বরিশাল সদর উপজেলার চরকাউয়া ইউনিয়নের চরকাউয়া নয়ানী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের এডহক কমিটিতে সভাপতি পদ পেতে দৌড়ঝাঁপ শুরু করেছেন আওয়ামী লীগ কর্মী শাখাওয়াত হোসেন মনির। তার এ সব কর্মকাণ্ডে সহযোগিতা করছেন বরিশাল জেলা বাস্তুহারা দলের সভাপতি মিলন মুন্সি, সদর উপজেলা বাস্তুহারা দলের আহবায়ক শাহ আলম হাওলাদার, স্বেচ্ছাসেবক দল নেতা আশ্রাফসহ বেশ কয়েকজন বিএনপি নেতা।
আর পিছনে থেকে কলকাঠি লাড়ছেন চরকাউয়া ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক সহ-সভাপতি আনোয়ার হোসেন মানিক মেম্বার। বিগত ২০১২ সালে চরকাউয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের প্যাডে সভাপতি সুলতান আহমেদ খানের স্বাক্ষরিত একটি বিজ্ঞপ্তিতে শাখাওয়াত হোসেন মনির একজন সক্রিয় আওয়ামী লীগ কর্মী মর্মে প্রত্যয়ন দিয়েছিলেন। সম্প্রতি ওই বিজ্ঞপ্তিটি ছড়িয়ে পড়লে তা নিয়ে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনার ঝড় বইছে ইউনিয়নজুড়ে। সেই বিজ্ঞপ্তিটি প্রতিবেদকের কাছে রয়েছে।
এরআগে গত মঙ্গলবার (৭ জানুয়ারি) ওই বিদ্যালয়ের এডহক কমিটি নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে হট্টগোলের সৃষ্টি হয়েছে। এদিকে এক পক্ষের বিরুদ্ধে প্রধান শিক্ষককে চাপ প্রয়োগের অভিযোগ পাওয়া গেছে।
এদিকে সরকার পতনের পর নতুন কমিটি গঠনের লক্ষ্যে এডহক কমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত নেয় মন্ত্রনালয়। মন্ত্রনালয়ের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী এডহক কমিটি গঠনের কার্যক্রম শুরু করা না হলেও ৭ জানুয়ারি প্রধান শিক্ষক আবদুল মালেককে চাপ প্রয়োগ করে সভাপতি পদের জন্য কাগজপত্র জমা দিতে যান শাখাওয়াত হোসেন মনির। এ সময় তার পক্ষে প্রধান শিক্ষককে চাপ প্রয়োগ করেন বরিশাল জেলা বাস্তুহারা দলের সভাপতি মিলন মুন্সি, সদর উপজেলা বাস্তুহারা দলের আহবায়ক শাহ আলম হাওলাদার, স্বেচ্ছাসেবক দল নেতা আশ্রাফসহ প্রায় অর্ধশতাধিক লোকজন।
চাপের মুখে পড়ে নিজের সম্মান বাচাতে সেই কাগজপত্র জমা নিয়েছিলেন প্রধান শিক্ষক। এরআগে সকালে আরেক প্রার্থী কাগজপত্র জমা দিতে চাইলে জমা নেননি প্রধান শিক্ষক। তবে প্রধান শিক্ষককে চাপ প্রয়োগ করে প্রতিপক্ষ কাগজপত্র দিয়েছেন এমন সংবাদ এলাকায় ছড়িয়ে পড়লে বিদ্যলয়ে ছুটে যান সেই প্রার্থীর স্বজনরা ও স্থানীয় বিএনপি নেতাকর্মীরা। যাওয়া মাত্র তাদের উপর চড়াও হন মিলন ও শাহ আলম বাহিনী। তখন তারা বলেন- মনির ব্যতিত এই বিদ্যালয়ে কেউ এডহক কমিটির সভাপতি হতে পারবে না, কারো কাগজ জমা নিলে প্রধান শিক্ষককে এখানে চাকরি করতে দেবো না। এ নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে বাকবিতণ্ডার সৃষ্টি হয়।
খবর পেয়ে বিদ্যালয়ে ছুটে গিয়েছিল সংবাদকর্মীরা। তাদের দেখে আরও উত্তেজিত হয়ে ওঠেন মিলন ও শাহ আলম বাহিনী। প্রতিপক্ষকে তর্কে কুপকাত করতে না পেরে ধাক্কা-ধাক্কি শুরু করেন তারা। এমনকি সংবাদকর্মীদের লাঞ্ছিত করেন শাহ আলম। পরে ওই বাহিনীর তোপের মুখে পড়ে ফিরে আসতে বাধ্য হয়েছিল সংবাদকর্মীরা।
এরপর বিষয়টি মিমাংসা করার জন্য বরিশাল দক্ষিণ জেলা বিএনপির সদস্য সচিব অ্যাডভোকেট আবুল কালাম শাহিনের দাড়স্থ হন বরিশাল জেলা বাস্তুহারা দলের সভাপতি মিলন মুন্সি, সদর উপজেলা বাস্তুহারা দলের আহবায়ক শাহ আলম হাওলাদার। তিনি বিষয়টি বরিশাল সদর উপজেলা বিএনপির সদস্য সচিব সেলিম মোল্লাকে সমাধান করে দিতে বলেন।
