বরিশালের হিজলা উপজেলার বিভিন্ন নদীর তীরে থাকা ৭২টি ইটভাটার সাথে এবার নতুন করে যুক্ত হয়েছে আরো ৮ টি অবৈধ ইটের ভাটা,
প্রশাসনকে ম্যানেজ করে মেঘনা ও তার আশপাশের শাখা নদীর তীরের মাটি কেটে ইট তৈরি করছে বরিশালের হিজলা উপজেলার এসব অবৈধ ইটভাটা মালিকেরা । আর এসব ইটভাটার বিরুদ্ধে গণমাধ্যমে যেন কোনো ধরনের সংবাদ প্রকাশিত না হয় এজন্য সাংবাদিকদের ম্যানেজ করার তৎপরতা অব্যাহত রেখেছেন কিছু অসাধু ব্যক্তিরা ।
হিজলা উপজেলা বিএনপির শীর্ষ নেতাদের নেতৃত্বে প্রায় ৮০টি ইটভাটা মালিকদের কাছ থেকে সাংবাদিক ম্যানেজের জন্যে কয়েক লক্ষ টাকা সংগ্রহ করা শেষে তা বিতরণের জন্য তুলে দেওয়া হয় স্থানীয় এক জামায়াত নেতা ও এক স্কুল শিক্ষকের হাতে।
স্থানীয় একাধীক সূত্রে পাওয়া তথ্যে জানা গেছে, বিগত আওয়ামীলীগ সরকারের সময় থেকে বরিশাল জেলার দশ উপজেলার মধ্যে সবচেয়ে বেশি ইটভাটা গড়ে উঠেছে হিজলা উপজেলায়। স্থানীয় ক্ষমতাসীন দলের নেতারা সরকারি খাস জমি জোড়পূর্বক দখল করে এসব অবৈধ ইটভাটা গড়ে তোলে।
এদিকে গতবছরের ৫ আগষ্ট সরকার পতনের পর অধিকাংশ আওয়ামীলীগ নেতার ইটভাটা নাম মাত্র মূল্যের মাধ্যমে দখল করে নেয় বিএনপি নেতারা। একইসাথে বিএনপি নেতারা নতুনভাবে আরও ৭-৮টি অবৈধ ইটভাটা গড়ে তোলে। তার মধ্যে বেশিরভাগ সরকারি খাস জমিতে।
জানা গেছে, উপজেলার মেমানিয়া ইউনিয়নেই খাস জমিতে ৭টি ইটভাটা গড়ে তোলা হয়েছে। আর এগুলোর প্রতিটির মালিক বিএনপি নেতারা।
সেগুলো হলো- বিএনপি নেতা মিরাজ হোসেনের মেসার্স সুপার ব্রিকস, আব্দুল হাকিমের মেসার্স মেঘনা ব্রিকস, আওয়ামীলীগ নেতা জাহের আকন ও বিএনপি নেতা ফরিদ উদ্দিন বেপারীর যৌথ মালিকানাধীন মেসার্স এমবিএফ ব্রিকস, আওয়ামীলীগ নেতা আলাউদ্দিন বেপারীর একটি, বিএনপি নেতা ফরিদ বেপারীর একক মালিকানাধীন আরও দুটি মেসার্স লামিয়া ব্রিকস ১ ও ২ এবং বেল্লাল মেম্বারের মালিকানাধীন একটি। স্থানীয় মেমানিয়া ইউনিয়ন ভূমি অফিসের সরবরাহকৃত তথ্যে এই সংবাদ পাওয়া যায়।
নির্ভরযোগ্য তথ্য মতে- হিজলার এসব অবৈধ ইটভাটার কার্যক্রম এবং মেঘনা নদীর তীরের মাটি কাটার বিষয়ে কোনো ধরনের সংবাদ প্রকাশ না করার শর্তে সাংবাদিকদের জন্য বরাদ্ধকৃত টাকার কিছু অংশ গতকাল বৃহস্পতিবার হিজলা উপজেলার সাংবাদিকদের কুয়াকাটা আনন্দ ভ্রমনে যাওয়ার জন্যে সরবরাহ করা হয়।
জানা গেছে, হিজলা উপজেলা বিএনপির শীর্ষ নেতাদের নির্দেশনায় পরিবেশ অধিদপ্তর, প্রশাসন ও সাংবাদিকদের জন্য ৭০টি ইটভাটা থেকে নির্দিষ্টহারে টাকা তুলে রাখা জমা রাখা হয় ইটভাটা মালিক ইয়ামিন মুন্সি ও সাইফুল তালুকদারের নিকট। বিএনপি নেতাদের নির্দেশনায় প্রাথমিকভাবে সাংবাদিকদের আনন্দ ভ্রমনের জন্যে টাকা প্রদান করা হয় স্থানীয় এক জামায়াত নেতা ও বিএনপির নেতা বাউশিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের নিকট।
এই দুইজন স্থানীয় সাংবাদিকদের একটি বহর নিয়ে আজ কুয়াকাটা যাবেন বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে।
এ বিষয়ে জানার জন্য জামায়াত নেতা মুজাম্মেল হক ভূইয়াকে সেলফোনে কল করে ঘটনার বিবরণ শুনে কোনো ধরনের জবাব না দিয়ে ব্যস্ত আছি বলে ফোনের লাইন কেটে দেন।
স্কুল শিক্ষক আবু বকর সিদ্দিক ফারুক খান ইটভাটার টাকার কথা অস্বীকার করে বলেন, বিএনপির নেতারা সাংবাদিকদের পিকনিক বাবদ কিছু টাকা দিয়েছেন।
হিজলা উপজেলা বিএনপির আহবায়ক আব্দুল গাফফার তালুকদার এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।
হিজলা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর হোসেনের সেলফোনে কল করা হলে তিনি ফোন রিসিভ না করায় অবৈধ ইটভাটা সম্পর্কে আইনানুগ ব্যবস্থার বিষয়ে কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি।
পরিবেশ অধিদপ্তর বরিশাল বিভাগের পরিচালক (চলতি দায়িত্ব) মুহাম্মদ মুজাহিদুল ইসলাম বলেছেন, হিজলা উপজেলায় বৈধ-অবৈধ সকল ইটভাটার তালিকা প্রস্তুত করা হয়েছে। অতিশীঘ্র অবৈধ ইটভাটার বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করা হবে