রিয়াদুন্নবী রিয়াদ নিজস্ব প্রতিবেদক:
রংপুরের গঙ্গাচড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে স্বাস্থ্যসেবায় নানাবিধ অনিয়ম ও অব্যবস্থাপনার অভিযোগ উঠেছে। অ্যাম্বুলেন্স চালকের সংকট, ওষুধের অপ্রতুলতা, কর্মচারীদের অনুপস্থিতির কারণে স্থানীয় জনগণ নিয়মিত স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।গঙ্গাচড়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে একটি অ্যাম্বুলেন্স থাকলেও পেশাদার চালক নেই। অভিযোগ রয়েছে, কর্মকর্তার ব্যক্তিগত গাড়ির চালক দিয়ে মাঝে মাঝে অ্যাম্বুলেন্স চালানো হয়। ফলে, জরুরি রোগীদের সময়মতো হাসপাতালে স্থানান্তর করা সম্ভব হয় না।২০২০ সাল থেকে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের এক্স রে মেশিনটি নষ্ট হয়ে পড়ে আছে। তবে, এর জন্য দায়ী হিসেবে টেকনোলজিস্ট নাম উঠে এসেছে। জানা গেছে, মেশিনটির ক্ষতি হয়েছে তাদের অবহেলার কারণে, তারপরেও তারা দীর্ঘদিন ধরে বসে থেকে নিয়মিত বেতন পাচ্ছেন। এই অনিয়মের ফলে স্থানীয় জনগণ সঠিক স্বাস্থ্য সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।ইসিজি করান মাস্টার রোলে নিয়োগ পাওয়া চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী। দীর্ঘদিন বিকল ইসিজি মেশিন। ফিল্ম সংকটে এক্সরে করাতে পারছেন না সাধারণ রোগীরা। পাঁচটি ইসিজি মেশিন থাকলেও তালাবদ্ধ ইসিজি কক্ষ। এই পাঁচ মেশিনের জন্য লোক নিয়োগ করা হয়েছে দুইজন। রয়েছে মাত্র একজন কার্ডিওগ্রাফার আর একজন ইপিআই টেকনিশিয়ান। একটি মেশিন ভালো থাকলেও ইসিজি করার দায়িত্বে আছেন চতুর্থ শ্রেণির এক কর্মচারী। ইসিজি মেশিনটি রাখা হয়েছে আলট্রাসনোগ্রাম কক্ষে।এম.পি রেডিও গ্রফার মেহেরুন নেছা রুমা বলেন, ডিজিটাল মেশিন খারাপ হতেই পারে।আর আলেমুল বাসার স্যার দায়িত্ব নেয়ার পর থেকে এনালক এক্স-রে মেশিন এর ফ্লিম এর অভাবে কোন এক্স-রে হয়নি।রোগীদের কাছ থেকে পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য সরকার নির্ধারিত ফি’র চেয়ে বেশি অর্থ আদায়ের অভিযোগ পাওয়া গেছে। গর্ভবতী আয়শা সিদ্দিকা একটি পরীক্ষার জন্য নির্ধারিত ১৫০ টাকার বদলে ২০০ টাকা দিতে বাধ্য হন। এ বিষয়ে মেডিকেল টেকনোলজিস্ট স্বপ্না বলেন, “মেশিন অকার্যকর থাকায় বাইরে থেকে সেবা নিয়ে আসতে হচ্ছে। এজন্য বেশি ফি নেওয়া হচ্ছে।” তবে অভিযোগ রয়েছে, হাসপাতালের যন্ত্রপাতি ইচ্ছাকৃতভাবে অকেজো রেখে রোগীদের বেসরকারি প্যাথলজিতে পাঠানো হয় এবং সংশ্লিষ্টরা কমিশন পান।স্থানীয় বাসিন্দা মো. সুমন বলেন, “জরুরি সময়ে অ্যাম্বুলেন্স না পাওয়ায় আমাদের পড়শীদের সাহায্য নিতে হয়। নিজের গাড়ি না থাকলে ট্রলি বা ভ্যান ব্যবহার করতে হয়। এতে রোগী আরও ঝুঁকিতে পড়ে।”রেহানা বেগম নামের আরেকজন বলেন, “আমার সন্তান সাপে কাটার পর অ্যাম্বুলেন্সের জন্য অপেক্ষা করছিলাম। চালক না থাকায় প্রতিবেশীর গাড়ি ব্যবহার করতে বাধ্য হই। এটি খুবই হতাশাজনক।স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে সরকারি ওষুধ সরবরাহ যথেষ্ট না থাকায় রোগীদের বাইরে থেকে ওষুধ কিনতে বাধ্য হতে হয়।মফিজুল ইসলাম নামে এক রোগী জানান, হাসপাতাল থেকে ওষুধ দেওয়া হয় না। অথচ সেই একই ওষুধ বাজারে বেশি দামে কিনতে হয়। আমরা কষ্ট করে বাইরে থেকে ওষুধ কিনতে বাধ্য হই।স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে কর্মরত তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির অনেক কর্মচারী নিয়মিত দায়িত্ব পালন করেন না। তাদের বদলে প্রক্সি দিয়ে কাজ চালানো হয়।একজন স্থানীয় শিক্ষক ফরিদুল ইসলাম বলেন, “এখানে প্রক্সি এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে, আসল কর্মচারীদের দেখা পাওয়া যায় না। ফলে রোগীদের সেবার মান ভয়াবহভাবে কমে গেছে।”স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পর্যাপ্ত চিকিৎসক, নার্স এবং অন্যান্য কর্মী না থাকায় সেবার মান মারাত্মকভাবে কমে গেছে।উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. আবু মো. আলেমুল বাসার বলেন, “যেখানে ৭-৮ জন চিকিৎসক থাকার কথা, সেখানে কখনও কখনও মাত্র দুজন চিকিৎসক দায়িত্ব পালন করেন। তিনজন কনসালট্যান্ট নেই। দ্বিতীয় শ্রেণির ৯৩টি পদের মধ্যে ৩৬টি শূন্য। এর মধ্যে স্বাস্থ্য সহকারী ১৫ জন, সহকারী স্বাস্থ্য পরিদর্শক সাতজন, ফার্মাসিস্ট দুজন, পরিসংখ্যানবিদ একজন, মেডিক্যাল টেকনোলজিস্ট একজনসহ অন্যান্য পদ দীর্ঘদিন ধরে শূন্য রয়েছে। নার্সের একটি পদও খালি।” এম্বুলেন্স এর ড্রাইভার না থাকায় আমার গাড়ির ড্রাইভার দিয়েই মাঝে মাঝে এম্বুলেন্স চালানো হয়।রংপুর ডেপুটি সিভিল সার্জন ডাঃ মোঃ রুহুল আমিন বলেন, তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।