয়ে বলতে বলে ‘তোর আব্বাকে মোবাইল ফোন করে বল আমরা তোকে ধরে নিয়ে এসেছি। তোকে ছাড়িয়ে নিতে হলে ৫ লক্ষ টাকা দিতে হবে।
তোর আব্বা টাকা না দিলে তোকে খুন করে কবর দিয়ে দেব।’ এ কথার বলার পরেই আমার ছেলেকে নির্মমভাবে মারধর করে এবং কবর খুড়ে জ্যান্ত কবর দেয়ার চেষ্টা করা হয়।
এতে ভয়ে জিহাদ প্রসাব ও পায়খানা করে পরনের প্যান্ট মাখিয়ে ফেলে। পরে লোকজন এগিয়ে এলে তার ছেলে কোনমতে পালিয়ে রক্ষা পায়।
ওই রাতেই ফরিদপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে এনে ভর্তি করা হয়। এ ঘটনার পর থেকে শিশুটি ভিশন ট্রমায় আক্রান্ত হয়ে পড়েছে। তিনি অবিলম্বে জড়িতদের গ্রেফতার ও বিচার দাবি করেন।
ঘটনার বর্ণনা দিয়ে জিহাদ জানায়, সম্প্রতি ওই কিশোর গ্যাংয়ের সিফাত মাদকাসক্ত হয়ে পাগলামি করে। তখন সে প্রাইভেট পড়ার রুমে থেকে বের হয়ে প্রতিবাদ করে। সেদিন প্রাইভেট পড়ে ফেরার সময় সিফাতসহ ৭/৮জন তাকে বেধরক মারধর করে।
এরপর গত শনিবার বাড়ির পাশে ওয়াজ মাহফিল হলে ৫০ টাকা নিয়ে হালিম খেতে যায় জিহাদ। তখন সিফাতের বন্ধু সজল তাকে সিগারেট কিনে এনে দিতে বলে। সজলের কথা অনুযায়ী সিগারেট আনতে যায়। সিগারেট নিয়ে আসার সময় সিফাত, শাকিল, সজল সহ ১০/১২ জন জিহাদের পকেট থেকে সিগারেট বের করে ভিডিও করে।
এ সময় তাকে মারতে মারতে পাশে একটি ফাঁকা মাঠের মধ্যে নিয়ে যায়। তখন তাকে নির্মমভাবে পেটানো হয়। এ সময় একজন কোদাল এনে মাটি কেটে গর্ত করে। পরে জোড় করে ওই গর্তের ভেতর পুতে ফেলার চেষ্টা করে। তখন সে ভয়ে কাঁদতে থাকে।
জিহাদকে ধরে নেয়ার সময় অন্য এক কিশোর গোপনে পুরো ঘটনার ভিডিও ধারণ করে। এক পর্যায়ে ওই কিশোর নির্মমতা দেখে চিৎকার দিলে আশপাশের লোকজন চলে আসে।
তখন ওই কিশোরগ্যাং পালিয়ে যায়। ওই ভিডিওতে মাটি খুড়ার দৃশ্যসহ নির্মমতার দৃশ্য ফুটে উঠেছে।
বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলে কোতয়ালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আসাদউজ্জামান বলেন, এ ঘটনায় একটি মামলা হয়েছে। পুলিশ জড়িতদের গ্রেফতারে জোর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।
ছবিঃ
বক্তব্য রাখছেন কিশোর গ্যাংয়ের আক্রমণের শিশু জিহাদ।
ছবি ও সংবাদ আনোয়ার জাহিদ ফরিদপুর।