সেলিম মোল্লা দুই পক্ষকে ডেকে তাদের কথা শুনে শাখাওয়াত হোসেন মনির, পূর্নিমা ও শফিকুল ইসলামের নাম লিখে নিজের, সদর উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহবায়ক জিয়াউল ইসলাম সাবু, জব্বার শিকদার ও বাবুল খন্দকারের স্বাক্ষর নিয়ে প্রধান শিক্ষকের কাছে কাগজ পাঠান। তবে সম্প্রতি শাখাওয়াত হোসেন মনিরের আওয়ামী লীগ কর্মী মর্মে প্রত্যয়নটি হাতে পেয়ে বিপাকে পড়েছেন তারা। তারা শ্রেফ জানিয়ে দিয়েছেন- স্কুল কমিটি নিয়ে তাদের কোন মাথা ব্যথা নেই, তবে দুই পক্ষের মধ্যে সৃষ্ট উত্তেজনা ও বিরোধ সমাধানের জন্যই দুই পক্ষকে ডেকে মিমাংসা করা হয়েছে।
এ বিষয়ে বরিশাল সদর উপজেলা বিএনপির সদস্য সচিব সেলিম মোল্লা বলেন- চরকাউয়া নয়ানী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের এডহক কমিটি নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে বিরোধ হয়েছিল। সেই বিরোধ মিটানোর জন্য চরকাউয়া ইউনিয়নের নেতারা আমাদের কাছে এসেছিল। তাই দুই পক্ষকে ডেকে মিমাংসা করে দিয়েছিলাম।
সভাপতি প্রার্থী শাখাওয়াত হোসেন মনিরের আওয়ামী লীগ কর্মী হওয়া সত্বেও তার নাম স্কুল কমিটিতে দেয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন- বিষয়টি আমার জানা ছিল না। আমি প্রত্যয়নপত্রটি পেয়েছি, যাছাই-বাছাই চলছে। তবে স্কুল কমিটি নিয়ে আমাদের কোন মাথা ব্যথা নেই। যেহেতু ইউনিয়নের নেতারা আমাদের কাছে এসেছিল সেহেতু বিরোধ সমাধানের জন্যই দুই পক্ষকে ডেকে মিমাংসা করা হয়েছে।
এ বিষয়ে সদর উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহবায়ক জব্বার শিকদার শাখাওয়াত হোসেন মনিরের পক্ষে সাফাই গেয়ে বলেন- মনির কখনো আওয়ামী লীগ করেছে বলে আমার জানা নেই। সে সব সময় বিএনপির পক্ষেই ছিল, কিন্তু কোন কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করতো না। মনিরের প্রত্যয়নপত্রটি পেয়েছি, তবে ২০১২ সালের ঘটনায় ২০২৪ সালের আমাদের এই কমিটি কি করতে পারে?
এ বিষয়ে সদর উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহবায়ক জিয়াউল ইসলাম সাবুর মুঠোফোনে একাধিকবার কল দিলেও তিনি তা রিসিভ করেন নি।
এ বিষয়ে চরকাউয়া ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক সহ-সভাপতি আনোয়ার হোসেন মানিক মেম্বার বলেন- আমি দলের স্বার্থে কাজ করি। আমি স্কুল কমিটি নিয়ে কোন চিন্তা-ভাবনাও করি না। আমি অনেক কিছু দিয়ে দূরে থাকি, সব বিষয়ে মাথা ঘামাই না।
একজন আওয়ামী লীগ কর্মীকে স্কুল কমিটির সভাপতি করতে চাইলে আপনার দ্বিমত থাবকে কিনা এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন- না এ বিষয়ে আমার কোন দ্বিমত নেই, কারণ ওর অবস্থা এখন ভালো। স্কুলে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে খরচ করতে হয় যা মনির বহন করতে পারবে। মনিরের সাথে আমার ব্যবসায়িক সম্পর্ক রয়েছে, তাই চাইলেই ওর বিপক্ষে যেতে পারিনা।
এ বিষয়ে শাখাওয়াত হোসেন মনির বলেন- ওই প্রত্যয়নপত্রটি বানোয়াট, আমি কখনো আওয়ামী লীগ করিনি। আমাদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র চলছে। আমি আপনার (প্রতিবেদক) সাথে দেখা করবো।
এ বিষয়ে চরকাউয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি সুলতান আহমেদ খান বলেন- ২০১২ সালে শাখাওয়াত হোসেন মনির একটি মামলায় আটক হয়েছিল। তখন সে আমাদের সাথে রাজনীতি করতো। তাই তার ভাই এসে আমার কাছ থেকে প্রত্যয়নপত্র নিয়েছিল।
বরিশাল দক্ষিণ জেলা বিএনপির সদস্য সচিব অ্যাডভোকেট আবুল কালাম শাহিন বলেন- চরকাউয়া ইউনিয়ন বিএনপির নেতারা আমাকে বিরোধের বিষয়টি জানিয়েছিল আমি সদর উপজেলা বিএনপির সদস্য সচিব সেলিম মোল্লাকে সমাধান করে দিতে বলেছি। স্কুল কমিটি নিয়ে আমাদের কোন আগ্রহ নেই। ওটা প্রধান শিক্ষক ঠিক করবে।