এ যেন মগের মুল্লুক। বাস ভাড়া ৫০০ টাকা। নেয়া হচ্ছে ৮০০ থেকে ১০০০ টাকা। ঈদের সুযোগে দ্বিগুন বাস ভাড়া প্রকাশ্যে নিলেও প্রশাসন দাবী করছেন তারা জানেন না।
ঘটনাটি বরিশালের হিজলা-ঢাকা সড়ক পথে বাস ভাড়া নিয়ে। এদিকে দ্বিগুণ ভাড়া না দিলে নাজেহাল হতে হচ্ছে যাত্রীদের। এসব ঘটনায় চরম ক্ষুব্ধ সাধারণ যাত্রীরা।
গত ২ এপ্রিল নিজের পরিবার নিয়ে ঢাকার উদ্দেশ্য রওয়ানা হন সোহাগ বয়াতী নামের এক চাকুরীজীবি যুবক, হিজলা উপজেলার কাউরিয়া বন্দর বাসস্ট্যান্ড থেকে সুন্দরবন ক্লাসিক পরিবহন (প্রাঃ) লিঃ বাস কাউন্টার থেকে নন এসি বাসের ৪টি টিকেট কাটেন ঢাকা আবদুল্লাহপুর যাওয়ার জন্যে, যার মূল্য ৪ হাজার টাকা।
সোহাগ বয়াতির দাবী এর পূর্বে যেকোনো সময় ৫শত টাকা করে যাতায়াত করতেন, এবার বাস কাউন্টারের প্রতিনিধিরা টিকেটের সংকট দাবী করে দ্বিগুণ ভাড়া নিচ্ছে, চাকরি বাঁচাতে বাধ্য হয়ে এই দাম দিয়েই যাচ্ছি।
গত ৫ এপ্রিল আইনজীবী পেশায় নিয়োজিত আনিসুর রহমান মুন্সী তার স্ত্রী মিম এর নামে ১৬শত টাকায় ২টি টিকেট কেটে বিকাল ৪টায় হিজলা উপজেলার খুন্না গোবিন্দপুর এলাকা থেকে মুলাদী পরিবহন নামের বাসে উঠতে যান।
তার দাবী গাড়ির বক্সে ব্যাগ রাখতে চাইলে বক্স ভর্তি ইলিশ মাছ ও পোয়া মাছের বস্তা দেখে নিজের ব্যাগের মালামাল নষ্ট হওয়ার শংকা প্রকাশ করায় গাড়ির সুপারভাইজার ক্ষিপ্ত হন, একপর্যায়ে নিজেকে আইনজীবী পরিচয় দিলে সুপারভাইজার চড়াও হয়ে বিআরটিসির ম্যাজিস্ট্রেট আমাদের পকেটে থাকে দাবী করে ইচ্ছে না হলে গাড়ি থেকে নেমে যেতে বলেন এই আইনজীবী ও তার স্ত্রীকে।
আজ রবিবার দুপুর ২টা ৩০ মিনিটে কাউরিয়া বন্দর বাস স্টান্ডে গিয়ে কথা হয় নুর জাহান নামের পঞ্চাশোর্ধ এক নারী’র সাথে যিনি দাবী করেন এর আগে ৪শত পঞ্চাশ বা ৫শত টাকা দিয়ে ঢাকায় যাতায়াত করতে পারলেও আজ তাকে খান পরিবহন নামের গাড়িতে সায়দাবাদ যাওয়ার জন্যে টিকেট কাটতে হয়েছে ৮শত টাকায়।
৫ এপ্রিল শনিবার খুন্না বন্দর হাসপাতাল এলাকায় রিপন নামের এক ব্যবসায়ী ঢাকায় যাওয়ার উদ্যেশ্যে বাস স্টান্ডে এসে দ্বিগুণ ভাড়া আদায় করতে দেখে আক্ষেপ করে বলেন আমরা জুলুমের শিকার হচ্ছি, এর থেকে কি পরিত্রাণ পাবো না! প্রশ্ন রাখেন তিনি। একই দিনে আমাদের পরিবহন বাসের যাত্রী শাকিল নামের এক যুবক সরকারের কাছে এই জিম্মি দশার থেকে মুক্তি চেয়েছেন।
হিজলা উপজেলা সদর বাসস্ট্যান্ডের সুপারভাইজার সুলতান দাবী করেন হিজলা টু বরিশালের বাস ভাড়া পূর্বেও ১শত টাকা ছিলো বর্তমানেও ১শত টাকা, তার দাবী ঢাকা যাওয়ার বাস খান পরিবহন, সুন্দরবন ক্লাসিক পরিবহন, আমাদের পরিবহন, মুলাদী পরিবহনের ভাড়া ঈদ উপলক্ষে বৃদ্ধি করেছে টিকেট প্রতি ৩শত টাকারও বেশি।
সুন্দরবন ক্লাসিক পরিবহনের খুন্না বন্দর হাসপাতাল এলাকার কাউন্টার ম্যানেজার মাইনুল বাড়তি ভাড়া আদায়ের কথা স্বীকার করেন তবে তার দাবী এটা মালিক সমিতির সিদ্ধান্ত।
একই স্থানের মুলাদী পরিবহনের কাউন্টার ম্যানেজার মনিরের দাবী আসার সময় বাসে যাত্রী পাওয়া যায়না তাই ভাড়া বেশী নিতে হচ্ছে তবে তারা আরো কিছু টাকা ভাড়া কমাতে মালিক পক্ষকে অনুরোধ করলেও মালিক পক্ষ তা আমলে নেয়নি।
হিজলা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সংলগ্ন খান পরিবহনের কাউন্টারের ম্যানেজার মাকসুদুর রহমানের দাবী পূর্বে যাত্রীদের থেকে টিকেট প্রতি ৫শত টাকা নেয়া হলেও তাদের গাড়ির যে এপ্স রয়েছে সেখানে ভাড়া ৮শত টাকাই ছিলো যা এখন আদায় করা হচ্ছে।
একই দাবী হিজলা উপজেলার কাউরিয়া বন্দরের মুলাদী পরিবহনের কাউন্টার ম্যানেজার চুন্নু ও খান পরিবহনের দেলোয়ার হোসেনের, তাদের বিরুদ্ধেও একাধিক অভিযোগ রয়েছে যাত্রীদের জিম্মি করে বাড়তি ভাড়া আদায়ের।
মুলাদী পরিবহন বাসের সুপারভাইজার রাব্বি ভাড়া ঈদের পূর্বে ৪শত থেকে ৫শত টাকা ছিলো স্বীকার করে বর্তমানে বাড়তি ভাড়া আদায়ের কারণ হিসেবে ঢাকা থেকে যাত্রী না পাওয়া মীরগঞ্জ ফেরিঘাট সহ বিভিন্ন টোল পয়েন্টে ঈদ বকশিসের নামে চাদা দিতে হয় বলে দাবী করেন।
তবে বাড়তি ভাড়া আদায়ের বিষয় সিদ্ধান্ত মালিক সমিতির বলে জানান তিনি।
এবিষয়ে মালিক সমিতির একাধিক ব্যক্তির সাথে যোগাযোগ কথা বলার চেষ্টা করলেও কেউ কথা বলতে রাজি হননি।
বাড়তি ভাড়া আদায়ের বিষয়ে হিজলা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জনাব ইলিয়াস হোসেন এর সাথে আলাপকালে তিনি বলেন আমাদের কাছে এমন কোন অভিযোগ নেই, এখন বিষয়টি জানতে পেরেছি আমরা তদন্ত করে ব্যবস্থা নিবো।